আল মুমিন

৮৫ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
৬১ ) আল্লাহই তো সেই মহান সত্তা যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা রাতের বেলা আরাম করতে পারো। আর দিনকে আলোকিত করেছেন। সত্য এই যে, আল্লাহ‌ মানুষের প্রতি অনুকম্পাশীল। তবে অধিকাংশ লোক শুকরিয়া আদায় করে না। ৮৫
ٱللَّهُ ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ ٱلَّيْلَ لِتَسْكُنُوا۟ فِيهِ وَٱلنَّهَارَ مُبْصِرًا إِنَّ ٱللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى ٱلنَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ ٦١
৬২ ) সে আল্লাহই (যিনি তোমাদের জন্য এসব করেছেন) তোমাদের রব, সবকিছুর স্রষ্টা, তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। ৮৬ তোমাদেরকে কোন্‌ দিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে? ৮৭
ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْ خَٰلِقُ كُلِّ شَىْءٍ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ ٦٢
৬৩ ) এভাবেই সেসব লোককে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করতো। ৮৮
كَذَٰلِكَ يُؤْفَكُ ٱلَّذِينَ كَانُوا۟ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ يَجْحَدُونَ ٦٣
৬৪ ) আল্লাহই তো সেই সত্তা যিনি পৃথিবীকে অবস্থানস্থল বানিয়েছেন ৮৯ এবং ওপরে আসমানকে গম্বুজ বানিয়ে দিয়েছেন। ৯০ যিনি তোমাদের আকৃতি নির্মাণ করেছেন এবং অতি উত্তম আকৃতি নির্মাণ করেছেন। যিনি তোমাদেরকে পবিত্র জিনিসের রিযিক দিয়েছেন। ৯১ সে আল্লাহই (এগুলো যার কাজ) তোমাদের রব। অপরিসীম কল্যাণের অধিকারী তিনি। বিশ্ব-জাহানের রব তিনি।
ٱللَّهُ ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ ٱلْأَرْضَ قَرَارًا وَٱلسَّمَآءَ بِنَآءً وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَرَزَقَكُم مِّنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْ فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلْعَٰلَمِينَ ٦٤
৬৫ ) তিনি চিরঞ্জীব। ৯২ তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তোমাদের দ্বীন তাঁর জন্য নিবেদিত করে তাঁকেই ডাকো। ৯৩ গোটা সৃষ্টি জগতের রব আল্লাহর জন্যই সব প্রশংসা। ৯৪
هُوَ ٱلْحَىُّ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ فَٱدْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ ٦٥
৬৬ ) হে নবী, এসব লোককে বলে দাও, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের ডাকো আমাকে সেসব সত্তার দাসত্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে। ৯৫ (আমি কি করে এ কাজ করতে পারি) আমার কাছে আমার রবের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী এসেছে। আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেন গোটা বিশ্ব-জাহানের রবের সামনে আনুগত্যের মস্তক অবনত করি।
قُلْ إِنِّى نُهِيتُ أَنْ أَعْبُدَ ٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَمَّا جَآءَنِىَ ٱلْبَيِّنَٰتُ مِن رَّبِّى وَأُمِرْتُ أَنْ أُسْلِمَ لِرَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ ٦٦
৬৭ ) তিনিই তো সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর শুক্র থেকে। তারপর রক্তের পিণ্ড থেকে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে শিশুর আকৃতিতে বের করে আনেন। এরপর তিনি তোমাদেরকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করেন যাতে তোমরা নিজেদের পূর্ণ শক্তিতে উপনীত হতে পারো। তারপর আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করেন যাতে তোমরা বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হও। তোমাদের কাউকে আগেই ফিরিয়ে নেয়া হয়। ৯৬ এসব কাজ করা হয় এজন্য যাতে তোমরা তোমাদের নির্ধারিত সময়ের সীমায় পৌঁছতে পারো ৯৭ এবং যাতে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারো। ৯৮
هُوَ ٱلَّذِى خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوٓا۟ أَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُونُوا۟ شُيُوخًا وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّىٰ مِن قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوٓا۟ أَجَلًا مُّسَمًّى وَلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ٦٧
৬৮ ) তিনিই প্রাণ সঞ্চারকারী এবং তিনিই মৃত্যুদানকারী। তিনি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে শুধু একটি নির্দেশ দেন যে, তা হয়ে যাক, আর তখনি তা হয়ে যায়।
هُوَ ٱلَّذِى يُحْىِۦ وَيُمِيتُ فَإِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٦٨
৬৯ ) তুমি কি সেসব লোকদের দেখনি যারা আল্লাহর বিধানাবলী নিয়ে ঝগড়া করে, তাদেরকে কোথা থেকে ফিরানো হচ্ছে? ৯৯
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يُجَٰدِلُونَ فِىٓ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ أَنَّىٰ يُصْرَفُونَ ٦٩
৭০ ) যারা এ কিতাবকে অস্বীকার করে এবং আমি আমার রসূলদের যা দিয়ে পাঠিয়েছিলাম ১০০ তাও অস্বীকার করে? এসব লোক অচিরেই জানতে পারবে
ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِٱلْكِتَٰبِ وَبِمَآ أَرْسَلْنَا بِهِۦ رُسُلَنَا فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ ٧٠
৮৫.
এ আয়াতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রথমত, এতে রাত ও দিনকে তাওহীদের প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। কারণ রাত ও দিনের নিয়মতান্ত্রিক ভাবে আগমনের অর্থ পৃথিবী ও সূর্যের ওপর একই আল্লাহর শাসন চলছে। আর তার ঘুরে ফিরে আসা এবং পৃথিবীর আর সব সৃষ্টির জন্য উপকারী হওয়া এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, এক মাত্র আল্লাহই এসব জিনিসের স্রষ্টাও। তিনি তাঁর চূড়ান্ত পর্যায়ের জ্ঞান ও কৌশল দ্বারা এমনভাবে এ ব্যবস্থা চালু করেছেন যাতে তাঁর সৃষ্টির জন্য কল্যাণকর হয়। দ্বিতীয়ত, এতে আল্লাহ‌কে অস্বীকারকারী এবং আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপনকারী মানুষদেরকেও এ অনুভূতি দেয়া হয়েছে যে, রাত ও দিনের আকারে আল্লাহ‌ তাদেরকে কত বড় নিয়ামত দান করেছেন। কিন্তু তারা কত বড় অকৃতজ্ঞ যে, তার এ নিয়ামত নিজেদের কল্যাণে কাজে লাগিয়েও তারা দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও বিশ্বাসহীনতার কাজ করে যাচ্ছে। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, সূরা ইউনুস, টীকা ৬৫; আল ফুরকান, টীকা ৭৭; আন নামল, টীকা ১০৪; আল কাসাস, টীকা ৯১; আর রূম, টীকা ৩৬; লোকমান, আয়াত ২৯ ; টীকা ৫০ ; ইয়াসীন, আয়াত ৩৭, টীকা ৩২)
৮৬.
অর্থাৎ রাত ও দিনের ঘুরে ফিরে আসা প্রমাণ করে যে, তিনিই তোমাদের ওসব জিনিসের সৃষ্টিকর্তা। তাছাড়া এ আবর্তনের মধ্যে তোমাদের জীবনের জন্য যে বিরাট কল্যাণ নিহিত আছে তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি তোমাদের অত্যন্ত দয়াবান পালনকর্তা। সুতরাং একথা আপনা থেকেই নিঃসন্দেহে প্রমাণ হয় যে, তোমাদের প্রকৃত উপাস্যও তিনিই। তোমাদের স্রষ্টা ও পালনকর্তা হবেন আল্লাহ‌ আর উপাস্য হবে অন্য কেউ এটা জ্ঞান-বুদ্ধি ও ইনসাফের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
৮৭.
অর্থাৎ যে তোমাদের স্রষ্টাও নয় পালনকর্তাও নয় সে তোমাদের ইবাদাত তথা দাসত্ব পাওয়ার অধিকারী হবে একথা বলে তোমাদেরকে কে বিভ্রান্ত করছে?
৮৮.
অর্থাৎ প্রত্যেক যুগেই সাধারণ মানুষ শুধু এ কারণে এসব বিভ্রান্তকারীদের ধোঁকাবাজির শিকার হয়েছে যে, সত্য বুঝানোর জন্য আল্লাহ‌ তাঁর রসূলের মাধ্যমে যে আয়াত নাযিল করেছেন মানুষ তা মানেনি। ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, তারা সেসব স্বার্থপর ধোঁকাবাজদের জালে আটকে পড়েছে যারা নিজেদের স্বার্থোদ্ধারের জন্য নকল খোদার আস্তানা বানিয়ে বসেছিল।
৮৯.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আন নামল, টীকা ৭৪, ৭৫।
৯০.
অর্থাৎ তোমাদেরকে খোলা আকাশের নিচে এমনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়নি যে, মহাশূন্যের বিপদাপদ বৃষ্টির মত বর্ষিত হয়ে তোমাদেরকে তছনছ করে দেবে। বরং পৃথিবীর ওপরে একটি সুদৃঢ় ব্যবস্থাপনা কায়েম করে দিয়েছেন (যা দেখতে গম্বুজের মত মনে হয়)। এ ব্যবস্থাপনা অতিক্রম করে কোন ধংসাত্মক বস্তুই তোমাদের কাছে পৌঁছতে পারে না। এমনকি মহাশূন্যের প্রাণ সংহারী রশ্মিসমূহও পৌঁছতে পারে না। এ কারণেই তোমরা নিরাপদে আরামে এ পৃথিবীতে বেঁচে আছ।
৯১.
অর্থাৎ তোমাদেরকে সৃষ্টি করার পূর্বেই এমন সুরক্ষিত ও নিরাপদ অবস্থানস্থল প্রস্তুত করেছেন। তারপর তোমাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একটি সর্বোত্তম দেহ কাঠামো, উপযুক্ত অংগ-প্রত্যংগ এবং উন্নত দৈহিক ও চিন্তা শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এ সরল সোজা দেহ কাঠামো, হাত, পা, চোখ, নাক এবং কান, বাকশক্তি সম্পন্ন এ জিহবা এবং সর্বোত্তম যোগ্যতার ভাণ্ডার এ মস্তিষ্ক তোমরা নিজে তৈরী করে আনোনি, তোমাদের বাবা-মাও তৈরী করেনি, কোন নবী, অলী কিংবা দেবতার মধ্যেও তার তৈরী করার ক্ষমতা ছিল না। এসব যোগ্যতা ও ক্ষমতার সৃষ্টিকারী ছিলেন সে মহাজ্ঞানী, দয়ালু ও সর্বশক্তিমান সত্তা যিনি মানুষকে সৃষ্টি করার সময় পৃথিবীতে কাজ করার জন্য তাকে এ নজীরবিহীন দেহ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর জন্মলাভ করার সাথে সাথে তাঁর দয়ায় তোমরা প্রচুর পবিত্র খাদ্য পেয়েছো, পানাহারের এমন সব পবিত্র উপকরণ লাভ করেছো যা বিষাক্ত নয়, সুস্বাস্থ্য দায়ক, তিক্ত, নোংরা ও বিস্বাদ নয় বরং সুস্বাদু, পচা-গলা ও দুর্গন্ধ নয় বরং সুবাসিত খাদ্য প্রাণহীন নয়, বরং তোমাদের দেহের লালন ও প্রবৃদ্ধির জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী খাদ্য প্রাণ ও প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানে সমৃদ্ধ। পানি, খাদ্য, শস্য, তরকারী ফলমূল, দুধ, মধু, গোশত লবণ মরিচ ও মসলা তোমাদের পুষ্টি সাধনের জন্য এসব অত্যন্ত উপযোগী এবং জীবনদায়িনী শক্তিই শুধু নয়, বরং জীবনের পরিপূর্ণ আস্বাদ লাভের জন্যও অত্যন্ত উপযোগী। এ পৃথিবীতে এসব জিনিস কে এত প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করেছে, ভূমি থেকে খাদ্যের এ অগণিত ভাণ্ডার উৎপাদনের এ ব্যবস্থা কে করেছে যে, তার যোগান কখনো বন্ধ হয় না? চিন্তা করে দেখো, রিযিকের এ ব্যবস্থা না করেই যদি তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হতো তাহলে তোমাদের জীবনের পরিস্থিতি কি দাঁড়াতো? সুতরাং এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, তোমাদের স্রষ্টা শুধু স্রষ্টাই নন, বরং মহাজ্ঞানী স্রষ্টা বরং অত্যন্ত দয়ালু প্রভু? (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা হূদ, টীকা ৬ ও ৭, আন নামল, টীকা ৭৩ থেকে ৮৩)।
৯২.
অর্থাৎ তাঁর জীবনই বাস্তব ও প্রকৃত জীবন। একমাত্র তিনিই আপন ক্ষমতায় জীবিত। তাঁর জীবন ছাড়া আর কারো জীবনই অনাদি ও চিরস্থায়ী নয়। আর সবার জীবনই আল্লাহ‌ প্রদত্ত, মরণশীল ও ধ্বংসশীল।
৯৩.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আয যুমার, টীকা ৩ ও ৪।
৯৪.
অর্থাৎ দ্বিতীয় আর কেউ নেই যার প্রশংসা ও স্তুতিবাদ করা যেতে পারে এবং যার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যেতে পারে।
৯৫.
এখানে পুনরায় ‘ইবাদাত’ ও দোয়াকে সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
৯৬.
অর্থাৎ কেউ জন্মলাভের পূর্বে, কেউ যৌবন প্রাপ্তির পূর্বে এবং কেউ বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছার পূর্বে মৃত্যু বরণ করে থাকে।
৯৭.
নির্ধারিত সময়ের অর্থ মৃত্যুর সময় অথবা সে সময় যখন পুনরায় জীবিত হওয়ার পর সমস্ত মানুষকে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হবে। প্রথম অর্থ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হবে আল্লাহ‌ তা’আলা প্রত্যেক মানুষকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করিয়ে সে বিশেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে যান যা তিনি প্রত্যেক মানুষের জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। বিশেষ সে মুহূর্তটি আসার পূর্বে যদি গোটা দুনিয়ার মানুষ মিলিত হয়েও তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করে তবুও হত্যা করতে পারবে না। আবার সে মুহূর্তটি এসে যাওয়ার পর দুনিয়ার সমস্ত শক্তি মিলিত হয়েও যদি কাউকে জীবিত রাখার জন্য চেষ্টা করে তবুও সফল হতে পারবে না। দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হবে এ পৃথিবীতে তোমাদেরকে এজন্য সৃষ্টি করা হয়নি যে, তোমরা মরে মাটিতে মিশে নিশ্চি‎হ্ন হয়ে যাবে। বরং তিনি তোমাদেরকে জীবনের এসব পর্যায়ের মধ্য দিয়ে এজন্য অতিক্রম করান যাতে তাঁর নির্ধারিত সময়ে তোমরা তাঁর সামনে হাজির হও।
৯৮.
অর্থাৎ জীবনের এসব পর্যায়ের মধ্য দিয়ে তোমাদেরকে অতিক্রম করানোর কারণ এ নয় যে, তোমরা পশুর মত জীবন-যাপন করবে এবং পশুর মত মরবে। বরং এসব পর্যায় অতিক্রম করানো হয় এজন্য যে, আল্লাহ‌ তোমাদেরকে যে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন তা কাজে লাগাবে এবং সে নিয়ম-নীতি ও ব্যবস্থাপনা উপলব্ধি করবে যার অধীনে তোমাদের আপন সত্তার ওপর দিয়ে এসব আবার আবর্তন চলে। মাটির প্রাণহীন উপাদানসমূহের মধ্যে জীবনের মত বিস্ময়কর ও অদ্ভুত জিনিসের উৎপত্তি হওয়া, কেবল অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃষ্টি-গোচর এমন অতি ক্ষুদ্র শুক্রকীট থেকে মানুষের মত বিস্ময়কর সৃষ্টির অস্তিত্ব লাভ করা তারপর মাতৃগর্ভে স্থিতিকাল থেকে প্রসবকাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই এমনভাবে বেড়ে ওঠা যে, তার লিংগ, তার আকার-আকৃতি, তার দৈহিক কাঠামো, তার মানসিক বৈশিষ্টাবলী এবং তার ক্ষমতা ও যোগ্যতা সবকিছুই সেখানে নির্ধারিত হয়ে যায় এবং তার সৃষ্টির ব্যাপারে দুনিয়ার কোন শক্তিরই প্রভাব খাটাতে না পারা। তাছাড়া যার গর্ভপাত হয় তার গর্ভপাতের শিকার হওয়া, যে শিশুকালে মরে যায় তার শিশুকালে মরে যাওয়া, যে যৌবনকালে বা বৃদ্ধাবস্থায় কোন নির্দিষ্ট বয়স সীমায় পৌঁছে তার এমন সব ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেও সে বয়সে উপনীত হওয়া যেসব পরিস্থিতিতে নিশ্চিত মৃত্যু হওয়া উচিত এবং যাকে বয়সের কোন এক পর্যায়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে তার পৃথিবীর সর্বোত্তম কোন হাসপাতালে সুদক্ষ ডাক্তারদের চিকিৎসাধীন থেকেও মৃত্যুবরণ করা। এসব বিষয় কি এ সত্যটিই তুলে ধরছে না যে, আমাদের জীবনও কোন এক সর্বশক্তিমান সত্তার হাতে? বাস্তব অবস্থা যখন এই যে, এক সর্বশক্তিমান সত্তা আমাদের জীবন ও মৃত্যুর ব্যাপারে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী তখন কোন নবী, অলী, ফেরেশতা কিংবা তারকা বা গ্রহ-উপগ্রহ আমাদের ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য হয় কিভাবে? তাছাড়া কোন মানব শক্তি এ পদমর্যাদা কিভাবে লাভ করলো যে, আমরা তার আইন-কানুন, তার আদেশ-নিষেধ এবং তার নিজের নির্ধারিত হালাল-হারাম বিনা বাক্যে মেনে নেব? (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, সূরা হজ্জ, টীকা ৯)
৯৯.
অর্থাৎ ওপরের বক্তব্য শোনার পরও কি তুমি একথা উপলীব্ধ করতে পারনি যে, এসব লোকের ভ্রান্তি ও ভ্রান্ত আচরণের মূল উৎস কোথায় এবং তারা কোথায় ঠোকর খেয়ে গোমরাহীর এ গভীর গর্তে নিক্ষিপ্ত হয়েছে? (প্রকাশ থাকে যে, এখানে তুমি শব্দটি দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়নি, বরং এ আয়াত ক’টি পাঠকারী ও শ্রবণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে সম্বোধন করা হয়েছে)।
১০০.
এটা হচ্ছে তাদের হোঁচট খাওয়ার মূল কারণ। তাদের কুরআন এবং আল্লাহর রসূলদের আনীত শিক্ষা না মানা এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার পরিবর্তে ঝগড়াটেপনা দিয়ে তার মোকাবেলা করা এসব মৌলিক কারণই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দিয়েছে এবং তাদের সোজা পথে আসার সমস্ত সম্ভাবনা নিঃশেষ করে দিয়েছে।
অনুবাদ: