আর রূম

৬০ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
৪১ ) মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যার ফলে তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করানো যায়, হয়তো তারা বিরত হবে। ৬৪
ظَهَرَ ٱلْفَسَادُ فِى ٱلْبَرِّ وَٱلْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِى ٱلنَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ ٱلَّذِى عَمِلُوا۟ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ٤١
৪২ ) (হে নবী!) তাদেরকে বলে দাও, পৃথিবীর বুকে পরিভ্রমণ করে দেখো পূর্ববর্তী লোকদের পরিণাম কি হয়েছে! তাদের অধিকাংশই মুশরিক ছিল। ৬৫
قُلْ سِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلُ ۚ كَانَ أَكْثَرُهُم مُّشْرِكِينَ ٤٢
৪৩ ) কাজেই (হে নবী!) এই সত্য দ্বীনে নিজের চেহারাকে মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করো আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দিনের হটে যাওয়ার কোন পথ নেই তাঁর আগমনের পূর্বে, ৬৬ সেদিন লোকেরা বিভক্ত হয়ে পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যাবে।
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ ٱلْقَيِّمِ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِىَ يَوْمٌۭ لَّا مَرَدَّ لَهُۥ مِنَ ٱللَّهِ ۖ يَوْمَئِذٍۢ يَصَّدَّعُونَ ٤٣
৪৪ ) যে কুফরী করেছে তাঁর কুফরীর শাস্তি সেই ভোগ করবে। ৬৭ আর যারা সৎকাজ করেছে তারা নিজেদেরই জন্য সাফল্যের পথ পরিষ্কার করছে,
مَن كَفَرَ فَعَلَيْهِ كُفْرُهُۥ ۖ وَمَنْ عَمِلَ صَـٰلِحًۭا فَلِأَنفُسِهِمْ يَمْهَدُونَ ٤٤
৪৫ ) যাতে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদেরকে আল্লাহ‌ নিজ অনুগ্রহে পুরষ্কৃত করেন। অবশ্যই তিনি কাফেরদেরকে পছন্দ করেন না।
لِيَجْزِىَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ مِن فَضْلِهِۦٓ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْكَـٰفِرِينَ ٤٥
৪৬ ) তাঁর নিদর্শনাবলীর একটি হচ্ছে এই যে, তিনি বাতাস পাঠান সুসংবাদ দান করার জন্য ৬৮ এবং তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ আপ্লুত করার জন্য। আর এ উদ্দেশ্যে যে যাতে নৌযানগুলো তাঁর হুকুমে চলে ৬৯ এবং তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করো ৭০ আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
وَمِنْ ءَايَـٰتِهِۦٓ أَن يُرْسِلَ ٱلرِّيَاحَ مُبَشِّرَٰتٍۢ وَلِيُذِيقَكُم مِّن رَّحْمَتِهِۦ وَلِتَجْرِىَ ٱلْفُلْكُ بِأَمْرِهِۦ وَلِتَبْتَغُوا۟ مِن فَضْلِهِۦ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ٤٦
৪৭ ) আমি তোমার পূর্বে রসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই এবং তারা তাদের কাছে আসে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী নিয়ে। ৭১ তারপর যারা অপরাধ করে ৭২ তাদের থেকে আমি প্রতিশোধ নিই আর মুমিনদেরকে সাহায্য করা ছিল আমার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ رُسُلًا إِلَىٰ قَوْمِهِمْ فَجَآءُوهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَٱنتَقَمْنَا مِنَ ٱلَّذِينَ أَجْرَمُوا۟ ۖ وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٤٧
৪৮ ) আল্লাহই বাতাস পাঠান ফলে তা মেঘ উঠায়, তারপর তিনি এ মেঘমালাকে আকাশে ছড়িয়ে দেন যেভাবেই চান সেভাবে এবং তাদেরকে খণ্ড- বিখণ্ড করেন, তারপর তুমি দেখো বারিবিন্দু মেঘমালা থেকে নির্গত হয়েই চলছে। এ বারিধারা যখন তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে থেকে যার ওপর চান বর্ষণ করেন তখন তারা আনন্দোৎফুল্ল হয়।
ٱللَّهُ ٱلَّذِى يُرْسِلُ ٱلرِّيَـٰحَ فَتُثِيرُ سَحَابًۭا فَيَبْسُطُهُۥ فِى ٱلسَّمَآءِ كَيْفَ يَشَآءُ وَيَجْعَلُهُۥ كِسَفًۭا فَتَرَى ٱلْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَـٰلِهِۦ ۖ فَإِذَآ أَصَابَ بِهِۦ مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦٓ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ ٤٨
৪৯ ) অথচ তার অবতরণের পূর্বে তারা হতাশ হয়ে যাচ্ছিল।
وَإِن كَانُوا۟ مِن قَبْلِ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْهِم مِّن قَبْلِهِۦ لَمُبْلِسِينَ ٤٩
৫০ ) আল্লাহর অনুগ্রহের ফলগুলো দেখো, মৃত পতিত ভূমিকে তিনি কিভাবে জীবিত করেন, ৭৩ অবশ্যই তিনি মৃতদেরকে জীবন দান করেন এবং তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর শক্তিশালী।
فَٱنظُرْ إِلَىٰٓ ءَاثَـٰرِ رَحْمَتِ ٱللَّهِ كَيْفَ يُحْىِ ٱلْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَآ ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ٥٠
৬৪ .
এখানে আবার রোম ও ইরানের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছিল এবং যার আগুন সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। “লোকদের স্বহস্তের উপার্জন” বাক্যাংশের অর্থ হচ্ছে, ফাসেকী, অশ্লীলতা, জুলুম ও নিপীড়নের এমন একটি ধারা যা শিরক ও নাস্তিক্যবাদের আকীদা-বিশ্বাস অবলম্বন ও আখেরাতকে উপেক্ষা করার ফলে অনিবার্যভাবে মানবিক নৈতিক গুণাবলী ও চরিত্রের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে থাকে। “হয়তো তারা বিরত হবে” এর অর্থ হচ্ছে, আখেরাতে শাস্তি লাভ করার পূর্বে আল্লাহ‌ এ দুনিয়ায় মানুষের সমস্ত নয় বরং কিছু খারাপ কাজের ফল এজন্য ভোগ করান যে, এর ফলে সে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করবে এবং নিজের চিন্তাধারার ভ্রান্তি অনুধাবন করে নবীগণ সবসময় মানুষের সামনে যে সঠিক বিশ্বাস উপস্থাপন করে এসেছেন এবং যা গ্রহণ না করলে মানুষের কর্মধারাকে সঠিক বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করার দ্বিতীয় কোন পথ নেই সেদিকে ফিরে আসবে। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে, এ বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন দেখুন, আত তাওবা, ১২৬; আর রা’আদ, ২১ ; আস সাজদাহ, ২১ এবং আত তূর, ৪৭ আয়াত।
৬৫ .
অর্থাৎ রোম ও ইরানের ধ্বংসকর যুদ্ধ আজ কোন নতুন দুর্ঘটনা নয়। বড় বড় জাতিসমূহের ধ্বংসের কাহিনী অতীত ইতিহাসের বিরাট অংশ জুড়ে আছে। আর যে দোষগুলো সেসব জাতির ধ্বংসের মূলে কাজ করেছে সেগুলোর মূলে ছিল এ শিরক এবং আজ এ শিরক থেকে দূরে থাকার জন্য তোমাদের বলা হচ্ছে।
৬৬.
অর্থাৎ আল্লাহ‌ নিজে যাকে হটাবেন না এবং তিনি কারো জন্য এমন কিছু করার অবকাশও রাখেননি যার ফলে তা হটে যেতে পারে।
৬৭ .
এটি একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। একজন কাফের নিজের কুফরীর কারণে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এ বাক্যের মধ্যে তাঁর সবগুলোরই সমাবেশ ঘটেছে। ক্ষতিকারক বস্তুর অন্য কোন বিস্তারিত তালিকাই এতটা ব্যাপক হতে পারে না।
৬৮ .
অর্থাৎ অনুগ্রহের বারিধারা বর্ষণের সুসংবাদ দেবার জন্য।
৬৯.
এটি জাহাজ চলাচলে সহায়তা দানকারী অন্য এক ধরনের বাতাসের আলোচনা। প্রাচীনকালে বাতাসের সহায়তায় চলাচলকারী নৌযান ও জাহাজসমূহের সফর তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুকূল বাতাসের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। প্রতিকূল বাতাস তাদের জন্য ছিল ধ্বংসের সূচনা। তাই বৃষ্টি বহনকারী বাতাসের পর ঐ বাতাসের উল্লেখ করা হয়েছে একটি বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে।
৭০ .
অর্থাৎ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে সফর করো।
৭১.
অর্থাৎ এক ধরনের নির্দেশাবলী তো বিশ্ব-প্রকৃতির সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। মানুষের জীবনের দৈনন্দিন কাজে কর্মে প্রায় সর্বত্রই সেগুলোর সাথে মানুষের সংযোগ ঘটে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা। ওপরের আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অন্য এক ধরনের নিদর্শনাবলী আল্লাহর নবীগণ মু’জিযা, আল্লাহর বাণী, নিজেদের অসাধারণ পবিত্র চরিত্র এবং মানব সমাজে নিজেদের জীবনদায়ী প্রভাবের আকারে নিয়ে এসেছেন। এ দু’ধরনের নিদর্শন আসলে একটি সত্যের প্রতিই ইঙ্গিত করে। তা হচ্ছে, নবীগণ যে তাওহীদের যে শিক্ষা দিচ্ছেন তাই সঠিক। তাঁর মধ্যে প্রত্যেকটি নিদর্শনই অন্যটির সমর্থক। বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবলী নবীগণের বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করে এবং নবীগণ যেসব নিদর্শন এনেছেন সেগুলো বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবলী যে সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করছে সেগুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়।
৭২ .
অর্থাৎ এ দু’টি নিদর্শন থেকে চোখ বন্ধ করে তাওহীদ অস্বীকার করার ওপর অবিচল থাকে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহই করে যেতে থাকে।
৭৩.
এখানে যেভাবে একের পর এক নবুওয়াত ও বৃষ্টির আলোচনা করা হয়েছে তা থেকে এ সত্যটির প্রতি একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিতও পাওয়া যায় যে, নবীর আগমনও মানুষের নৈতিক জীবনের জন্য ঠিক তেমনি অনুগ্রহস্বরূপ যেমন বৃষ্টির আগমন তাঁর বৈষয়িক জীবনের জন্য অনুগ্রহ হয়ে দেখা দেয়। আকাশ থেকে বারিধারা নেমে আসার ফলে যেমন মৃত পতিত জমি অকস্মাৎ জীবিত হয়ে ওঠে এবং তাঁর চতুর্দিকে শস্য শ্যামলিমায় ভরে যায়, ঠিক তেমনি আসমানী ওহী অবতীর্ণ হওয়ার ফলে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার বিরাণ দুনিয়া সজীব হয়ে ওঠে এবং সেখানে শ্রেষ্ঠ গুণাবলী ও প্রশংসিত আচার আচরণের উদ্যানগুলো পত্র-পুষ্পে সুশোভিত হতে থাকে। এটা কাফেরদের দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে এ নিয়ামত যখনই তাদের কাছে আসে, তারা তা অস্বীকার করে এবং তাকে নিজেদের জন্য রহমতের সুসংবাদ মনে করার পরিবর্তে মৃত্যুর বারতা মনে করতে থাকে।
অনুবাদ: