৩১ ) এ কাফেররা বলে, “আমার কখখনো এ কুরআন মানবো না এবং এর পূর্বে আগত কোন কিতাবকেও স্বীকার করবো না।” ৫০ হায়! যদি তোমরা দেখো এদের তখনকার অবস্থা যখন এ জালেমরা নিজেদের রবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। সে সময় এরা একে অন্যকে দোষারোপ করবে। যাদেরকে দুনিয়ায় দাবিয়ে রাখা হয়েছিল তারা ক্ষমতাগর্বীদেরকে বলবে, “যদি তোমরা না থাকতে তাহলে আমরা মু’মিন হতাম।” ৫১
وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَن نُّؤْمِنَ بِهَـٰذَا ٱلْقُرْءَانِ وَلَا بِٱلَّذِى بَيْنَ يَدَيْهِ ۗ وَلَوْ تَرَىٰٓ إِذِ ٱلظَّـٰلِمُونَ مَوْقُوفُونَ عِندَ رَبِّهِمْ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ ٱلْقَوْلَ يَقُولُ ٱلَّذِينَ ٱسْتُضْعِفُوا۟ لِلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟ لَوْلَآ أَنتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِينَ ٣١
৩২ ) ক্ষমতাগর্বীরা সেই দমিত লোকদেরকে জবাবে বলবে, “তোমাদের কাছে যে সৎপথের দিশা এসেছিল তা থেকে কি আমরা তোমাদেরকে রুখে দিয়েছিলাম? বরং তোমরা নিজেরাই তো অপরাধী ছিলে।” ৫২
قَالَ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟ لِلَّذِينَ ٱسْتُضْعِفُوٓا۟ أَنَحْنُ صَدَدْنَـٰكُمْ عَنِ ٱلْهُدَىٰ بَعْدَ إِذْ جَآءَكُم ۖ بَلْ كُنتُم مُّجْرِمِينَ ٣٢
৩৩ ) সেই দমিত লোকেরা ক্ষমতাগর্বীদেরকে বলবে, “না, বরং দিবারাত্রের চক্রান্ত ছিল যখন তোমরা আমাদের বলতে আমরা যেন আল্লাহ কুফরী করি এবং অন্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ উপস্থাপন করি।” ৫৩ শেষ পর্যন্ত যখন তারা আযাব দেখবে তখন মনে মনে পস্তাতে থাকবে এবং আমি এ অস্বীকারকারীদের গলায় বেড়ী পরিয়ে দেবো। লোকেরা যেমন কাজ করেছিল তেমনি প্রতিদান পাবে, এছাড়া আর কোন প্রতিদান কি তাদেরকে দেয়া যেতে পারে?
وَقَالَ ٱلَّذِينَ ٱسْتُضْعِفُوا۟ لِلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟ بَلْ مَكْرُ ٱلَّيْلِ وَٱلنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُونَنَآ أَن نَّكْفُرَ بِٱللَّهِ وَنَجْعَلَ لَهُۥٓ أَندَادًۭا ۚ وَأَسَرُّوا۟ ٱلنَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا۟ ٱلْعَذَابَ وَجَعَلْنَا ٱلْأَغْلَـٰلَ فِىٓ أَعْنَاقِ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ۚ هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ٣٣
৩৪ ) কখনো এমনটি ঘটেনি যে, আমি কোন জনপদে কোন সতর্ককারী পাঠিয়েছি এবং সেই জনপদের সমৃদ্ধিশালী লোকেরা একথা বলেনি যে, তোমরা যে বক্তব্য নিয়ে এসেছ আমরা তা মানি না। ৫৪
وَمَآ أَرْسَلْنَا فِى قَرْيَةٍۢ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَآ إِنَّا بِمَآ أُرْسِلْتُم بِهِۦ كَـٰفِرُونَ ٣٤
৩৫ ) তারা সবসময় একথাই বলেছে, আমরা তোমাদের চাইতে বেশী সম্পদ ও সন্তানের অধিকারী এবং আমরা কখখনো শাস্তি পাবো না। ৫৫
وَقَالُوا۟ نَحْنُ أَكْثَرُ أَمْوَٰلًۭا وَأَوْلَـٰدًۭا وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ ٣٥
৩৬ ) হে নবী! তাদেরকে বলে দাও, আমার রব যাকে চান প্রশস্ত রিযিক দান করেন এবং যাকে চান মাপাজোকা দান করেন কিন্তু বেশীর ভাগ লোক এর প্রকৃত তাৎপর্য জানে না। ৫৬
قُلْ إِنَّ رَبِّى يَبْسُطُ ٱلرِّزْقَ لِمَن يَشَآءُ وَيَقْدِرُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ٣٦
৩৭ ) তোমাদের এই ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন নয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে; হ্যাঁ, তবে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে। ৫৭ এরাই এমন লোক যাদের জন্য রয়েছে তাদের কর্মের দ্বিগুণ প্রতিদান এবং তারা সুউচ্চ ইমারতসমূহে নিশ্চিন্তে-নিরাপদে থাকবে। ৫৮
وَمَآ أَمْوَٰلُكُمْ وَلَآ أَوْلَـٰدُكُم بِٱلَّتِى تُقَرِّبُكُمْ عِندَنَا زُلْفَىٰٓ إِلَّا مَنْ ءَامَنَ وَعَمِلَ صَـٰلِحًۭا فَأُو۟لَـٰٓئِكَ لَهُمْ جَزَآءُ ٱلضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوا۟ وَهُمْ فِى ٱلْغُرُفَـٰتِ ءَامِنُونَ ٣٧
৩৮ ) যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য প্রচেষ্টা চালায় তারা শাস্তি ভোগ করবে।
وَٱلَّذِينَ يَسْعَوْنَ فِىٓ ءَايَـٰتِنَا مُعَـٰجِزِينَ أُو۟لَـٰٓئِكَ فِى ٱلْعَذَابِ مُحْضَرُونَ ٣٨
৩৯ ) হে নবী! তাদেরকে বলো, “আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান মুক্ত হস্তে রিযিক দান করেন এবং যাকে চান মাপাজোকা দেন। ৫৯ যা কিছু তোমরা ব্যয় করে দাও তার জায়গায় তিনি তোমাদের আরো দেন, তিনি সব রিযিকদাতার চেয়ে ভাল রিযিকদাতা।” ৬০
قُلْ إِنَّ رَبِّى يَبْسُطُ ٱلرِّزْقَ لِمَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ وَيَقْدِرُ لَهُۥ ۚ وَمَآ أَنفَقْتُم مِّن شَىْءٍۢ فَهُوَ يُخْلِفُهُۥ ۖ وَهُوَ خَيْرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ٣٩
৪০ ) আর যেদিন তিনি সমস্ত মানুষকে একত্র করবেন তারপর ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, “এরা কি তোমাদেরকেই পূজা করত?” ৬১
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًۭا ثُمَّ يَقُولُ لِلْمَلَـٰٓئِكَةِ أَهَـٰٓؤُلَآءِ إِيَّاكُمْ كَانُوا۟ يَعْبُدُونَ ٤٠
৫০.
এখানে আরবের কাফেরদের কথা বলা হয়েছে, যারা কোন আসমানী কিতাবের কথা স্বীকার করতো না।
৫১.
অর্থাৎ সাধারণ মানুষ, যারা আজ দুনিয়ায় নিজেদের নেতা, সরদার, পীর ও শাসকদের অন্ধ অনুসারী এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন উপদেশদাতার কথায় কর্ণপাত করতে প্রস্তুত নয়, তারাই যখন প্রকৃত সত্য কি ছিল এবং তাদের নেতারা তাদেরকে কি বুঝাচ্ছিল তা স্বচক্ষে দেখবে এবং যখন তারা একথা জানতে পারবে যে, এ নেতাদের অনুসরণ তাদেরকে এ পরিণতির সম্মুখীন করে দিচ্ছে তখন তারা নিজেদের এসব মনীষীদের বিরুদ্ধে মারমুখো হবে এবং চিৎকার করে বলবে, হতভাগার দল! তোমরাই তো আমাদেরকে গোমরাহ করেছ। আমাদের সমস্ত বিপদের জন্য তোমরাই দায়ী। তোমরা আমাদের পথভ্রষ্ট না করলে আমরা আল্লাহ ও রসূলের কথা মেনে নিতাম।
৫২.
অর্থাৎ তারা বলবে, আমাদের কাছে এমন কোন শক্তি ছিল না যার সাহায্যে আমরা মাত্র গুটিকয় মানুষ তোমাদের মতো কোটি কোটি মানুষকে জোরপূর্বক নিজেদের আনুগত্য করতে বাধ্য করতে পারতাম। যদি তোমরা ঈমান আনতে চাইতে তাহলে আমাদের সরদারি, নেতৃত্ব ও শাসন কর্তৃত্বের সিংহাসন উল্টে ফেলে দিতে পারতে। আমাদের সেনাদল তো তোমরাই ছিলে। আমাদের শক্তি ও সম্পদের উৎস তো ছিল তোমাদেরই হাতে। তোমরা নজরানা ও ট্যাক্স না দিলে তো আমরা বিত্তহীনই থাকতাম। তোমরা আমাদের হাতে বাইয়াত না করলে আমাদের পীরালী একদিনও চলতো না। তোমরা জিন্দাবাদের শ্নোগান না দিলে কেউ আমাদের কথা জিজ্ঞেসও করতো না। তোমরা আমাদের সৈন্য হয়ে সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত না হলে একজন মানুষের অপরও আমাদের প্রভাব বিস্তৃত হতে পারতো না। এখন একথা মেনে নিচ্ছো না কেন যে, আসলে রসূলগণ তোমাদের সামনে যে পথ পেশ করে ছিলেন তোমরা নিজেরাই তার ওপর চলতে চাচ্ছিলে না? তোমরা ছিলে নিজেদের স্বার্থ ও প্রবৃত্তির দাস। আর তোমাদের প্রবৃত্তির এ চাহিদা রসূলদের দেখানো তাকওয়ার পরিবর্তে আমাদের এখানেই পূর্ণ হতো। তোমরা হালাল ও হারামের পরোয়া না করে দুনিয়াবী আয়েশ ও আরামের প্রত্যাশী ছিলে এবং আমাদের কাছেই তোমরা তার সন্ধান পাচ্ছিলে। তোমরা এমন সব পীরের সন্ধানে ছিলে যারা তোমাদের সব রকমের পাপ কাজ করার ব্যাপক অনুমতি দিতো এবং সামান্য কিছু নজরানা নিয়ে তোমাদের পাপ মোচনের দায়িত্ব নিজেদের মাথায় তুলে নিতো। তোমরা এমনসব পণ্ডিত ও মৌলবীদের সন্ধানে ফিরছিলে যারা প্রত্যেকটি শিরক ও বিদ’আত এবং তোমাদের প্রত্যেকটি মনের মতো জিনিসকে প্রকৃত সত্য প্রমাণ করে তোমাদেরকে খুশী ও তোমাদের স্বার্থ উদ্ধার করে দিতো। তোমাদের এমনসব জালিয়াতের প্রয়োজন ছিল যারা আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তিত করে তোমাদের প্রবৃত্তির কামনা অনুযায়ী একটি নতুন দ্বীন তৈরি করে দিতে পারতো। তোমাদের এমন নেতার প্রয়োজন ছিল যারা পরকাল সমৃদ্ধ হোক বা উৎসন্নে যাক তার পরোয়া না করে যে কোনভাবেই হোক না কেন তোমাদের দুনিয়াবী স্বার্থ উদ্ধার করে দিতে পারলেই যথেষ্ট। তোমাদের এমন সব শাসকের প্রয়োজন ছিল যারা নিজেরাই হবে অসচ্চরিত্র এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তোমরা সব রকমের গোনাহ ও অসৎ কাজ করার অবাধ সুযোগ লাভ করবে। এভাবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান সমান লেনদেনের কথা হয়েছিল। এখন তোমরা এ কেমন ভড়ং সৃষ্টি করে চলেছো, যেন তোমরা বড়ই নিরপরাধ এবং আমরা জোর করে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম।
৫৩.
অন্যকথায় এ জনতার জবাব হবে, তোমরা এ দায়িত্বের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সমান অংশীদার করছো কেমন করে? তোমাদের কি মনে আছে, তোমরা চালবাজী, প্রতারণা ও মিথ্যা প্রচারণার কেমন মোহময় যাদু সৃষ্টি করে রেখেছিলে এবং রাতদিন আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের ফাঁদে আটকাবার জন্য কেমন সব পদক্ষেপ নিয়েছিলে? তোমরা আমাদের সামনে দুনিয়া পেশ করেছিলে এবং আমরা তার জন্য জান দিয়ে দিলাম, ব্যাপারতো মাত্র এতটুকুই ছিল না বরং তোমরা রাতদিনের প্রতারণা ও চালাকির মাধ্যমে আমাদেরকে বেকুব বানাচ্ছিলে এবং তোমাদের প্রত্যেক শিকারী প্রতিদিন একটি নতুন জাল তৈরি করে নানা ছলচাতুরী ও কলা-কৌশলের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদেরকে তাতে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিলে, এটাও ছিল বাস্তব ঘটনা।
কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে নেতা ও পীরদের এই বিবাদের উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য নিম্নোক্ত স্থানগুলো দেখুনঃ আল আ’রাফ, ৩৮-৩৯; ইবরাহীম, ২১; আল কাসাস, ৬৩; আল আহযাব, ৬৬-৬৮; আল মু’মিন, ৪৭-৪৮ এবং হা মীম আস্ সাজদাহ, ২৯ আয়াত।
৫৪.
একথা কুরআন মজীদের বহুস্থানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আম্বিয়া (আ) এর দাওয়াতকে সর্বপ্রথম ও সবার আগে রুখে দাঁড়াতো সমাজের সচ্ছল শ্রেণী, যারা অর্থ-বিত্ত, সহায়-সম্পদ ও কর্তৃত্ব-ক্ষমতার অধিকারী ছিল। দৃষ্টান্তস্বরূপ নিম্নোক্ত স্থানগুলো দেখুনঃ আল আন’আম, ১২৩; আল আ’রাফ, ৬০, ৬৬, ৭৫, ৮৮, ৯০; হুদ, ২৭; বনী ইসরাঈল, ১৬; আর মু’মিনূন, ২৪, ৩৩ থেকে ৩৮, ৪৬, ৪৭ এবং আয্ যুখরুফ, ২৩ আয়াত।
৫৫.
তাদের যুক্তি ছিল, আমরা তোমাদের চেয়ে আল্লাহর বেশী প্রিয় ও পছন্দনীয় লোক। তাইতো তিনি আমাদের এমন নিয়ামত দান করেছেন যা থেকে তোমরা বঞ্চিত অথবা কমপক্ষে আমাদের তুলনায় নিম্ন পর্যায়ের। আল্লাহ যদি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট না হয়ে থাকতেন, তাহলে আমাদের শানশওকত ও অর্থ-বিত্ত কেনই বা দিলেনঃ এখন আল্লাহ এখানে তো আমাদের প্রতি অঢেল অনুগ্রহ বর্ষণ করছেন আর আখেরাতে আমাদেরকে শাস্তি দেবেন, একথা আমরা কেমন করে মেনে নিতে পারি! শাস্তি দিলে তাদেরকেই দেবেন যারা এখানে তাঁর অনুগ্রহ বঞ্চিত হয়েছে।
কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে দুনিয়া পূজারীদের এ বিভ্রান্তির উল্লেখ করে তা খণ্ডন করা হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ নিন্মোক্ত স্থানগুলো দেখুনঃ আল বাকারাহ ১২৬, ২১২; তাওবা ৫৫, ৬৯; হুদ ৩, ২৭ ;আর রা’দ ২৬; আল কাহফ, ৩৪-৪৩; মারয়াম, ৭৩-৭৭;তা-হা, ১৩১; আল মু’মিনূন, ৫৫-৬১; আশ শু’আরা, ১১১; আল কাসাস, ৭৬-৮৩; আল রূম, ৯; আল মুদ্দাসসির, ১১-২৬ এবং আল ফাজর, ১৫-২০ আয়াত।
৫৬.
অর্থাৎ দুনিয়ায় রিযিক বন্টনের ব্যবস্থা যে জ্ঞান, কৌশল ও কল্যাণ বিধানের ওপর প্রতিষ্ঠিত তা তারা অনুধাবন করে না। ফলে তারা এ বিভ্রান্তির শিকার হয়ে পড়ে যে, আল্লাহ যাকে প্রশস্ত রিযিক দান করেন সে তাঁর প্রিয়পাত্র এবং যার রিযিক তিনি সংকীর্ণ করে দেন সে তাঁর গযবের মুখোমুখি হয়েছে। অথচ কোন ব্যক্তি সামান্য চোখ মেলে তাকালে দেখতে পারে, অনেক সময় বড়ই নোংরা ও ভয়ংকর চরিত্রের লোকেরা বিত্ত ও সম্পদশালী হয়েছে এবং আয়েশী জীবন যাপন করছে, পক্ষান্তরে অনেক সৎকর্মশীল ভদ্রলোক, যাদের চরিত্র গুণ সবার স্বীকৃতি পেয়েছে, তারা আর্থিক অনটনে জীবন যাপন করছে। এখন কোন্ বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলতে পারে, আল্লাহ এ পাক-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী লোকদের কে অপছন্দ করেন এবং দুষ্ট প্রকৃতির শয়তান চরিত্রের লোকদেরকেই ভালবাসেন?
৫৭.
এর দু’টি অর্থ হতে পারে এবং দু’টিই সঠিক। এক, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর নিকটবর্তী করার মতো জিনিস নয়। বরং ঈমান ও সৎকাজ মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। দুই, সম্পদ ও সন্তান একমাত্র এমন সৎ মু’মিনের জন্য আল্লাহ নৈকট্য লাভের মাধ্যমে পরিণত হতে পারে, যে নিজের সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং নিজের সন্তানকে উত্তম শিক্ষা ও অনুশীলন দান করে তাকে আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী ও সৎকর্মশীল করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে।
৫৮.
এর মধ্যে এ বিষয়ের প্রতি একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে যে, তাঁর এ নিয়ামত হবে অবিনশ্বর এবং এর প্রতিদানের ধারাবাহিকতা কোনদিনই ছিন্ন বা ক্ষুণ্ণ হয়ে যাবে না। কারণ যে আয়েশ আরামের কখনো খতম হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে, মানুষ পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে তা উপভোগ করতে পারে না। এ ব্যাপারে সবসময় ভয় থাকে কি জানি কখন এসব কিছু ছিনিয়ে নেয়া হবে।
৫৯.
এ বিষয়টিকে পুনরুক্তি সহকারে বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একথার ওপর জোর দেয়া যে, রিযিক কম বেশী হওয়ার বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পর্কিত, তার সন্তুষ্টির সাথে নয়। আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে ভাল-মন্দ সব রকমের মানুষ রিযিক লাভ করছে। যারা আল্লাহকে মেনে নিয়েছে তারাও রিযিক পাচ্ছে এবং যারা অস্বীকার করেছে তারাও। প্রচুর রিযিক লাভ রিযিক লাভকারীর আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবার কথা প্রমাণ করে না। আবার অন্যদিকে কম রিযিক লাভ বা রিযিকের অভাব অভাবগ্রস্তের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত হবার আলামত পেশ করে না। আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী একজন জালেম এবং বেঈমান লোকও আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়। অথচ জুলুম ও বেঈমানী আল্লাহ পছন্দ করেন না। পক্ষান্তরে আল্লাহরই ইচ্ছার অধীনে একজন সত্যাশ্রয়ী ও ঈমানদার ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও কষ্ট সহ্য করতে থাকে অথচ আল্লাহ সত্যবাদিতা ও ঈমানদারী পছন্দ করেন। কাজেই বস্তুগত স্বার্থ ও মুনাফা অর্জনকে যে ব্যক্তি ভালো ও মন্দের মাপকাঠি গণ্য করে সে বিরাট ভুলের শিকার ও পথভ্রষ্ট। আসল জিনিস হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং এটি অর্জিত হয় এমন সব নৈতিক গুণাবলীর মাধ্যমে যা আল্লাহ পছন্দ করেন। এ গুণাবলীর সাথে কেউ যদি দুনিয়ার নিয়ামতগুলোও লাভ করে, তাহলে নিঃসন্দেহে তা হবে আল্লাহর দান এবং এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি নৈতিক গুণাবলীর দিক দিয়ে আল্লাহর বিদ্রোহী ও নাফরমান বান্দা হয়ে থাকে এবং এ সঙ্গে তাকে দুনিয়ার নিয়ামতও দান করা হয়, তাহলে তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সে কঠিন জবাবদিহি ও নিকৃষ্টতম শাস্তি ভোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
৬০.
রিযিকদাতা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, দাতা এবং এ ধরনের আরো বহু গুণ রয়েছে, যা আসলে আল্লাহরই গুণ কিন্তু রূপক অর্থে বান্দাদের সাথেও সংশ্লিষ্ট করা হয়। যেমন আমরা এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলি, সে অমুক ব্যক্তির রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। অথবা সে এ উপহারটি দিয়েছে। কিংবা সে অমুক জিনিসটি তৈরি করেছে বা উদ্ভাবন করেছে। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ নিজের জন্য ‘উত্তম রিযিক দাতা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ যাদের সম্পর্কে তোমরা ধারণা করে থাকো যে, তারা রুজি দান করে থাকে তাদের সবার চেয়ে আল্লাহ উত্তম রিযিকদাতা।
৬১.
প্রাচীনকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক যুগে মুশরিকরা ফেরশতাদেরকে দেব-দেবী মনে করে তাদের মূর্তি বানিয়ে পূজা করে আসছে। বৃষ্টির দেবতা, বিজলীর দেবতা, বায়ুর দেবতা, ধন-সম্পদের দেবী, মৃত্যু ও ধ্বংসের দেবী ইত্যাদি প্রত্যেকটি জিনিসের পৃথক দেবতা বা দেবীর মূর্তি তারা প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, কিয়ামতের দিন এই ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমরাই কি এদের উপাস্য হয়েছিলে? নিছক অবস্থা অনুসন্ধান করা এ প্রশ্নের উদ্দেশ্য নয় বরং এর মধ্যে এই অর্থও নিহিত রয়েছে যে, তোমরা কি তাদের পূজা-অর্চনায় রাজি ছিলে? কিয়ামতে এ প্রশ্ন কেবল ফেরেশতাদেরকেই করা হবে না বরং দুনিয়ায় তাদের ইবাদাত ও পূজা করা হয় তাদেরকেও করা হবে। তাই সূরা ফুরকানে বলা হয়েছেঃ
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَقُولُ أَأَنْتُمْ أَضْلَلْتُمْ عِبَادِي هَؤُلَاءِ أَمْ هُمْ ضَلُّوا السَّبِيلَ
“যেদিন আল্লাহ এদেরকে এবং যেসব সত্তার এরা ইবাদাত করতো তাদের সবাইকে একত্র করবেন তারপর জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি আমার এ বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলে, না এরা নিজেরাই সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছিল? ” (১৭ আয়াত)