আস সাজদাহ

৩০ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
আয়াত
-
২১ ) সেই বড় শাস্তির পূর্বে আমি এদুনিয়াতেই (কোন না কোন) ছোট শাস্তির স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করাতে থাকবো, হয়তো তারা (নিজেদের বিদ্রোহাত্মক নীতি থেকে) বিরত হবে। ৩৩
وَلَنُذِيقَنَّهُم مِّنَ ٱلْعَذَابِ ٱلْأَدْنَىٰ دُونَ ٱلْعَذَابِ ٱلْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ٢١
২২ ) আর তার চেয়ে বড় জালেম কে হবে যাকে তার রবের আয়াতের সাহায্যে উপদেশ দেয়া হয় এবং সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? ৩৪ এ ধরনেরঅপরাধীদের থেকে তো আমি প্রতিশোধ নেবোই।
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِـَٔايَٰتِ رَبِّهِۦ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَآ إِنَّا مِنَ ٱلْمُجْرِمِينَ مُنتَقِمُونَ ٢٢
২৩ ) এর আগে আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি, কাজেই সেই জিনিসই পাওয়ার ব্যাপারে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। ৩৫ এ কিতাবকে আমি বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশক করেছিলাম। ৩৬
وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا مُوسَى ٱلْكِتَٰبَ فَلَا تَكُن فِى مِرْيَةٍ مِّن لِّقَآئِهِۦ وَجَعَلْنَٰهُ هُدًى لِّبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٢٣
২৪ ) আর যখন তারা সবর করে এবং আমার আয়াতের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় পোষণ করতে থাকে তখন তাদের মধ্যে এমন নেতা সৃষ্টি করে দেই যারা আমার হুকুম অনুসারে পথপ্রদর্শন করতো। ৩৭
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا۟ وَكَانُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا يُوقِنُونَ ٢٤
২৫ ) নিশ্চিতই তোমার রবই কিয়ামতের দিন সেসব কথার ফায়সালা করে দেবেন যেগুলোর ব্যাপারে তারা (বনী ইসরাঈল) পরস্পর মতবিরোধে লিপ্ত থেকেছে। ৩৮
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ فِيمَا كَانُوا۟ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ٢٥
২৬ ) আর এরা কি (এসব ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে) কোন পথনির্দেশ পায়নি যে, এদের পূর্বে কত জাতিকে আমি ধ্বংস করেছি, যাদের আবাসভূমি তে আজ এরা চলাফেরা করছে? ৩৯ এর মধ্যে রয়েছে বিরাট নিদর্শনাবলী, এরা কি শুনবে না?
أَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّنَ ٱلْقُرُونِ يَمْشُونَ فِى مَسَٰكِنِهِمْ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَٰتٍ أَفَلَا يَسْمَعُونَ ٢٦
২৭ ) আর এরা কি কখনো এ দৃশ্য দেখেনি যে, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানির ধারা প্রবাহিত করি এবং তারপর এমন জমি থেকে ফসল উৎপন্ন করি যেখান থেকে তাদের পশুরাও খাদ্য লাভ করে এবং তারা নিজেরাও খায়? তবুও কি এরা কিছুই দেখে না? ৪০
أَوَلَمْ يَرَوْا۟ أَنَّا نَسُوقُ ٱلْمَآءَ إِلَى ٱلْأَرْضِ ٱلْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهِۦ زَرْعًا تَأْكُلُ مِنْهُ أَنْعَٰمُهُمْ وَأَنفُسُهُمْ أَفَلَا يُبْصِرُونَ ٢٧
২৮ ) এরা বলে, “যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে বলো এ ফায়সালা কবে হবে? ৪১
وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَٰذَا ٱلْفَتْحُ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ ٢٨
২৯ ) এদেরকে বলে দাও, “যারা কুফরী করেছে ফায়সালার দিন ঈমান আনা তাদের জন্য মোটেই লাভজনক হবে না এবং এরপর এদের কোন অবকাশ দেয়া হবে না।” ৪২
قُلْ يَوْمَ ٱلْفَتْحِ لَا يَنفَعُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ إِيمَٰنُهُمْ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ ٢٩
৩০ ) বেশ, এদেরকে এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও এবং অপেক্ষা করো, এরাও অপেক্ষায় আছে।
فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَٱنتَظِرْ إِنَّهُم مُّنتَظِرُونَ ٣٠
৩৩.
“বড় শাস্তি” বলতে আখেরাতের শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। কুফরী ও ফাসেকীর অপরাধে এ শাস্তি দেয়া হবে। এর মোকাবিলায় “ছোট শাস্তি” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এ দুনিয়ায় মানুষ যেসব কষ্ট পায় সেগুলো। যেমন ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন রোগ, নিজের প্রিয়তম লোকদের মৃত্যু, ভয়াবহ দুর্ঘটনা, মারাত্মক ক্ষতি, ব্যর্থতা ইত্যাদি। সামাজিক জীবনে ঝড়-তুফান, ভূমিকম্প, বন্যা, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, যুদ্ধ এবং আরো বহু আপদ-বিপদ, যা লাখো লাখো কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে। এসব বিপদ অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন ও কল্যাণকর দিক বর্ণনা করে বলা হয়েছে, এর ফলে বড় শাস্তি ভোগ করার আগেই যেন মানুষ সচেতন হয়ে যায় এবং এমন চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি ত্যাগ করে যার পরিণামে তাদেরকে এ বড় শাস্তি ভোগ করতে হবে। অন্যকথায় এর অর্থ হবে, দুনিয়ায় আল্লাহ‌ মানুষকে একেবারেই পরমানন্দে রাখেননি। নিশ্চিন্তে ও আরামে জীবনের গাড়ি চলতে থাকলে মানুষ এ ভুল ধারণায় লিপ্ত হয়ে পড়বে যে, তার চেয়ে বড় আর কোন শক্তি নেই যে, তার কোন ক্ষতি করতে পারে। বরং আল্লাহ‌ এমন ব্যবস্থা করে রেখেছেন যার ফলে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি, জাতি ও দেশের ওপর এমন সব বিপদ-আপদ পাঠাতে থাকেন, যা তাদেরকে একদিকে নিজেদের অসহায়তা এবং অন্যদিকে নিজেদের চেয়ে বড় ও উর্ধ্বে একটি মহাপরাক্রমশালী সর্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থার অনুভূতি দান করে। এ বিপদ প্রত্যেকটি ব্যক্তি, দল ও জাতিকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তোমাদের ভাগ্য ওপরে অন্য একজন নিয়ন্ত্রণ করছেন। সবকিছু তোমাদের হাতে দিয়ে দেয়া হয়নি। আসল ক্ষমতা রয়েছে তার হাতে যিনি কর্তৃত্ব সহকারে এসব কিছু করে চলছেন। তার পক্ষ থেকে যখনই কোন বিপদ তোমাদের ওপর আসে, তার বিরূদ্ধে কোন প্রতিরোধ তোমরা গড়ে তুলতে পারো না এবং কোন জ্বিন, রূহ, দেব-দেবী, নবী বা অলীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেও তার পথ রোধ করতে সক্ষম হও না।

এদিক দিয়ে বিচার করলে এ বিপদ নিছক বিপদ নয় বরং আল্লাহর সতর্ক সংকেত। মানুষকে সত্য জানাবার এবং তার বিভ্রান্তি দূর করার জন্য একে পাঠানো হয়। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যদি মানুষ দুনিয়াতেই নিজের বিশ্বাস ও কর্ম শুধরে নেয় তাহলে আখেরাতে আল্লাহর বড় শাস্তির মুখোমুখি হবার তার কোন প্রয়োজনই দেখা দেবে না।

৩৪.
“রবের আয়াত” অর্থাৎ তার নিদর্শনাবলী, এ শব্দগুলো বড়ই ব্যাপক অর্থবোধক। সব ধরনের নিদর্শন এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। কুরআন মজীদের সমস্ত বর্ণনা দৃষ্টি সম্মুখে রাখলে জানা যায়, এ নিদর্শনাবলী নিম্নোক্ত ছয় প্রকারেরঃ

একঃ যে নিদর্শনাবলী পৃথিবী থেকে নিয়ে আকাশ পর্যন্ত প্রত্যেকটি জিনিসের এবং বিশ্ব-জাহানের সামগ্রিক ব্যবস্থার মধ্যে পাওয়া যায়।

দুইঃ যে নিদর্শনগুলো মানুষের নিজের জন্ম এবং তার গঠনাকৃতি ও অস্তিত্বের মধ্যে পাওয়া যায়।

তিনঃ যে নিদর্শনাবলী মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অনুভূতিতে, তার অচেতন ও অবচেতন মনে এবং তার নৈতিক চিন্তাধারায় পাওয়া যায়।

চারঃ যে নিদর্শনাবলী পাওয়া যায় মানুষের ইতিহাসের ধারাবাহিক অভিজ্ঞতায়।

পাঁচঃ যে নিদর্শনাবলী মানুষের প্রতি অবতীর্ণ পার্থিব আপদ-বিপদ ও আসমানী বালা-মুসিবতের মধ্যে পাওয়া যায়।

ছয়ঃ আর এসবের পরে আল্লাহ‌ তাঁর নবীগণের মাধ্যমে যেসব আয়াত পাঠান ওপরে বর্ণিত নিদর্শনগুলো যেসব সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করেছে এ আয়াতগুলোর সাহায্যে যুক্তি-সঙ্গত পদ্ধতিতে মানুষকে সেসব সত্যের জ্ঞান দান করাই কাম্য।

এ সমস্ত নিদর্শন পূর্ণ একাত্মতা সহকারে সোচ্চার কণ্ঠে মানুষকে একথা বলে যাচ্ছে যে, তুমি আল্লাহ‌ নও এবং বহু সংখ্যক আল্লাহর বান্দা নও বরং তোমার আল্লাহ‌ মাত্র একজন। তার ইবাদাত ও আনুগত্য ছাড়া তোমার দ্বিতীয় কোন পথ নেই। তোমাকে এ জগতে স্বাধীন, স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বহীন করে পাঠানো হয়নি। বরং নিজের জীবনের সমস্ত কাজ শেষ করার পর তোমাকে তোমার আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে জবাবদিহি করতে এবং নিজের কাজের প্রেক্ষিতে পুরস্কার ও শাস্তি পেতে হবে। কাজেই তোমার আল্লাহ‌ তোমাকে সঠিক পথ দেখাবার জন্য নিজের নবী ও কিতাবসমূহের মাধ্যমে যে পথ-নির্দেশনা পাঠিয়েছেন তা মেনে চলো এবং স্বেচ্ছাচারী নীতি অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকো। এখন একথা সুস্পষ্ট, যে মানুষকে এত বিভিন্নভাবে বুঝানো হয়েছে, যাকে উপদেশ দেবার ও পরিচালনা করার জন্য এমন অগণিত নিদর্শনাবলীর সমাবেশ ঘটানো হয়েছে এবং যাকে দেখার জন্য চোখ, শোনার জন্য কান এবং চিন্তা করার জন্য অন্তরের নিয়ামত দান করা হয়েছে, সে যদি সমস্ত নিদর্শনাবলীর দিক থেকে চোখ বন্ধ করে নেয়, যারা বুঝাচ্ছে তাদের কথা ও উপদেশের জন্যও নিজের কানের ছিদ্র বন্ধ করে নেয় এবং নিজের মন-মস্তিষ্ক দিয়েও উল্টা দর্শনই তৈরি করার কাজে আত্ননিয়োগ করে, তাহলে তার চেয়ে বড় জালেম আর কেউ হতে পারে না। এরপর সে দুনিয়ায় নিজের পরীক্ষার মেয়াদ খতম করার পর যখন তার আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে তখন বিদ্রোহের পূর্ণ শাস্তি লাভ করার যোগ্যই হবে।

৩৫ .
আপাতত দৃষ্টিতে নবী (সা.) কে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু আসলে বক্তব্যের লক্ষ হচ্ছে তারা, যারা নবী (সা.) এর রিসালাত এবং তার প্রতি আল্লাহর কিতাব নাযিল হবার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছিল। সূরার শুরুতে (২ ও ৩ আয়াতে যে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হয়েছে এখান থেকে সেদিকেই বক্তব্যের মোড় ফিরে যাচ্ছে। মক্কার কাফেররা বলছিল, মুহাম্মাদ ﷺ এর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কিতাব আসেনি, তিনি নিজেই সেটি রচনা করেছেন এবং এখন দাবী করছেন এটি আল্লাহ‌ নাযিল করেছেন। এর একটি জবাব প্রথম দিকের আয়াতে দেয়া হয়েছিল, এখন দ্বিতীয় জবাব দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে যে প্রথম কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, হে নবী! এই মূর্খ লোকেরা তোমার প্রতি আল্লাহর কিতাব নাযিল হওয়া অসম্ভব মনে করছে এবং তারা চাচ্ছে প্রতি দু’জনে একজন এটি অস্বীকার না করলেও অন্তত যেন এ ব্যাপারে সন্দেহেই লিপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু এক বান্দার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব নাযিল হওয়াতো মানুষের ইতিহাসে কোন নতুন ঘটনা নয়। এর আগে বহু নবীর প্রতি কিতাব নাযিল হয়েছিল, এগুলোর মধ্যে মূসা (আ) কে প্রদত্ত কিতাবটি ছিল সবচেয়ে খ্যাতিমান। কাজেই একই ধরনের আর একটি জিনিস আজ তোমাদের দেয়া হয়েছে। তাহলে অযথা এর মধ্যে সন্দেহ করার মতো এমন নতুন কি তোমরা দেখলে?
৩৬.
অর্থাৎ সে কিতাবটিকে বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশ লাভের মাধ্যমে পরিণত করা হয়েছিল এবং এ কিতাবটিকে ঠিক তেমনি তোমাদের পথনির্দেশ লাভের জন্য পাঠানো হয়েছে। আগেই তিন আয়াতে একথা বর্ণনা করা হয়েছে। এ উক্তির পূর্ণ তাৎপর্য এর ঐতিহাসিক পটভূমি দৃষ্টিসম্মুখে রাখার পরই অনুধাবণ করা যেতে পারে। একথা ইতিহাস থেকে প্রমাণিত এবং মক্কার কাফেরদের কাছেও একথা অজানা ছিল না যে, বনী ইসরাঈল কয়েকশো বছর থেকে মিসরে চরম লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত জীবন যাপন করে আসছিল। এ অবস্থায় আল্লাহ‌ তাদের মধ্যে মূসার (আ) জন্ম দেন। তার মাধ্যমে এ জাতিকে দাসত্বমুক্ত করেন। তারপর তাদের প্রতি কিতাব নাযিল করেন এবং তার বদৌলতে সেই অনুন্নত ও নিষ্পেষিত জাতি পথের দিশা লাভ করে দুনিয়ার বুকে একটি খ্যাতিমান জাতিতে পরিণত হয়। এ ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে আরববাসীদেরকে বলা হচ্ছে, যেভাবে বনী ইসরাঈলকে পথের দিশা দান করার জন্য সেই কিতাব পাঠানো হয়েছিল ঠিক তোমাদেরকে পথের দিশা দান করার জন্য এ কিতাব পাঠানো হয়েছে।
৩৭.
অর্থাৎ এ কিতাব বনী ইসরাঈলকে যে শ্রেষ্ঠ জাতিসত্তায় পরিণত করে এবং তাদেরকে উন্নতির যে উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দেয় তা নিছক তাদের মধ্যে কিতাব এসে যাওয়ার ফল ছিল না। এ কিতাব কোন তাবীজ বা মাদুলী ধরনের কিছু ছিল না যে, এ জাতির গলায় ঝুলিয়ে দেবার সাথে সাথেই তারা উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে থাকে। বরং আল্লাহর আয়াতের প্রতি তারা যে দৃঢ় প্রত্যয় স্থাপন করে এবং আল্লাহর বিধান মেনে চলার ব্যাপারে যে সবর ও অবিচল নিষ্ঠা প্রদর্শন করে, এ সমস্ত অলৌকিকতা ছিল তারই ফল। স্বয়ং বনী ইসরাঈল জাতির মধ্যে তারাই নেতৃত্ব লাভ করে যারা তাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাবের প্রতি প্রকৃত বিশ্বস্ত ছিল এবং যারা বৈষয়িক স্বার্থোদ্ধার ও স্বাদ আস্বাদনের সীমা ছাড়িয়ে যেত না। সত্যপ্রিয়তার খাতিরে তারা যখন দৃঢ়ভাবে প্রত্যেকটি বিপদের মোকাবিলা করে, প্রত্যেকটি ক্ষতি ও কষ্ট বরদাশত করে এবং নিজেদের প্রবৃত্তির কামনা থেকে নিয়ে বহিরাগত দ্বীনের শত্রুদের পর্যন্ত প্রত্যেকের বিরূদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রামে লিপ্ত হয় তখনই তারা দুনিয়ায় নেতৃত্বের আসনে বসে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আরবের কাফেরদেরকে এ মর্মে সতর্ক করা যে, আল্লাহর কিতাবের অবতরণ যেমন বনী ইসরাঈলের ভাগ্যের ফায়সালা করেছিল তেমনিভাবে এ কিতাবের অবতরণও আজ তোমাদের ভাগ্যের ফায়সালা করে দেবে। এখন তারাই নেতৃত্বের আসন অলংকৃত করবে যারা একে মেনে নিয়ে ধৈর্য ও অবিচলতার সাথে সত্যের অনুসরণ করে চলবে। যারা এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের ভাগ্য বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
৩৮.
এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে বনী ইসরাঈলের সর্বব্যাপী কোন্দল ও দলাদলির প্রতি। এসব কোন্দলে তারা লিপ্ত হয়েছিল ঈমান ও প্রত্যয়ের সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবার, নিজেদের সত্যপন্থী নেতাদের আনুগত্য পরিত্যাগ করার ও বৈষয়িক স্বার্থপূজারী হয়ে যাবার পর। এ অবস্থার একটি ফল তো সুস্পষ্ট। বনী ইসরাঈল কোন্ ধরনের লাঞ্ছনা ও অবমাননার শিকার হয়েছিল, তা সারা দুনিয়া দেখছে। দ্বিতীয় ফলটি এখন দুনিয়াবাসীরা জানে না এবং তা কিয়ামতের দিন প্রকাশিত হবে।
৩৯ .
যে জাতির মধ্যেই নবী এসেছে তার ভাগ্যের ফয়সালা সেই নবীর ব্যাপারে সে যে নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করেছে তার ভিত্তিতেই হয়ে গেছে। রসূলকে প্রত্যাখ্যান করার পর আর কোন জাতি ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। তাদের মধ্যে থেকে যারা ঈমান এনেছে একমাত্র তারাই টিকে গেছে। প্রত্যাখ্যান কারীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি লাভ করে চিরকালের জন্য শিক্ষণীয় বস্তুতে পরিণত হয়ে গেছে। ইতিহাসের এ ধারাবাহিক অভিজ্ঞতা থেকে তারা কি কোন শিক্ষা লাভ করেনি?
৪০.
পূর্বাপর আলোচনা সামনে রাখলে পরিষ্কার অনুভূত হয়, এখানে মৃত্যুপরের জীবনের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করার জন্য এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়নি যেমন কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় সাধারণভাবে করা হয়েছে বরং এ প্রসঙ্গে অন্য একটি উদ্দেশ্যে একথা বলা হয়েছে। আসলে এর মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে এ বিষয়ের প্রতি যে, একটি অনুর্বর পতিত জমি দেখে যেমন কেউ ধারণা করতে পারে না যে, এটিও কোনদিন সবুজ-শ্যামল ক্ষেতে পরিণত হবে। কিন্তু আল্লাহর পাঠানো এক পশলা বৃষ্টিধারাই এর কায়া পাল্টে দেয়। ঠিক তেমনি ইসলামের দাওয়াতও তোমাদের চোখে বর্তমানে একটি অচল জিনিস বলে প্রতিভাত হচ্ছে কিন্তু আল্লাহর কুদরাতের একটি ঝলকানি তাকে এমন উন্নতি ও অগ্রগতি দান করবে যে, তোমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবে।
৪১ .
অর্থাৎ তোমরা যে বলছো, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য এসে যাবে এবং আমাদেরকে যারা মিথ্যুক বলছে তাদের ওপর আল্লাহর গযব পড়বে, এ সময়টা কখন আসবে? কবে আমাদের ও তোমাদের ফয়সালা হয়ে যাবে?
৪২ .
অর্থাৎ এটা এমন কি জিনিস যে জন্য তোমরা অস্থির হয়ে পড়েছো? আল্লাহর আযাব একবার এসে গেলে তখন তো আর তোমরা সংযত হবার সুযোগ পাবে না। আযাব আসার আগে তোমরা যে অবকাশটা পাচ্ছো এটাকে দুর্লভ মনে করো। আযাবকে সরাসরি সামনে দেখার পর ঈমান আনলে কোন লাভ হবে না।
অনুবাদ: