أَشِحَّةً عَلَيْكُمْ ۖ فَإِذَا جَآءَ ٱلْخَوْفُ رَأَيْتَهُمْ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ تَدُورُ أَعْيُنُهُمْ كَٱلَّذِى يُغْشَىٰ عَلَيْهِ مِنَ ٱلْمَوْتِ ۖ فَإِذَا ذَهَبَ ٱلْخَوْفُ سَلَقُوكُم بِأَلْسِنَةٍ حِدَادٍ أَشِحَّةً عَلَى ٱلْخَيْرِ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ لَمْ يُؤْمِنُوا۟ فَأَحْبَطَ ٱللَّهُ أَعْمَـٰلَهُمْ ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًۭا
যারা তোমাদের সাথে সহযোগিতা করার ব্যাপারে বড়ই কৃপণ। ৩০ বিপদের সময় এমনভাবে চোখ উলটিয়ে তোমাদের দিকে তাকাতে থাকে যেন কোন মৃত্যুপথযাত্রী মূর্ছিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিপদ চলে গেলে এই লোকেরাই আবার স্বার্থলোভী হয়ে তীক্ষ্ণ ভাষায় তোমাদেরকে বিদ্ধ করতে থাকে। ৩১ তারা কখনো ঈমান আনেনি, তাই আল্লাহ তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ধ্বংস করে দিয়েছেন ৩২ এবং এমনটি করা আল্লাহর জন্য অত্যন্ত সহজ। ৩৩
৩০
অর্থাৎ সাচ্চা মু’মিনরা যে পথে তাদের সবকিছু উৎসর্গ করে দিচ্ছে সেপথে তারা নিজেদের শ্রম, সময়, চিন্তা ও সহায়-সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয় করতে প্রস্তুত নয়। প্রাণপাত করা ও বিপদ মাথা পেতে নেয়া তো দূরের কথা কোন কাজেও তারা নির্দ্বধায় মু’মিনদের সাথে সহযোগিতা করতে চায় না।
৩১
আভিধানিক দিক দিয়ে আয়াতটির দু’টি অর্থ হয়। এক, যুদ্ধের ময়দান থেকে সাফল্য লাভ করে যখন তোমরা ফিরে আসো তখন তারা বড়ই হৃদ্যতা সহকারে ও সাড়ম্বরে তোমাদেরকে স্বাগত জানায় এবং বড় বড় বুলি আউড়িয়ে এই বলে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে যে, আমরাও পাক্কা মু’মিন এবং এ কাজ সম্প্রসারণে আমরাও অংশ নিয়েছি কাজেই আমরাও গনীমাতের মালের হকদার। দুই, বিজয় অর্জিত হলে গনীমাতের মাল ভাগ করার সময় তাদের কন্ঠ বড়ই তীক্ষ্ণ ও ধারাল হয়ে যায় এবং তারা অগ্রবর্তী হয়ে দাবী করতে থাকে, আমাদের ভাগ দাও, আমরাও কাজ করেছি, সবকিছু তোমরাই লুটে নিয়ে যেয়ো না।
৩২
অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা যেসব নামায পড়েছে, রোযা রেখেছে, যাকাত দিয়েছে এবং বাহ্যত যেসব সৎকাজ করেছে সবকিছুকে মহান আল্লাহ নাকচ করে দেবেন এবং সেগুলোর কোন প্রতিদান তাদেরকে দেবেন না। কারণ আল্লাহর দরবারে কাজের বাহ্যিক চেহারার ভিত্তিতে ফায়সালা করা হয় না বরং এ বাহ্য চেহারার গভীরতম প্রদেশে বিশ্বাস ও আন্তরিকতা আছে কিনা তার ভিত্তিতে ফায়সালা করা হয়। যখন এ জিনিস আদতে তাদের মধ্যে নেই তখন এ লোক দেখানো কাজ একেবারেই অর্থহীন। এখানে এ বিষয়টি গভীরভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, যেসব লোক আল্লাহ ও রসূলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, নামায পড়ছিল, রোযা রাখছিল, যাকাতও দিচ্ছিল এবং মুসলমানদের সাথে তাদের অন্যান্য সৎকাজে শামিলও হচ্ছিল, তাদের সম্পর্কে পরিষ্কার ফায়সালা শুনিয়ে দেয়া হলো যে, তারা আদতে ঈমানই আনেনি। আর এ ফায়সালা কেবলমাত্র এরই ভিত্তিতে করা হলো যে, কুফর ও ইসলামের দ্বন্দ্বে যখন কঠিন পরীক্ষার সময় এলো তখন তারা দো-মনা হবার প্রমাণ দিল, দ্বীনের স্বার্থের ওপর নিজের স্বার্থের প্রার্ধন্য প্রতিষ্ঠিত করলো এবং ইসলামের হেফাজতের জন্য নিজের প্রাণ, ধন-সম্পদ ও শ্রম নিয়োজিত করতে অস্বীকৃতি জানালো। এ থেকে জানা গেলো, ফায়সালার আসল ভিত্তি এসব বাহ্যিক কাজ-কর্ম নয়। বরং মানুষের বিশ্বস্ততা কার সাথে সম্পর্কিত তারই ভিত্তিতে এর ফায়সালা সূচিত হয়। যেখানে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের প্রতি বিশ্বস্ততা নেই সেখানে ঈমানের স্বীকৃতি এবং ইবাদাত ও অন্যান্য সৎকাজের কোন মূল্য নেই।
৩৩
অর্থাৎ তাদের কার্যাবলীর কোন গুরুত্ব ও মূল্য নেই। ফলে সেগুলো নষ্ট করে দেয়া আল্লাহর কাছে মোটেই কষ্টকর হবে না। তাছাড়া তারা এমন কোন শক্তিই রাখে না যার ফলে তাদের কার্যাবলী ধ্বংস করে দেয়া তাঁর জন্য কঠিন হতে পারে।