আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আশ শূরা

৫৩ আয়াত

৩১ ) তোমরা তোমাদের আল্লাহকে পৃথিবীতে অচল ও অক্ষম করে দিতে সক্ষম নও এবং আল্লাহ‌ ছাড়া তোমাদের আর কোন সহযোগী ও সাহায্যকারী নেই।
وَمَآ أَنتُم بِمُعْجِزِينَ فِى ٱلْأَرْضِ ۖ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِن وَلِىٍّۢ وَلَا نَصِيرٍۢ ٣١
৩২ ) সমুদ্রের বুকে পাহাড়ের মত দৃশ্যমান এসব জাহাজ তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
وَمِنْ ءَايَـٰتِهِ ٱلْجَوَارِ فِى ٱلْبَحْرِ كَٱلْأَعْلَـٰمِ ٣٢
৩৩ ) আল্লাহ চাইলে বাতাসকে থামিয়ে দেবেন আর তখন সেগুলো সমুদ্রের বুকে নিশ্চল দাঁড়িয়ে যাবে। ---এর মধ্যে সেই সব লোকদের প্রত্যেকের জন্য বড় বড় নিদর্শন রয়েছে যারা পূর্ণ মাত্রায় ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ। ৫৩
إِن يَشَأْ يُسْكِنِ ٱلرِّيحَ فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلَىٰ ظَهْرِهِۦٓ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَـٰتٍۢ لِّكُلِّ صَبَّارٍۢ شَكُورٍ ٣٣
৩৪ ) অথবা তার আরোহীদের বহু সংখ্যক গোনাহ ক্ষমা করেও তাদেরকে কতিপয় কৃতকর্মের অপরাধে ডুবিয়ে দেবেন।
أَوْ يُوبِقْهُنَّ بِمَا كَسَبُوا۟ وَيَعْفُ عَن كَثِيرٍۢ ٣٤
৩৫ ) আমার নিদর্শনসমূহ নিয়ে যারা বিতর্ক করে সেই সময় তারা জানতে পারবে, তাদের আশ্রয় লাভের কোন জায়গা নেই। ৫৪
وَيَعْلَمَ ٱلَّذِينَ يُجَـٰدِلُونَ فِىٓ ءَايَـٰتِنَا مَا لَهُم مِّن مَّحِيصٍۢ ٣٥
৩৬ ) যা-ই তোমাদের দেয়া হয়েছে তা কেবল দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের উপকরণ মাত্র। ৫৫ আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা যেমন উত্তম তেমনি চিরস্থায়ী। ৫৬ তা সেই সব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের উপর নির্ভর করে, ৫৭
فَمَآ أُوتِيتُم مِّن شَىْءٍۢ فَمَتَـٰعُ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۖ وَمَا عِندَ ٱللَّهِ خَيْرٌۭ وَأَبْقَىٰ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ ٣٦
৩৭ ) যারা বড় বড় গোনাহ এবং লজ্জাহীনতার কাজ থেকে বিরত থাকে ৫৮ এবং ক্রোধ উৎপত্তি হলে ক্ষমা করে, ৫৯
وَٱلَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَـٰٓئِرَ ٱلْإِثْمِ وَٱلْفَوَٰحِشَ وَإِذَا مَا غَضِبُوا۟ هُمْ يَغْفِرُونَ ٣٧
৩৮ ) যারা তাদের রবের নির্দেশ মেনে চলে, ৬০ নামায কায়েম করে এবং নিজেদের সব কাজ পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে চালায়, ৬১ আমি তাদের যা রিযিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে ৬২
وَٱلَّذِينَ ٱسْتَجَابُوا۟ لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ يُنفِقُونَ ٣٨
৩৯ ) এবং তাদের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করা হলে তার মোকাবিলা করে। ৬৩
وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَابَهُمُ ٱلْبَغْىُ هُمْ يَنتَصِرُونَ ٣٩
৪০ ) খারাপের ৬৪ প্রতিদান সমপর্যায়ের খারাপ। ৬৫ অতঃপর যে মাফ করে দেয় এবং সংশোধন করে তাকে পুরস্কৃত করা আল্লাহর দায়িত্ব। ৬৬ আল্লাহ জালেমদের পছন্দ করেন না। ৬৭
وَجَزَٰٓؤُا۟ سَيِّئَةٍۢ سَيِّئَةٌۭ مِّثْلُهَا ۖ فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُۥ عَلَى ٱللَّهِ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلظَّـٰلِمِينَ ٤٠
৫৩.
ধৈর্যশীল অর্থ এমন ব্যক্তি যে নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ভাল মন্দ সব রকম পরিস্থিতিতে বন্দেগীর আচরণের ওপর দৃঢ়পদ থাকে। তাদের অবস্থা এমন নয় যে, সুদিন আসলে নিজের সত্তাকে ভুলে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী এবং বান্দাদের জন্য অত্যাচারী হয়ে ওঠে এবং দুর্দিন আসলে মর্যাদাবোধ খুইয়ে বসে এবং যে কোন জঘন্য থেকে জঘন্যতর আচরণ করতে থাকে। কৃতজ্ঞ বলতে বুঝানো হয়েছে এমন ব্যক্তিকে যাকে তাকদীরে ইলাহী যত উচ্চাসনেই অধিষ্টিত করুক না কেন সে তাকে নিজের কৃতিত্ব নয়, বরং আল্লাহর ইহসান মনে করে এবং যত নিচেই তাকে নিক্ষেপ করা হোক না কেন তার দৃষ্টি নিজের বঞ্চনার পরিবর্তে সেই সব নিয়ামতের ওপর নিবন্ধ থাকে যা অতি করুণ পরিস্থিতির মধ্যেও ব্যক্তি লাভ করে এবং সুখ ও দুঃখ উভয় পরিস্থিতিতে তার মুখ ও অন্তর থেকে তার রবের প্রতি কৃতজ্ঞতাই প্রকাশ পেতে থাকে।
৫৪.
কুরাইশদেরকে তাদের বাণিজ্যিক কায়কারবারের উদ্দেশ্যে হাবশা এবং আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে যেতে হতো। এসব সফরে তারা পালের জাহাজ ও নৌকায় লোহিত সাগর পাড়ি দিত যা একটি ভয়ানক সাগর। প্রায়ই তা ঝঞ্ঝা বিক্ষুদ্ধ থাকে এবং তার পানির নীচে বিপুল সংখ্যক পাহাড় বিদ্যমান। বিক্ষুব্ধ সমুদ্রে এসব পাহাড়ের সাথে জাহাজের ধাক্কা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। আল্লাহ‌ এখানে সে অবস্থা চিত্রিত করেছেন নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে কুরাইশরা তা ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারতো।
৫৫.
অর্থাৎ এটা এমন কোন জিনিস নয় যার জন্য মানুষ গর্বিত হতে পারে। কোন মানুষ পৃথিবীতে সর্বাধিক সম্পদ লাভ করলেও স্বল্পতম সময়ের জন্যই লাভ করেছে। সে কয়েক বছর মাত্র তা ভোগ করে তারপর সব কিছু ছেড়ে খালি হাতে পৃথিবী থেকে বিদায় হয়ে যায়। তাছাড়া সে সম্পদ যত অঢেলই হোক না কেন বাস্তবে তার একটা ক্ষুদ্রতম অংশই ব্যক্তির ব্যবহারে আসে। এ ধরণের সম্পদের কারণে গর্বিত হওয়া এমন কোন মানুষের কাজ নয় যে, নিজের এই অর্থ-সম্পদের এবং এই পৃথিবীর প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করে।
৫৬.
অর্থাৎ সেই সম্পদ গুণগত ও অবস্থাগত দিক দিয়েও উন্নতমানের। তাছাড়া তা সাময়িক বা অস্থায়ীও নয়, বরং চিরস্থায়ী ও অবিনশ্বর।
৫৭.
এখানে আল্লাহর প্রতি ভরসাকে ঈমানের অনিবার্য দাবী এবং আখেরাতের সফলতার জন্য একটি জরুরী বৈশিষ্ট্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাওয়াক্কুল অর্থ হচ্ছে, প্রথমত, আল্লাহর পথনির্দেশনার ওপর ব্যক্তির পূর্ণ আস্থা থাকবে এবং সে মনে করবে, আল্লাহ‌ প্রকৃত সত্য সম্পর্কে যে জ্ঞান, নৈতিক চরিত্রের যে নীতিমালা, হালাল ও হারামের যে সীমারেখা এবং পৃথিবীতে জীবন যাপনের জন্য যেসব নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধান দিয়েছেন তাই সত্য ও সঠিক এবং সেসব মেনে চলার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত। দ্বিতীয়ত, মানুষের নির্ভরতা তার নিজের শক্তি, যোগ্যতা, মাধ্যম ও উপায়-উপকরণ, ব্যবস্থাপনা এবং আল্লাহ‌ ছাড়া অন্যদের সাহায্য-সহযোগিতার ওপর হবে না। তাকে একথা পুরোপুরি মনে রাখতে হবে যে, দুনিয়া ও আখেরাতের প্রতিটি ব্যাপারে তার সাফল্য প্রকৃতপক্ষে নির্ভর করে আল্লাহর তাওফীক ও সাহায্যের ওপর। আর সে আল্লাহর তাওফীক ও সাহায্যের উপযুক্ত কেবল তখনই হতে পারে যখন সে তাঁর সন্তুষ্টিকে লক্ষ্য বানিয়ে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমারেখাসমূহ মেনে কাজ করবে। তৃতীয়ত, ঈমান ও নেক কাজের পথ অবলম্বনকারী এবং বাতিলের পরিবর্তে ন্যায় ও সত্যের জন্য কর্মতৎপর বান্দাদেরকে আল্লাহ‌ যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্যক্তিকে তার ওপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। ঐ সব প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল হয়ে সে সেই সব লাভ, উপকার ও আনন্দকে পদাঘাত করবে যা বাতিলের পথ অনুসরণ করার ক্ষেত্রে লাভ করা যাবে বলে মনে হয় এবং ন্যায় ও সত্যের ওপর দৃঢ়পদ থাকার কারণে যেসব ক্ষতি, দুঃখ-কষ্ট এবং বঞ্চনা তার ভাগ্যে আসে তা সহ্য করবে। ঈমানের সাথে তাওয়াক্কুলের সম্পর্ক কত গভীর তা তাওয়াক্কুল শব্দের অর্থের এই বিশ্লেষণের পর সুস্পষ্ট হয়ে যায় এবং তাওয়াক্কুল ছাড়া যে ঈমান সাদামাটা স্বীকৃতি ও ঘোষণা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ তা থেকে সেই গৌরবময় ফলাফল কি করে অর্জিত হতে পারে ঈমান গ্রহণ করে তাওয়াক্কুলকারীদের যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
৫৮.
ব্যখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আন নিসা, টীকা ৫৩, ৫৪; আল আনয়াম, টীকা ১৩০-১৩১; আন নাহল, টীকা ৮৯; তাছাড়া সূরা নাজমের ৩২ আয়াত।
৫৯.
অর্থাৎ তারা রুক্ষ ও ক্রুদ্ধ স্বভাবের হয় না, বরং নম্র স্বভাব ও ধীর মেজাজের মানুষ হয়। তাদের স্বভাব প্রতিশোধ পরায়ণ হয় না। তারা আল্লাহর বান্দাদের সাথে ক্ষমার আচরণ করে এবং কোন কারণে ক্রোধান্বিত হলেও তা হজম করে। এটি মানুষের সর্বোত্তম গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মজীদ একে অত্যন্ত প্রশংসার যোগ্য বলে ঘোষণা করেছে (আল ইমরান, আয়াত ১৩৪) এবং একে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাফল্যের বড় বড় কারণসমূহের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে (আল ইমরান, ১৫৯ আয়াত)। হাদীসে হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ

وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِنَفْسِهِ فى شئ قط ، إِلاَّ أَنْ تُنْتَهَكَ حُرْمَةُ اللَّهِ (بخارى , مسلم)

“রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যক্তিগত কারণে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর কোন হুরমত বা মর্যাদার অবমাননা করা হলে তিনি শাস্তি বিধান করতেন।”

৬০.
শাব্দিক অনুবাদ হবে “রবের আহবানে সাড়া দেয়।” অর্থাৎ আল্লাহ‌ যে কাজের জন্যই ডাকেন সে কাজের জন্যই ছুটে যায় এবং যে জিনিসের জন্যই আহবান জানান তা গ্রহণ করে।
৬১.
এ বিষয়টিকে এখানে ঈমানদারদের সর্বোত্তম গুণাবলীর মধ্যে গণ্য করা হয়েছে এবং সূরা আল ইমরানে (আয়াত ১৫৯) এজন্য আদেশ করা হয়েছে। এ কারণে পরামর্শ ইসলামী জীবন প্রণালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পরামর্শ ছাড়া সামষ্টিক কাজ পরিচালনা করা শুধু জাহেলী পন্থাই নয়, আল্লাহর নির্ধারিত বিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। ইসলামে পরামর্শকে এই গুরুত্ব কেন দেয়া হয়েছে? এর কারণসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে আমাদের সামনে তিনটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়।

একঃ যে বিষয়টি দুই বা আরো বেশী লোকের স্বার্থের সাথে জড়িত সেক্ষেত্রে কোন এক ব্যক্তির নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং সংশিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের উপেক্ষা করা জুলুম। যৌথ ব্যাপারে কারো যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার নেই। ইনসাফের দাবী হচ্ছে, কোন বিষয়ে যত লোকের স্বার্থ জড়িত সে ব্যাপারে তাদের সবার মতামত গ্রহণ করতে হবে এবং তাতে যদি বিপুল সংখ্যক লোকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকে তাহলে তাদের আস্থাভাজন প্রতিনিধিদেরকে পরামর্শের মধ্যে শামিল করতে হবে।

দুইঃ যৌথ ব্যাপারে মানুষ স্বেচ্ছাচারিতা করার চেষ্টা করে অন্যদের অধিকার নস্যাত করে নিজে ব্যক্তি স্বার্থ লাভ করার জন্য, অথবা এর কারণ হয় সে নিজেকে বড় একটা কিছু এবং অন্যদের নগন্য মনে করে। নৈতিক বিচারে এই দু’টি জিনিসই সমপর্যায়ের হীন। মু’মিনের মধ্যে এ দু’টির কোনটিই পাওয়া যেতে পারে না। মু’মিন কখনো স্বার্থপর হয় না। তাই সে অন্যদের ওপর হস্তক্ষেপ করে নিজে অন্যায় ফায়দা চাইতে পারে না এবং অহংকারী বা আত্মপ্রশংসিত হতে পারে না যে নিজেকেই শুধু মহাজ্ঞানী ও সবজান্তা মনে করবে।

তিনঃ যেসব বিষয় অন্যদের অধিকার ও স্বার্থের সাথে জড়িত সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটা বড় দায়িত্ব। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে এবং একথা জানে যে এর জন্য তাকে তার রবের কাছে কত কঠিন জবাবদিহি করতে হবে সে কখনো একা এই গুরুভার নিজের কাঁধে উঠিয়ে নেয়ার দুঃসাহস করতে পারে না। এ ধরনের দুঃসাহস কেবল তারাই করে যারা আল্লাহর ব্যাপারে নির্ভিক এবং আখেরাত সম্পর্কে চিন্তাহীন। খোদাভীরু ও আখেরাতের জবাবদিহির অনুভূতি সম্পন্ন লোক কোন যৌথ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কিংবা তাদের নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধিদেরকে পরামর্শ গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই শরীক করার চেষ্টা করবে যাতে সর্বাধিক মাত্রায় সঠিক, নিরপেক্ষ এবং ইনসাফ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে যদি অজ্ঞাতসারে কোন ত্রুটি হয়েও যায় তাহলে কোন এক ব্যক্তির ঘাড়ে তার দায়দায়িত্ব এসে পড়বে না।

এ তিনটি কারণ এমন যদি তা নিয়ে মানুষ গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে অতি সহজেই সে একথা উপলব্ধি করতে পারবে যে, ইসলাম যে নৈতিক চরিত্রের শিক্ষা দেয় পরামর্শ তার অনিবার্য দাবী এবং তা এড়িয়ে চলা একটি অতি বড় চরিত্রহীনতার কাজ। ইসলাম কখানো এ ধরনের কাজের অনুমতি দিতে পারে না। ইসলামী জীবন পদ্ধতি সমাজের ছোট বড় প্রতিটি ব্যাপারেই পরামর্শের নীতি কার্যকরী হোক তা চায়। পারিবারিক ব্যাপার হলে সেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে কাজ করবে এবং ছেলে-মেয়ে বড় হলে তাদেরকেও পরামর্শে শরীক করতে হবে। খা‌ন্দান বা গোষ্ঠীর ব্যাপার হলে সেক্ষেত্রে গোষ্ঠীর সমস্ত বুদ্ধিমান ও বয়োপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণ করতে হবে। যদি একটি গোত্র বা জ্ঞাতিগোষ্ঠী কিংবা জনপদের বিষয়াদি হয় এবং তাতে সব মানুষের অংশগ্রহণ সম্ভব না হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব এমন পঞ্চায়েত বা সভা পালন করবে যেখানে কোন সর্বসম্মত পন্থা অনুসারে সংশ্লিষ্ট সবার আস্থাভাজন প্রতিনিধিরা শরীক হবে। গোটা জাতির ব্যাপার হলে তা পরিচালনার জন্য সবার ইচ্ছানুসারে তাদের নেতা নিযুক্ত হবে। জাতীয় বিষয়গুলোকে সে এমন সব ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ অনুসারে পরিচালনা করবে জাতি যাদেরকে নির্ভরযোগ্য মনে করে এবং সে ততক্ষণ পর্যন্ত নেতা থাকবে যতক্ষণ জাতি তাকে নেতা বানিয়ে রাখতে চাইবে। কোন ঈমানদার ব্যক্তি জোরপূর্বক জাতির নেতা হওয়া বা হয়ে থাকার আকাঙ্ক্ষা কিংবা চেষ্টা করতে পারে না। প্রথমে জোরপূর্বক জাতির ঘাড়ে চেপে বসা এবং পরে জবরদস্তি করে মানুষের সম্মতি আদায় করা এমন প্রতারণাও সে করতে পারে না। তাকে পরামর্শ দানের জন্য মানুষ স্বাধীন ইচ্ছানুসারে নিজেদের মনোনীত প্রতিনিধি নয়, বরং এমন প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে যে তার মর্জি মোতাবেক মতামত প্রকাশ করবে, ‌এমন চক্রান্তও সে করতে পারে না এমন আকাঙ্ক্ষা কেবল সেই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে যার মন অসৎ উদ্দেশ্য দ্বারা কলুষিত। এই আকাংখার সাথে أَمْرَهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ এর বাহ্যিক কাঠামো নির্মাণ এবং তার বাস্তব প্রাণসত্তাকে নিঃশেষ করে দেয়ার প্রচেষ্টা শুধু সেই ব্যক্তিই চালাতে পারে যে আল্লাহ‌ এবং তাঁর সৃষ্টিকে ধোঁকা দিতে ভয় করে না। অথচ না আল্লাহকে ধোঁকা দেয়া সম্ভব না আল্লাহর সৃষ্ট মানুষ এমন অন্ধ হতে পারে যে, প্রকাশ্য দিবালোকে কেউ ডাকাতি করছে আর মানুষ তা দেখে সরল মনে ভাবতে থাকবে যে, সে ডাকাত নয় মানুষের সেবা করছে।

أَمْرَهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ এর নিয়মটি প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে পাঁচটি জিনিস দাবী করেঃ

একঃ যৌথ বিষয়সমূহ যাদের অধিকার ও স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত তাদের মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং কার্যক্ষেত্রে ব্যাপারগুলো কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে সে বিষয়ে তাদের অবহিত রাখতে হবে। তারা যদি তাদের ব্যাপারগুলোর নেতৃত্বে কোন ত্রুটি, অপরিপক্বতা বা দুর্বলতা দেখায় তাহলে তা তুলে ধরার ও তার প্রতিবাদ করার এবং সংশোধিত হতে না দেখলে পরিচালক ও ব্যবস্থাপকদের পরিবর্তন করার অধিকার থাকতে হবে। মানুষের মুখ বন্ধ করে, হাত পা বেঁধে এবং তাদেরকে অনবহিত রেখে তাদের সামষ্টিক ব্যাপারসমূহ পরিচালনা করা সুস্পষ্ট প্রবঞ্চনা। কেউ-ই এ কাজকে أَمْرَهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ নীতির অনুসরণ বলে মানতে পারে না।

দুইঃ যৌথ বিষয়সমূহ পরিচালনার দায়িত্ব যাকেই দেয়া হবে তাকে যেন এ দায়িত্ব সবার স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে দান করা হয়। জবরদস্তি ও ভয়ভীতি দ্বারা অর্জিত কিংবা লোভ-লালসা দিয়ে খরিদকৃত অথবা ধোঁকা-প্রতারণা ও চক্রান্তের মাধ্যমে লুন্ঠিত সম্মতি প্রকৃতপক্ষে কোন সম্মতি নয়। যে সম্ভাব্য সব রকম পন্থা কাজে লাগিয়ে কোন জাতির নেতা হয় সে সত্যিকার নেতা নয়। সত্যিকার নেতা সেই যাকে মানুষ নিজের পছন্দানুসারে সানন্দ চিত্তে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে।

তিনঃ নেতাকে পরামর্শ দানের জন্যও এমন সব লোক নিয়োগ করতে হবে যাদের প্রতি জাতির আস্থা আছে। এটা সর্বজনবিদিত যে, যারা চাপ সৃষ্টি করে কিংবা অর্থ দ্বারা খরিদ করে অথবা মিথ্যা ও চক্রান্তের সাহায্যে বা মানুষকে বিভ্রান্ত করে প্রতিনিধিত্বের স্থানটি দখল করে তাদেরকে সঠিক অর্থে আস্থাভাজন বলা যায় না।

চারঃ পরামর্শদাতাগণ নিজেদের জ্ঞান, ঈমান ও বিবেক অনুসারে পরামর্শ দান করবে এবং এভাবে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে। এ দিকগুলো যেখানে থাকবে না, যেখানে পরামর্শদাতা কোন প্রকার লোভ-লালসা বা ভীতির কারণে অথবা কোন দালাদলির মারপ্যাঁচের কারণে নিজের জ্ঞান ও বিবেকের বিরুদ্ধে মতামত পেশ করে সেখানে প্রকৃতপক্ষে হবে খিয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা أَمْرَهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ এর অনুসরণ নয়।

পাঁচঃ পরামর্শদাতাদের ইজমা’র (সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত) ভিত্তিতে যে পরামর্শ দেয়া হবে, অথবা যে সিদ্ধান্ত তাদের অধিকাংশের সমর্থন লাভ করবে তা মেনে নিতে হবে। কেননা সবার মতামত জানার পরও যদি এক ব্যক্তি অথবা একটি ছোট্ট গ্রুপকে স্বেচ্ছাচার চালানোর সুযোগ দেয়া হয় তাহলে পরামর্শ অর্থহীন হয়ে যায়। আল্লাহ‌ একথা বলছেন না যে, “তাদের ব্যাপারে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়” বরং বলছেন, ‘তাদের কাজকর্ম পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে চলে।’ শুধু পরামর্শ করাতেই এ নির্দেশ পালন করা হয় না। তাই পরামর্শের ক্ষেত্রে সর্বসম্মত অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজকর্ম পরিচালনা প্রয়োজন।

ইসলামের পরামর্শ ভিত্তিক কাজ পরিচালনা নীতির এই ব্যাখ্যার সাথে এই মৌলিক কথাটার প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে যে, মুসলমানদের পারস্পরিক বিষয়সমূহ পরিচালনায় এই শূরা স্বেচ্ছাচারী এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নয়, বরং অবশ্যই সেই দ্বীনের বিধি-বিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ আল্লাহ‌ নিজেই যার জন্য বিধান রচনা করেছেন। সাথে সাথে তা সেই মূল নীতিরও আনুগত্য করতে বাধ্য যাতে বলা হয়েছে “যে ব্যাপারেই তোমাদের মধ্যে মতভেদ হবে তার ফায়সালা করবেন আল্লাহ।” এবং “তোমাদের মধ্যে যে বিরোধই বাঁধুক না কেন সেজন্য আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের কাছে ফিরে যাও।” এই সাধারণ সূত্র অনুসারে মুসলমানরা শারয়ী বিষয়ে মূল ধর্মগ্রন্থের কোন অংশের কি অর্থ এবং কিভাবে তা কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ করতে পারে যাতে তার মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয়। কিন্তু স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এ উদ্দেশ্যে কোন পরামর্শ করতে পারে না।

৬২.
এর তিনটি অর্থঃ

একঃ আমি তাদেরকে যে হালাল রিযিক দান করেছি তা থেকে খরচ করে, নিজের ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য হারাম অর্থ-সম্পদের দিকে হাত বাড়ায় না।

দুইঃ আমার দেয়া রিযিককে যক্ষের ধনের মত জমা করে রাখে না, বরং খরচ করে।

তিনঃ তাদের যে রিযিক দেয়া হয়েছে তা থেকে আল্লাহর পথেও ব্যয় করে, সবটাই নিজের জন্য আঁকড়ে ধরে রাখে না।

প্রথম অর্থের ভিত্তি হলো, আল্লাহ‌ শুধু হালাল ও পবিত্র রিযিককেই তাঁর দেয়া রিযিক বলে বর্ণনা করেন। অপবিত্র ও হারাম পন্থায় উপার্জিত রিযিককে তিনি তাঁর নিজের দেয়া রিযিক বলেন না। দ্বিতীয় অর্থের ভিত্তি হলো, আল্লাহ‌ মানুষকে যে রিযিক দান করেন তা খরচ করার জন্য দান করেন, জমিয়ে জমিয়ে সাপের মত পাহারা দিয়ে রাখার জন্য দেন না এবং তৃতীয় অর্থের ভিত্তি হলো, কুরআন মজীদে ব্যয় করা বলতে শুধু নিজের সত্তা ও প্রয়োজন পূরণের জন্য ব্যয় করা বুঝানো হয়নি। এ অর্থের মধ্যে আল্লাহর পথে ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত। এ তিনটি কারণে আল্লাহ‌ এখানে খরচ করাকে ঈমানদারদের সর্বোত্তম গুণাবলীর মধ্যে গণ্য করছেন এবং এজন্য আখেরাতের কল্যাণসমূহ তাদের জন্যই নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

৬৩.
এটাও ঈমানদারদের একটা সর্বোৎকৃষ্ট গুণ। তারা জালেম ও নিষ্ঠুরদের জন্য সহজ শিকার নয়। তাদের কোমল স্বভাব এবং ক্ষমাশীলতা দুর্বলতার কারণে নয়। তাদের ভিক্ষু ও পাদরীদের মত মিসকীন হয়ে থাকার শিক্ষা দেয়া হয়নি। তাদের ভদ্রতার দাবী হচ্ছে বিজয়ী হলে বিজিতের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়। সক্ষম হলে প্রতিশোধ গ্রহণ না করে মাফ করে এবং অধীনস্ত ও দুর্বল ব্যক্তির দ্বারা কোন ভুল-ত্রুটি সংঘটিত হলে তা উপেক্ষা করে যায়। কিন্তু কোন শক্তিশালী ব্যক্তি যদি তার শক্তির অহংকারে তার প্রতি বাড়াবাড়ি করে তাহলে বুক টান করে দাঁড়িয়ে যায় এবং তাকে উচিত শিক্ষা দান করে। মু’মিন কখনো জালেমের কাছে হার মানে না এবং অহংকারীর সামনে মাথা নত করে না। এ ধরনের লোকদের জন্য তারা বড় কঠিন খাদ্য যা চিবানোর প্রচেষ্টাকারীর মাড়িই ভেঙে দেয়।
৬৪.
এখান থেকে শেষ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত গোটা বক্তব্য পূর্ববর্তী আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরূপ।
৬৫.
এটা প্রথম নিয়মতান্ত্রিক বিধান, প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে যা মনে রাখা দরকার। প্রতিশোধ গ্রহণের বৈধ সীমা হচ্ছে কারো প্রতি যতটুকুন অন্যায় করা হয়েছে সে তার প্রতি ঠিক ততটুকুন অন্যায় করবে। তার চেয়ে বেশী অন্যায় করার অধিকার তার নেই।
৬৬.
এটা প্রতিশোধ গ্রহণের দ্বিতীয় বিধান। এর অর্থ অন্যায়কারী থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ যদিও বৈধ, তবে যেখানে ক্ষমা করে দিলে তা সংশোধনের কারণ হতে পারে সেখানে সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রতিশোধ গ্রহণের পরিবর্তে মাফ করে দেয়া অধিক উত্তম। যেহেতু মানুষ নিজেকে কষ্ট দিয়ে এই ক্ষমা প্রদর্শন করে তাই আল্লাহ‌ বলেন, এর প্রতিদান দেয়া আমার দায়িত্ব। কারণ, সত্য পথ থেকে বিচ্যুত মানুষকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে তুমি এই তিক্ততা হজম করেছো।
৬৭.
এই সতর্ক বাণীর মধ্যে প্রতিশোধ গ্রহণ সম্পর্কে তৃতীয় আরেকটি বিধানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে, অন্যের কৃত জুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে করতে কোন ব্যক্তির নিজেরই জালেম না হয়ে যাওয়া উচিত। একটি অন্যায়ের পরিবর্তে তার চেয়ে বড় অন্যায় করে ফেলা বৈধ নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ অপর কাউকে একটি চপটেঘাত করে তাহলে সে তাকে একটি চপেটাঘাতই করতে পারে, অসংখ্য লাথি ও ঘুষি মারতে পারে না। অনুরূপ গোনাহর, প্রতিশোধ গোনাহর কাজের মাধ্যমে নেয়া ঠিক নয় যেমন কোন জালেম যদি কারোর পুত্রকে হত্যা করে তাহলে তার পুত্রকে হত্যা করা জায়েয না। কিংবা কোন দুরাচার যদি কারো বোন বা কন্যার সাথে ব্যাভিচার করে তাহলে সেই ব্যক্তির তার বোন বা কন্যার সাথে ব্যভিচার করা হালাল হবে না।
অনুবাদ: