আদ দুখান

৫৯ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
আয়াত
-
৫১ ) আল্লাহভীরু লোকেরা শান্তি ও নিরাপত্তার জায়গায় থাকবে ৪০
إِنَّ ٱلْمُتَّقِينَ فِى مَقَامٍ أَمِينٍۢ ٥١
৫২ ) বাগান ও ঝর্ণা ঘেরা জায়গায়।
فِى جَنَّـٰتٍۢ وَعُيُونٍۢ ٥٢
৫৩ ) তারা রেশম ও মখমলের ৪১ পোশাক পরে সামনাসামনি বসবে।
يَلْبَسُونَ مِن سُندُسٍۢ وَإِسْتَبْرَقٍۢ مُّتَقَـٰبِلِينَ ٥٣
৫৪ ) এটা হবে তাদের অবস্থা। আমি সুন্দরী হরিণ নয়না ৪২ নারীদের সাথে তাদের বিয়ে দেবো।
كَذَٰلِكَ وَزَوَّجْنَـٰهُم بِحُورٍ عِينٍۢ ٥٤
৫৫ ) সেখানে তারা নিশ্চিন্তে মনের সুখে সবরকম সুস্বাদু জিনিস চেয়ে চেয়ে নেবে। ৪৩
يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَـٰكِهَةٍ ءَامِنِينَ ٥٥
৫৬ ) সেখানে তারা কখনো মৃত্যুর স্বাদ চাখবে না।
لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلْمَوْتَ إِلَّا ٱلْمَوْتَةَ ٱلْأُولَىٰ ۖ وَوَقَىٰهُمْ عَذَابَ ٱلْجَحِيمِ ٥٦
৫৭ ) তবে দুনিয়াতে যে মৃত্যু এসেছিলো তা তো এসেই গেছে। আর আল্লাহ‌ তাঁর করুণায় তাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। ৪৪ এটাই বড় সফলতা।
فَضْلًۭا مِّن رَّبِّكَ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلْفَوْزُ ٱلْعَظِيمُ ٥٧
৫৮ ) হে নবী, আমি এই কিতাবকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি যাতে এই লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে।
فَإِنَّمَا يَسَّرْنَـٰهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ ٥٨
৫৯ ) এখন তুমিও অপেক্ষা করো, এরাও অপেক্ষা করছে। ৪৫
فَٱرْتَقِبْ إِنَّهُم مُّرْتَقِبُونَ ٥٩
৪০.
শান্তি ও নিরাপত্তার জায়গা অর্থ এমন জায়গা যেখানে কোনো প্রকারআশঙ্কা থাকবে না। কোন দুঃখ, অস্থিরতা, বিপদ,আশঙ্কা এবং পরিশ্রম ও কষ্ট থাকবে না। হাদীসে আছে রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “জান্নাতবাসীদের বলে দেয়া হবে, তোমরা এখানে চিরদিন সুস্থ থাকবে, কখনো রোগাক্রান্ত হবে না, চিরদিন জীবিত থাকবে, কখনো মরবে না, চিরদিন সুখী থাকবে, কখনো দুর্দশাগ্রস্ত হবে না এবং চিরদিন যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না।” (মুসলিম-আবু হুরাইরা ও আবু সাঈদ খুদরী বর্ণিত হাদীস)।
৪১.
মূল আয়াতে سُنْدُسٍ إِسْتَبْرَقٍ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী ভাষায় সূক্ষ্ম রেশমী কাপড়কে سُنْدُسٍ বলে। إِسْتَبْرَقٍ ফারসী শব্দ এর আরবী রূপ। মোটা রেশমী কাপড় বুঝাতে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
৪২.
মূল শব্দ হচ্ছে بِحُورٍ عِينٍ حور শব্দটি حَوْرَاء শব্দের বহুবচন। আরবী ভাষায় সুন্দরী নারীকে حَوْرَاء বলা হয়। عَيْنٌ শব্দটি عيناء শব্দের বহুবচন। এ শব্দটি বড় চোখ বিশিষ্ট নারীদের বুঝাতে ব্যবহার হয়। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, সূরা সাফফাত, টীকা ২৬ ও ২৯)।
৪৩.
‘নিশ্চিন্তে মনের সুখে’ চাওয়ার অর্থ যে জিনিস যত পরিমাণে ইচ্ছা দ্বিধাহীনভাবে জান্নাতের খাদেমদেরকে তা আনার নির্দেশ দেবে এবং তা এনে হাজির করা হবে। দুনিয়াতে হোটেল তো দূরের কথাকোন ব্যক্তি নিজের বাড়িতেও এরূপ নিশ্চিন্তে ও মনের সুখে কোন কিছু এমনভাবে চাইতে পারে না যেমন সে জান্নাতে চাইবে। কারণ, এখানে কারো কাছেই কোন জিনিসের অফুরন্ত ভাণ্ডার থাকে না এবং ব্যক্তি যাই ব্যবহার করে তার মূল্য তাকে নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। জান্নাতে সম্পদ হবে আল্লাহর এবং ব্যক্তিকে তা ব্যবহারের অবাধ অনুমতি দেয়া হবে। কোন জিনিসের ষ্টক শেষ হয়ে যাওয়ার বিপদ যেমন থাকবে না তেমনি পরে বিল আসারও কোন প্রশ্ন থাকবে না।
৪৪.
এ আয়াতে দু’টি বিষয় লক্ষণীয়ঃ

এক-জান্নাতের নিয়ামত সমূহের উল্লেখ করার পর জাহান্নাম থেকে রক্ষা করার কথা আলাদা করে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। অথচকোন ব্যক্তির জান্নাত লাভ করাই আপনা আপনিই তার জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়াকে অনিবার্য করে তোলে। এর কারণ, মানুষ আনুগত্যের পুরস্কারে মূল্য পুরোপুরি তখনই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যখন নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে সে কোথায় পৌঁছেছে এবং কোন্ ধরনের মন্দ পরিণতি থেকে রক্ষা পেয়েছে তা তার সামনে থাকে।

দ্বিতীয় লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে, এ লোকদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া এবং জান্নাত লাভ করাকে আল্লাহ‌ তাঁর দয়ার ফলশ্রুতি বলে আখ্যায়িত করছেন। এর দ্বারা মানুষকে এই সত্য সম্পর্কে অবহিত করা উদ্দেশ্য যে, আল্লাহর অনুগ্রহ না হওয়া পর্যন্তকোন ব্যক্তির ভাগ্যেই এই সফলতা আসতে পারে না। ব্যক্তি তার সৎকর্মের পুরস্কার লাভ করবে। কিন্তু প্রথমত আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া ব্যক্তি তার সৎকর্ম করার তাওফীক বা সামর্থ্য কিভাবে লাভ করবে। তাছাড়া ব্যক্তি দ্বারা যত উত্তম কাজই সম্পন্ন হোক না কেন তা পূর্ণাঙ্গ ও পূর্ণতর হতে পারে না। সুতরাং সে কাজ সম্পর্কে দাবী করে একথা বলা যাবে না যে তাতে কোন ত্রুটি বা অপূর্ণতা নেই। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ যে তিনি বান্দার দুর্বলতা এবং তার কাজকর্মের অপূর্ণতাসমূহ উপেক্ষা করে তার খেদমত কবুল করেন এবং তাকে পুরস্কৃত করে ধন্য করেন। অন্যথায়, তিনি যদি সূক্ষ্মভাবে হিসেব নিতে শুরু করেন তাহলে কার এমন দুঃসাহস আছে যে নিজের বাহুবলে জান্নাত লাভ করার দাবী করতে পারে? হাদীসে একথাই রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ

اعْلَمُوا وَسَدِّدُوا وقَارِبُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ أَحَداً لَنْ يَدْخُلُه عَمَلُه الْجَنّة

“আমল করো এবং নিজের সাধ্যমত সর্বাধিক সঠিক কাজ করার চেষ্টা করো। জেনে রাখো,কোন ব্যক্তিকে শুধু তার আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না।”

লোকেরা বললোঃ হে আল্লাহর রসূল, আপনার আমলও কি পারবে না? তিনি বললেনঃ

ولا انا الا ان يتغمدنى الله برحمته

“হাঁ, আমিও শুধু আমার আমলের জোরে জান্নাতে যেতে পারবো না। তবে আমার রব যদি তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে আচ্ছাদিত করেন।”

৪৫.
অর্থাৎ এখন যদি এসব লোক উপদেশ গ্রহণ না করে তাহলে দেখো, কিভাবে তাদের দুর্ভাগ্য আসে। আর তোমার এই দাওয়াতের পরিণাম কি হয় তা দেখার জন্য এরাও অপেক্ষমান।
অনুবাদ: