আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আস্ সা-ফফা-ত

১৮২ আয়াত

১২১ ) সৎকর্মশীলদের আমি অনুরূপ প্রতিদানই দিয়ে থাকি।
إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُحْسِنِينَ ١٢١
১২২ ) আসলে তাঁরা আমার মু’মিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
إِنَّهُمَا مِنْ عِبَادِنَا ٱلْمُؤْمِنِينَ ١٢٢
১২৩ ) আর ইলিয়াসও অবশ্যই রসূলদের একজন ছিল। ৭০
وَإِنَّ إِلْيَاسَ لَمِنَ ٱلْمُرْسَلِينَ ١٢٣
১২৪ ) স্মরণ করো যখন সে তাঁর জাতিকে বলেছিল, “তোমরা ভয় করো না?
إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِۦٓ أَلَا تَتَّقُونَ ١٢٤
১২৫ ) তোমরা কি বা’আলকে ৭১ ডাকো এবং পরিত্যাগ করো শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহকে,
أَتَدْعُونَ بَعْلًۭا وَتَذَرُونَ أَحْسَنَ ٱلْخَـٰلِقِينَ ١٢٥
১২৬ ) যিনি তোমাদের ও তোমাদের আগের পেছনের বাপ-দাদাদের রব?”
ٱللَّهَ رَبَّكُمْ وَرَبَّ ءَابَآئِكُمُ ٱلْأَوَّلِينَ ١٢٦
১২৭ ) কিন্তু তারা তাঁর প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো কাজেই এখন নিশ্চিতভাবেই তাদেরকে শাস্তির জন্য পেশ করা হবে,
فَكَذَّبُوهُ فَإِنَّهُمْ لَمُحْضَرُونَ ١٢٧
১২৮ ) তবে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দারা ছাড়া। ৭২
إِلَّا عِبَادَ ٱللَّهِ ٱلْمُخْلَصِينَ ١٢٨
১২৯ ) আর ইলিয়াসের সম্পর্কে সুখ্যাতি আমি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে অব্যাহত রেখেছি। ৭৩
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى ٱلْـَٔاخِرِينَ ١٢٩
১৩০ ) ইলিয়াসের প্রতি সালাম। ৭৪
سَلَـٰمٌ عَلَىٰٓ إِلْ يَاسِينَ ١٣٠
৭০.
হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলের নবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কুরআন মজীদে মাত্র দু’জায়গায় তাঁর আলোচনা এসেছে। এ জায়গায় এবং সূরা আল আন’আমের ৮৫ আয়াতে। আধুনিক গবেষকগণ খৃষ্টপূর্ব ৮৭৫ থেকে ৮৫০ এর মধ্যবর্তী সময়টাকে তাঁর সময় হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি ছিলেন জিল’আদ-এর অধিবাসী (প্রাচীন যুগে জিল’আদ বলা হতো বর্তমান জর্দান রাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলীয় জিলাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ইয়ারমুক নদীর দক্ষিণে অবস্থিত এলাকাকে।) বাইবেলে তাঁকে এলিয় তিশবী (Elijah the Tishbite) নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন কাহিনী নিচে দেয়া হলোঃ

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের ইন্তেকালের পরে তাঁর পুত্র রহুব’আম এর অযোগ্যতার ফলে বনী ইসরাঈল রাজ্যে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একভাগে ছিল বাইতুল মাকদিস ও দক্ষিণ ফিলিস্তীন। এটি ছিল দাউদের পরিবারের অধিকারভুক্ত। আর উত্তরে ফিলিস্তীন সমন্বয়ে গঠিত দ্বিতীয় ভাগটিতে ইসরাঈল নামে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। পরে সামেরীয়া তার কেন্দ্রীয় স্থান হিসেবে গণ্য হয়। যদিও উভয় রাষ্ট্রের অবস্থাই ছিল দোদুল্যমান কিন্তু ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রথম থেকেই এমন মারাত্মক বিকৃতির পথে এগিয়ে চলছিল যার ফলে তার মধ্যে শিরক, মূর্তিপূজা, জুলুম, নিপীড়ন, ফাসেকী ও চরিত্রহীনতা বেড়ে চলছিল। এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন ইসরাঈলের বাদশাহ আখিয়াব (Ahab) সাইদা (বর্তমান লেবানন) এর রাজকন্যা ইজবেলকে বিয়ে করে তখন এ বিকৃতি ও বিপর্যয় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ মুশরিক রাজকন্যার সংম্পর্শে এসে আখিয়াব নিজেও মুশরিক হয়ে যায়। সে সামেরীয়ায় বা’আল--এর মন্দির ও যজ্ঞবেদী নির্মাণ চালায় এবং ইসরাঈলের শহরগুলোতে প্রকাশ্যে বা’আলের নামে বলিদানের প্রচলন করে।

এহেন সময় হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম অকস্মাক জনসম্মুখে হাজির হন। তিনি জালআদ থেকে এসে আখিয়াবকে এ মর্মে নোটিস দেন যে, তোমার পাপের কারণে এখন ইসরাঈল রাজ্যে এক বিন্দুও বৃষ্টি হবে না, এমনকি কুয়াসা ও শিশিরও পড়বে না। আল্লাহর নবীর এ উক্তি অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হলো এবং সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত বৃষ্টি একদম বন্ধ থাকলো। শেষ পর্যন্ত আখিয়াবের হুঁশ হলো। সে হযরত ইলিয়াসের সন্ধানে করে তাঁকে ডেকে পাঠালো। তিনি বৃষ্টির জন্য দোয়া করার আগে ইসরাঈলের অধিবাসীদেরকে আল্লাহ‌ রব্বুল আলামীন ও বা’আলের মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন মনে করলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি হুকুম দিলেন, একটি সাধারণ সমাবেশে বা’আলের পূজারীও এসে তার উপাস্য দেবতার নামে বলিদান করবে এবং আমিও আল্লাহ‌ রব্বুল আলামীনের নামে কুরবানী করবো। দু’টি কুরবানীর মধ্য থেকে মানুষের হাতে লাগানো আগুন ছাড়াই অদৃশ্য আগুন দ্বারা যেটিই ভস্মীভূত হবে তার উপাস্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়ে যাবে। আখিয়াব একথা মেনে নিল। ফলে কারমাল(Carmel) পর্বতে বা’আলের সাড়ে আটশো পূজারী একত্র হলো। ইসরাঈলীদের সাধারণ সমাবেশে তাদের সাথে হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালামের মোকাবিলা হলো। এ মোকাবিলায় বা’আল পূজকরা পরাজিত হলো। হযরত ইলিয়াস সবার সামনে একথা প্রমাণ করে দিলেন যে, বা’আলা একটি মিথ্যা খোদা এবং আসল খোদা হচ্ছে সেই এক ও একক খোদা যাঁর পক্ষ থেকে তিনি নবী নিযুক্ত হয়ে এসেছেন। এরপর হযরত ইলিয়াস সেই জনসমাবেশে বা’আলের পূজারীদের হত্যা করান এবং তারপর বৃষ্টির জন্য দোয়া করেন। তাঁর দোয়া সঙ্গে সঙ্গেই কবুল হয়ে যায় এবং সমগ্র ইসরাঈল রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়।

কিন্তু এসব মু’জিযা দেখেও স্ত্রৈণ আখিয়াব তার মূর্তিপূজক স্ত্রীর গোলামী থেকে বের হয়ে আসেনি। তার স্ত্রী ইজবেল হযরত ইলিয়াসের দুশমন হয়ে গেলো এবং সে কসম খেয়ে বসলো, যেভাবে বা’আলের পূজারীদের হত্যা করা হয়েছে ঠিক অনুরূপভাবেই হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালামকেও হত্যা করা হবে। এ অবস্থায় ইলিয়াসকে দেশত্যাগ করতে হলো। কয়েক বছর তিনি সিনাই পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নিলেন। এ সবময় তিনি আল্লাহর কাছে যে ফরিয়াদ করেছিলেন বাইবেল তাকে এভাবে উদ্ধৃত করছেঃ

“আমি বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভূর পক্ষে অতিশয় উদ্যোগী হইয়াছি ; কেননা, ইস্রায়েল সন্তানগণ তোমার নিয়ম ত্যাগ করিয়াছে, তোমার যজ্ঞবেদি সকল উৎপাটিন করিয়াছে ও তোমার ভাববাদিগণকে খড়গ দ্বারা বধ করিয়াছে ; আর আমি কেবল একা আমিই অবশিষ্ট রহিলাম, আর তাহারা আমার প্রাণ লইতে চেষ্টা করিতেছে।” [ ১---রাজাবলি ১৯: ১০ ]

এ সময় বায়তুল মাকদিসের ইহুদী শাসক ইয়াহুরাম (Jehoram) ইসরাঈলের বাদশাহ আখিয়াবের মেয়েকে বিয়ে করলো এবং ইতিপূর্বে ইসরাঈলে যেসব বিকৃতি বিস্তার লাভ করেছিল এ মুশরিক শাহজাদীর প্রভাবে ইয়াহুদীয়া রাষ্ট্রেও তা ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। হযরত ইলিয়াস এখানেও নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করলেন এবং ইয়াহুরামকে একটি পত্র লিখলেন। বাইবেলে এ পত্র এভাবে উদ্ধৃত হয়েছেঃ

“তোমার পিতা দাউদের ঈশ্বর সদাপ্রভূ এইভাবে এই কথা কহেন, তুমি আপন পিতা যিহোশাফটের পথে ও যিহূদা-রাজ আসার পথে গমন কর নাই; কিন্তু ইস্রায়েলের রাজাদের পথে গমন করিয়াছ এবং আহাব-কুলের ক্রিয়ানুসারে যিহূদাকে ও যিরূশালেম নিবাসীদিগকে ব্যভিচার করাইয়াছ; আর তোমা হইতে উত্তম যে তোমার পিতৃকুলজাত ভ্রাতৃগণ, তাহাদিগকে বধ করিয়াছ ; এই কারণ দেখ, সদাপ্রভূ তোমার প্রজাদিগকে, তোমার সন্তানদিগকে, তোমার ভার্য্যাদিগকে ও তোমার সমস্ত সম্পত্তি মহা আঘাতে আহত করিবেন। আর তুমি অন্ত্রের পীড়ায় অতিশয় পীড়িত হইবে, শেষে সেই পীড়ায় তোমার অন্ত্র দিন দিন বাহির হইয়া পড়িবে।” [ ২---রাজাবলি ২১: ১২-১৫ ]

এ পত্রে হযরত ইলিয়াস যা কিছু বলেছিলেন তা পূর্ণ হলো। প্রথমে ইয়াহুরামের রাজ্য বহিরাগত আক্রমণকারীদের দ্বারা বিধ্বস্ত হলো এবং তার স্ত্রীদেরকে পর্যন্ত শত্রুরা পাকড়াও করে নিয়ে গেলো। তারপর সে নিজে অন্ত্ররোগে মারা গেলো। কয়েক বছর পর হযরত ইলিয়াস আবার ইসরাঈলে পৌঁছে গেলেন। তিনি আখিয়াব ও তার পুত্র আখযিয়াহকে সত্য সঠিক পথে আনার জন্য লাগাতার প্রচেষ্টা চালালেন। কিন্তু সামেরীয়ার রাজ পরিবারে যে পাপ একবার জেঁকে বসেছিল তা আর কোনভাবেই বের হলো না। শেষে হযরত ইলিয়াসের বদদোয়ায় আখিয়াবের পরিবার ধ্বংস হয়ে গেলো এবং তারপর আল্লাহ‌ তাঁর নবীকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিলেন। এ ঘটনাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য বাইবেলের নিম্নোক্ত অধ্যায়গুলো দেখুনঃ [ ১--রাজাবলি, অধ্যায় ১৭, ১৮, ১৯, ২১ ; ২--রাজাবলি অধ্যায় ১ ও ২ এবং ২--বংশাবলি, অধ্যায় ২১ ]

৭১.
বা’আল-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছ প্রভু, সরদার ও মালিক। স্বামীর প্রতিশব্দ হিসেবেও এ শব্দটি বলা হতো এবং কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে এ শব্দটি এ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন সূরা বাকারার ২২৮, সূরা নিসার ১২৭, সূরা হূদের ৭২ এবং সূরা নূরের ৩১ আয়াতসমূহ। কিন্তু প্রাচীন যুগে সিরিয়ার বিভিন্ন ‘জাতি-গোষ্ঠী’ এ শব্দটিকে উপাস্য ও প্রভু অর্থে ব্যবহার করতো এবং তারা একটি বিশেষ দেবতাকে বা’আল নামে চিহ্নিত করে রেখেছিল। বিশেষ করে লেবাননের ফনিকি সম্প্রদায়ের (Phoenicians) সবচেয়ে বড় পুরুষ দেবতা ছিল বা’আল এবং তার স্ত্রী আশারাত(Ashtoreth) ছিল তাদের সবচেয়ে বড় দেবী। বা’আল বলতে সূর্য বা বৃহস্পতি গ্রহ বুঝায় এবং আশারাত বলতে চাঁদ বা শুক্রগ্রহ বুঝায়। এ ব্যাপারে গবেষক ও বিশষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। যাই হোক না কেন একথা ঐতিহাসিক দিক দিয়ে প্রমাণিত যে ব্যবিলন থেকে নিয়ে মিসর পর্যন্ত সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এলাকায় বা’আল পূজা বিস্তার লাভ করেছিল। বিশেষ করে লেবানন সিরিয়া ও ফিলিস্তীনের মুশরিক জাতিগুলো আপাদমস্তক এর মধ্যে ডুবে ছিল। বনী ইসরাঈল যখন মিসর থেকে বের হবার পর ফিলিস্তীন ও পূর্ব জর্দানে এসে বসবাস শুরু করলো এবং তাওরাতের কঠোর নিষেধাজ্ঞাগুলোর বিরুদ্ধাচরণ করে তারা ঐ মুশরিক জাতিগুলোর সাথে বিয়ে শাদী ও সামাজিক সম্পর্ক কায়েম করতে শুরু করলো তখন তাদের মধ্যেও এ রোগ বিস্তার লাভ করতে লাগলো। বাইবেলের বর্ণনা মতে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের প্রথম খলিফা হযরত ইউশা’ বিন নূনের ইন্তেকালের পরপরই বনী ইসরাঈলের মধ্যে এ নৈতিক ও ধর্মীয় অবক্ষয়ের সূচনা হয়ে গিয়েছিলঃ

“ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভূর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিতে লাগিল; এবং বাল দেবগনের সেবা করিতে লাগিল।-------তাহারা সদাপ্রভূকে ত্যাগ করিয়া বাল দেবের ও অষ্টারেৎ দেবীদের সেবা করিত।” [বিচারকর্তৃগণ ২: ১১-১৩]

“ইস্রায়েল-সন্তানগণ কানানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিযীয়, হিব্বীয় ও যিবূযীয়গণের মধ্যে বসতি করিল; আর তাহারা তাহাদের কন্যাগণকে বিবাহ করিত, তাহাদের পুত্রগণের সহিত আপন আপন কন্যাদের বিবাহ দিত ও তাহাদের দেবগণের সেবা করিত।” [ বিচারকর্তৃগণ ৩: ৫-৬ ]

সে সময় ইসরাঈলীদের মধ্যে বা’আল পূজার এত বেশী প্রচলন হয়ে পড়েছিল যে, বাইবেলের বর্ণনা মতে তাদের একটি জনপদে প্রকাশ্যে বা’আলের যজ্ঞবেদী নির্মিত হয়েছিল এবং সেখানে বলিদান করা হতো। আল্লাহর অনুগত জনৈক ইসরাঈলী এটা বরদাশত করতে পারলো না। সে রাতের বেলা চুপিচুপি যজ্ঞবেদীটি ভেঙে ফেললো। পরদিন জনতার একটি বিরাট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। তারা শিরকের এ আড্ডাখানা উচ্ছেদকারী ব্যক্তির হত্যার দাবী করতে লাগলো। (বিচারকর্তৃগণ ৬: ২৫-৩২) শেষ পর্যন্ত এ অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটালেন হযরত সামুয়েল, তালূত এবং হযরত দাউদ ও সুলাইমান আলাইহিমুস সালাম। তাঁরা কেবল বনী ইসরাঈলেরই সংস্কার করলেন না, নিজেদের রাজ্যেও শিরক ও মূর্তিপূজা নির্মূল করলেন। কিন্তু হযরত সুলাইমানের মৃত্যুর পর এ ফিতনাটি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো এবং বিশেষ করে উত্তর ফিলিস্তীনের ইসরাঈল রাষ্ট্রটি বা’আল পূজার বন্যায় বিপুল স্রোতে ভেসে গেলো।

৭২.
অর্থাৎ এ শাস্তির বাইরে একমাত্র তারাই থাকবে যারা হযরত ইলিয়াসের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেনি এবং যাদেরকে আল্লাহ‌ এ জাতির মধ্য থেকে তাঁর বন্দেগীর জন্য বাছাই করে নিয়েছিলেন।
৭৩.
বনী ইসরাঈল হযরত ইলিয়াসকে তাঁর জীবদ্দশায় যেভাবে নির্যাতিত করেছিল তার কাহিনী ওপরে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু পরে তারা তাঁর এমনই ভক্তে-অনুরক্তে পরিণত হয় যে, হযরত মূসার (আ) পরে অতি অল্প লোককেই তারা তাঁর চেয়ে মহিমান্বিত বলে মেনে নিয়ে থাকবে। তাদের সেখানে একথা ছড়িয়ে পড়ে যে, হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালামকে একটি ঘূর্ণিঝড়ের মাধ্যমে জীবিত অবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয় (২--রাজাবলি, ২ অধ্যায়) এবং তিনি আবার দুনিয়ায় আসবেন। বাইবেলের মালাথি পুস্তকে বলা হয়েছেঃ

“দেখ সদাপ্রভূর সেই মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন আসিবার পূর্বে আমি তোমাদের নিকট এলিয় ভাবাদীকে প্রেরণ করিব।”(৪: ৫)

হযরত ইয়াহইয়া ও ঈসা আলাইহিমাস সালামের আগমনকালে ইহুদিরা সাধারণত তিনজন আগমণকারীর প্রতীক্ষারত ছিল। তাদের একজন হচ্ছেন হযরত ইলিয়াস (আ) ও দ্বিতীয়জন হযরত ঈসা মসীহ (আ) এবং তৃতীয়জন হচ্ছেন “এ নবী” (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। যখন হযরত ইয়াহিয়ার (আ) নবুওয়াত শুরু হয় এবং তিনি লোকদেরকে সত্যধর্মে দীক্ষিত করতে থাকেন তখন ইহুদীদের ধর্মীয় নেতারা তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, আপনি কি মসীহ? তিনি জবাব দেন, না। আবার জিজ্ঞেস করে, আপনি কি ইলিয়াহ? তিনি জবাব দেন না। তারপর জিজ্ঞেস করে, আপনি কি “সেই নবী? ” তিনি জবাব দেন আমি সেই নবীও নই। তখন তারা বলে, আপনি যদি মসীহ না হন ; ইলিয়াহ না হন এবং সেই নবী না হন, তাহলে আপনি সত্যধর্মে দীক্ষা দিচ্ছেন কেন? (যোহন ১: ১৯-২৬) তারপর কিছুকাল পরে যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের তৎপরতা ব্যাপকতা লাভ করলো তখন ইহুদীরা মনে করলো, সম্ভবত ইলিয়াহ নবী এসে গেছেন। (মার্ক ৬: ১৪-১৫) হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সাহাবীদের মধ্যে এ ধারণা বিস্তার লাভ করেছিল যে, ইলিয়াহ নবীর আগমন ঘটবে। কিন্তু হযরত ঈসা (আ) একথা বলে তাদের ভুল ধারণা দূর করে দেন যে, “ইলিয়াহ তো এসে গেছেন, লোকেরা তাঁকে চিনেনি এবং তাঁর সাথে যা ইচ্ছা ব্যবহার করেছে।” এর ফলে হযরত ঈসার (আ) সাহাবীগণ জানতে পারেন, আগমনকারী ছিলেন হযরত ইয়াহইয়া, আটশো বছর পূর্বে অতিক্রান্ত হযরত ইলিয়াস নন।” (মথি ১১: ১৪ এবং ১৭: ১০-১৩)

৭৪.
মূল শব্দগুলো হচ্ছে سَلَامٌ عَلَى إِلْ يَاسِينَ এ সম্পর্কে কোন কোন মুফাসসির বলেন, এটি হযরত ইলিয়াসের দ্বিতীয় নাম। যেমন হযরত ইবরাহীমের দ্বিতীয় নাম ছিল আব্রাহাম। আর অন্য কোন কোন মুফাসসিরের মতে আরববাসীদের মধ্যে ইবরানী (হিব্রু) ভাষায় শব্দাবলীর বিভিন্ন উচ্চারণের প্রচলন ছিল। যেমন মীকাল ও মীকাইল এবং মীকাইন একই ফেরেশতাকে বলা হতো। একই ঘটনা ঘটেছে হযরত ইলিয়াসের নামের ব্যাপারেও। স্বয়ং কুরআন মজীদে একই পাহাড়কে একবার “তূরে সাহনা” বলা হচ্ছে এবং অন্যত্র বলা হচ্ছে, “তূরে সীনীন।”
অনুবাদ: