আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল আনকাবূত

৬৯ আয়াত

১১ ) আর আল্লাহ‌ তো অবশ্যই দেখবেন কারা ঈমান এনেছে এবং কারা মুনাফিক। ১৬
وَلَيَعْلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَلَيَعْلَمَنَّ ٱلْمُنَـٰفِقِينَ ١١
১২ ) এ কাফেররা মু’মিনদেরকে বলে, তোমরা আমাদের পথ অনুসরণ করো এবং আমরা তোমাদের গুনাহখাতাগুলো নিজেদের ওপর চাপিয়ে নেবো, ১৭ অথচ তাদের গুনাহখাতার কিছুই তারা নিজের ওপর চাপিয়ে নেবে না, ১৮ তারা ডাহা মিথ্যা বলছে।
وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّبِعُوا۟ سَبِيلَنَا وَلْنَحْمِلْ خَطَـٰيَـٰكُمْ وَمَا هُم بِحَـٰمِلِينَ مِنْ خَطَـٰيَـٰهُم مِّن شَىْءٍ ۖ إِنَّهُمْ لَكَـٰذِبُونَ ١٢
১৩ ) হ্যাঁ নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বোঝাও বইবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে অন্য অনেক বোঝাও। ১৯ আর তারা যে মিথ্যাচার চালিয়ে এসেছে কিয়ামতের দিন নিশ্চয়ই তাদেরকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ২০
وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًۭا مَّعَ أَثْقَالِهِمْ ۖ وَلَيُسْـَٔلُنَّ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ عَمَّا كَانُوا۟ يَفْتَرُونَ ١٣
১৪ ) আমি নূহকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই ২১ এবং সে তাদের মধ্যে থাকে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর। ২২ শেষ পর্যন্ত তুফান তাদেরকে ঘিরে ফেলে এমন অবস্থায় যখন তারা জালেম ছিল। ২৩
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِۦ فَلَبِثَ فِيهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِينَ عَامًۭا فَأَخَذَهُمُ ٱلطُّوفَانُ وَهُمْ ظَـٰلِمُونَ ١٤
১৫ ) তারপর আমি নূহকে ও নৌকা আরোহীদেরকে ২৪ রক্ষা করি এবং একে বিশ্ববাসীর জন্য একটি শিক্ষণীয় নিদর্শন করে রাখি। ২৫
فَأَنجَيْنَـٰهُ وَأَصْحَـٰبَ ٱلسَّفِينَةِ وَجَعَلْنَـٰهَآ ءَايَةًۭ لِّلْعَـٰلَمِينَ ١٥
১৬ ) আর ইবরাহীমকে পাঠাই ২৬ যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাঁকে ভয় করো। ২৭ এটা তোমাদের জন্য ভালো যদি তোমরা জানো।
وَإِبْرَٰهِيمَ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ وَٱتَّقُوهُ ۖ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ١٦
১৭ ) তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে পূজা করছো তারা তো নিছক মূর্তি আর তোমরা একটি মিথ্যা তৈরি করছো। ২৮ আসলে আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তোমরা পূজা করো তারা তোমাদের কোন রিযিকও দেবার ক্ষমতা রাখে না, আল্লাহর কাছে রিযিক চাও, তাঁরই বন্দেগী করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে। ২৯
إِنَّمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَوْثَـٰنًۭا وَتَخْلُقُونَ إِفْكًا ۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ لَكُمْ رِزْقًۭا فَٱبْتَغُوا۟ عِندَ ٱللَّهِ ٱلرِّزْقَ وَٱعْبُدُوهُ وَٱشْكُرُوا۟ لَهُۥٓ ۖ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ١٧
১৮ ) আর যদি তোমরা মিথ্যা আরোপ করো, তাহলে পূর্বে বহু জাতি মিথ্যা আরোপ করেছে ৩০ এবং রাসূলের ওপর পরিষ্কারভাবে পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব নেই।”
وَإِن تُكَذِّبُوا۟ فَقَدْ كَذَّبَ أُمَمٌۭ مِّن قَبْلِكُمْ ۖ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلْبَلَـٰغُ ٱلْمُبِينُ ١٨
১৯ ) এরা ৩১ কি কখনো লক্ষ্য করেনি আল্লাহ‌ কিভাবে সৃষ্টির সূচনা করেন তারপর তার পুনরাবৃত্তি করেন? নিশ্চয়ই এ (পুনরাবৃত্তি) আল্লাহর জন্য সহজতর। ৩২
أَوَلَمْ يَرَوْا۟ كَيْفَ يُبْدِئُ ٱللَّهُ ٱلْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥٓ ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٌۭ ١٩
২০ ) এদেরকে বলো, পৃথিবীর বুকে চলাফেরা করো এবং দেখো তিনি কিভাবে সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর আল্লাহ‌ দ্বিতীয়বারও জীবন দান করবেন। অবশ্যই আল্লাহ‌ সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী। ৩৩
قُلْ سِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ بَدَأَ ٱلْخَلْقَ ۚ ثُمَّ ٱللَّهُ يُنشِئُ ٱلنَّشْأَةَ ٱلْـَٔاخِرَةَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ٢٠
১৬.
অর্থাৎ মু’মিনদের ঈমান ও মুনাফিকদের মুনাফিকির অবস্থা যাতে উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং যার মধ্যে যা কিছু লুকিয়ে আছে সব সামনে এসে যায় সেজন্য আল্লাহ‌ বারবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। একথাটিই সূরা আলে ইমরানে বলা হয়েছেঃ

مَا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى مَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتَّى يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ

“আল্লাহ মু’মিনদেরকে কখনো এমন অবস্থায় থাকতে দেবেন না, যে অবস্থায় এখন তোমরা আছো (অর্থাৎ সাচ্চা ঈমানদার ও মুনাফিক সবাই মিশ্রিত হয়ে আছো।) তিনি পবিত্র লোকদেরকে অপবিত্র লোকদের থেকে সুস্পষ্টভাবে আলাদা করে দেবেন।”(আয়াতঃ১৭৯)

১৭ .
তাদের এ উক্তির অর্থ ছিল, প্রথমত মৃত্যু পরবর্তী জীবন, হাশর-নশর, হিসেব ও শাস্তি-পুরস্কারের এসব কথা একদম বাজে ও উদ্ভট। কিন্তু ধরে নেয়া যাক যদি পরকালের কোন জীবন এবং সেখানে জবাবদিহির কোন বিষয় থেকেই থাকে, তাহলে তার তার দায়ভার আমরা গ্রহণ করছি। আল্লাহর সামনে সমস্ত শাস্তি ও পুরস্কারের বোঝা আমরা মাথা পেতে নেবো। আমাদের কথায় তোমরা এ নতুন ধর্ম পরিত্যাগ করো এবং নিজেদের পিতৃ পুরুষের ধর্মের দিকে ফিরে এসো। হাদীসে বিভিন্ন কুরাইশ সরদার সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রথমদিকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের সাক্ষাত করে এ সরদাররা এমনি ধরনের কথা বলতো। তাই হযরত উমর (রা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, যখন তিনি ঈমান আনেন, আবু সুফিয়ান ও হারব ইবনে উমাইয়াহ ইবনে খালফও তার সাথে সাক্ষাত করে একথাই বলেছিল।
১৮.
অর্থাৎ প্রথমত এটা সম্ভব নয়।কোন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অন্যের দায়-দায়িত্ব নিজের ওপর নিতে পারে না এবং কারো বলার কারণে গোনাহকারী নিজের গোনাহের শাস্তির হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারে না। কারণ সেখানে তো প্রত্যেক তার নিজের কৃতকর্মের জন্য দায়ী।لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى (কোন বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না)। কিন্তু ধরে নেয়া যাক যদি এমনটি হয়ও, তাহলে যে সময় কুফরী ও শিরকের পরিণতি একটি প্রজ্জ্বলিত জাহান্নামের আকারে সামনে এসে যাবে তখন কার এত বড় বুকের পাটা হবে যে, সে দুনিয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসে বলবে, জনাব! আমার কথায় যে ব্যক্তি ঈমান ত্যাগ করে মুরতাদ হয়েছিল আপনি তাকে মাফ করে জান্নাতে পাঠিয়ে দিন এবং আমি জাহান্নামের নিজের কুফরীর সাথে সাথে তার কুফরীর শাস্তিও ভোগ করতে প্রস্তুত আছি।
১৯.
অর্থাৎ আল্লাহর সামনে যদিও তারা নিজেদের বোঝার সাথে অন্যের বোঝা বইবে না কিন্তু দ্বিগুণ বোঝা উঠানোর হাত থেকে নিষ্কৃতিও পাবে না। তাদের ওপর চাপবে তাদের নিজেদের গোমরাহ হবার একটি বোঝা। আর দ্বিতীয় একটি বোঝাও তাদের ওপর চাপানো হবে অন্যদের গোমরাহ করার। একথাটিকে এভাবে বলা যায়, এক ব্যক্তি নিজেও চুরি করে এবং অন্য ব্যক্তিকেও তার সাথে এ কাজে অংশ নিতে বলে। এখন যদি এ দ্বিতীয় ব্যক্তি তার কথায় চুরি করায় অংশ নেয়, তাহলে অন্যের কথায় অপরাধ করেছে বলে কোন আদালত তাকে ক্ষমা করে দেবে না। চুরির শাস্তি অবশ্যই সে পাবে। ন্যায় বিচারের কোন নীতি অনুযায়ী তাকে রেহাই দিয়ে তার পরিবর্তে এ শাস্তি সেই প্রথম চোরটি যে তাকে ধোঁকা দিয়ে চৌর্যবৃত্তিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল তাকে দেয়া কোনক্রমেই ঠিক হবে না। কিন্তু সেই প্রথম চোরটি তার নিজের অপরাধের সাথে সাথে অন্যজনকে চোরে পরিণত করার অপরাধের শাস্তিও পাবে। কুরআন মাজীদের অন্য এক জায়গায় এ নিয়মটিকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ

لِيَحْمِلُوا أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ

“যাতে কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের বোঝাও পুরোপুরি বহন করে এবং এমনসব লোকদের বোঝার একটি অংশও বহন করে যাদেরকে তারা জ্ঞান ছাড়াই গোমরাহ করে।” (আন নাহলঃ ২৫)

আর এ নিয়মটি নবী (সা.) নিম্নোক্ত হাদীসটিতে বর্ণনা করেছেনঃ

مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا

“যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে আহ্বান জানায় সে তাদের সমান প্রতিদান পাবে যারা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করে, এ জন্য তাদের প্রাপ্য কোন কমতি করা হবে না। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর দিকে আহ্বান জানায় সে তাদের সবার সমান গোনাহের ভাগী হবে যারা তার অনুসরণ করে এবং এ জন্য তাদের গোনাহের মধ্যে কোন কমতি করা হবে না।” (মুসলিম)

২০.
মিথ্যাচার মানে এমনসব মিথ্যা কথা যা কাফেরদের নিম্নোক্ত উক্তির মধ্যে লুকিয়ে ছিলঃ “তোমরা আমাদের অনুসরণ করো এবং তোমাদের গোনাহখাতাগুলো আমরা নিজেদের ওপর চাপিয়ে নেবো।” আসলে দু’টি বানোয়াট চিন্তার ভিত্তিতে তারা একথা বলতো। একটি হচ্ছে, তারা যে শিরকীয় ধর্মের অনুসরণ করে চলছে তা সত্য এবং মুহাম্মাদ(সা.) এর তাওহীদি ধর্ম মিথ্যা। আর দ্বিতীয় বানোয়াট চিন্তা হচ্ছে, কোন কিয়ামত টিয়ামত হবে না এবং পরকালের জীবনের এ ধ্যান-ধারণা যার কারণে একজন মুসলমান কুফরী করতে ভয় পায়, এটা একেবারেই অর্থহীন ও ভিত্তিহীন। এ বানোয়াট চিন্তা নিজেদের মনে পোষণ করার পর তারা একজন মুসলমানকে বলতো, ঠিক আছে, তোমাদের মতে কুফরী করা যদি গোনাহই হয় এবং কোন কিয়ামতও যদি অনুষ্ঠিত হবার থাকে যেখানে এ গোনাহের কারণে তোমাদের জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে, তাহলে আমরা তোমাদের এ গোনাহ নিজেদের মাথায় নিয়ে নিচ্ছি, আমাদের দায়িত্বে তোমরা মুহাম্মাদের ধর্ম ত্যাগ করে তোমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মে ফিরে এসো। এ ব্যাপারের সাথে আরো দু’টি মিথ্যা কথাও জড়িত ছিল। তার একটি হচ্ছে, যে ব্যক্তি অন্যের কথায় কোন অপরাধ করে সে নিজের অপরাধের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে পারে এবং যার কথায় সে এ অপরাধ করে সে এর পূর্ণ দায়ভার উঠাতে পারে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তারা যথার্থই তাদের দায়ভার মাথায় তুলে নেবে, যারা তাদের কথায় ঈমান পরিত্যাগ করে কুফরীর দিকে ফিরে গিয়েছিল। কারণ, যখন কিয়ামত সত্যি সত্যি কায়েম হয়ে যাবে এবং তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে জাহান্নাম তাদের চোখের সামনে বিরাজ করবে। তখন তারা কখনোই নিজেদের কুফরীর শাস্তি পাওয়ার সাথে সাথে যাদেরকে তারা দুনিয়ায় ধোঁকা দিয়ে গোমরাহ করতো তাদের গোনাহের সমস্ত বোঝাও নিজেদের ওপর চাপিয়ে নিতে রাজি হবে না।
২১.
তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন সূরা আলে ইমরানঃ ৩৩-৩৪, আন নিসাঃ ১৬৩, আল আনআমঃ ৮৪, আল আ’রাফঃ ৫৯-৬৪, ইউনুসঃ ৭১ ও ৭৩, হূদঃ ২৫ ও ৪৮, আল আম্বিয়াঃ ৭৬-৭৭, আল মু’মিনুনঃ ২৩ ও ৩০, আল ফুরকানঃ ৩৭, আশ শুআরাঃ ১০৫-১২৩ আস সফ্‌ফাতঃ ৭৫ ও ৮২, আল কামারঃ ৯০, আল হাককাহঃ ১১-১২ আয়াত এবং সূরা নূহ সম্পূর্ণ।

যে পটভূমিতে এখানে এ কাহিনী বর্ণনা করা হচ্ছে তা অনুধাবন করতে হলে সূরার প্রথম দিকের আয়াতগুলোর সামনে রাখতে হবে। সেখানে একদিকে মু’মিনদেরকে বলা হয়েছে, তোমাদের আগে যেসব মু’মিন অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে আমি পরীক্ষার সম্মুখীন করেছি। অন্যদিকে জালেম কাফেরদেরকে বলা হয়েছে, তোমরা আমাকে ছাড়িয়ে চলে যাবে এবং আমার পাকড়াও থেকে বেঁচে যাবে, এ ভুল ধারণা পোষণ করো না। এ দু’টি কথা উপলব্ধি করার জন্য এ ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে।

২২.
এর অর্থ এই নয় যে, হযরত নূহের বয়স ছিল সাড়ে ন’ শ বছর। বরং এর অর্থ হচ্ছে নবুয়তের দায়িত্বলাভ করার পর থেকে মহাপ্লাবন পর্যন্ত সাড়ে ন’শ বছর হযরত নূহ এই জালেম ও গোমরাহ জাতির সংশোধনের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন এবং এ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাদের জুলুম-নির্যাতন বরদাশত করার পরও তিনি হিম্মতহারা হননি। এখানে এ জিনিসটি বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য যে, মু’মিনদেরকে বলা হচ্ছে, তোমরাতো মাত্র পাঁচ বছর থেকে জুলুম-নির্যাতন সহ্য করছো এবং একটি গোমরাহ জাতির হঠকারিতা বরদাশত করে চলছো কিন্তু আমার এ বান্দা যে অনবরত সাড়ে ন’শ বছর ধরে এসবের মোকাবিলা করেছে তার সবর ও দৃঢ়তার কথা ভেবে দেখো।

হযরত নূহের বয়সের ব্যাপারে কুরআন মাজীদ ও বাইবেলের বর্ণনায় পার্থক্য রয়েছে। বাইবেল বলে তার বয়স ছিল সাড়ে ন’শ বছর। তার বয়স যখন ছ’শ বছর তখন প্লাবন আসে। এরপর তিনি আর সাড়ে তিনশো বছর জীবিত থাকেন। (আদি পুস্তক ৭: ৬, ৯: ২৮-২৯) কিন্তু কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী তার বয়স এক হাজার বছর হওয়া উচিত। কারণ সাড়ে ন’শ বছর তো হচ্ছে শুধুমাত্র নবুয়তের দায়িত্বে আসীন হবার পর থেকে নিয়ে প্লাবন শুরু হওয়া পর্যন্তকার সময়টি। এ সময়-কালটি তিনি ব্যয় করেন দ্বীনের দাওয়াত দেবার ও তার প্রচারের কাজে। একথা সুস্পষ্ট, জ্ঞান ও বুদ্ধিও ক্ষেত্রে তিনি পরিপক্কতা অর্জন করেছেন এমন এক বয়সেই তিনি নবুয়ত লাভ করেন এবং প্লাবনের পরও তিনি কিছুকাল জীবিত থেকে থাকবেন। এত দীর্ঘকাল বেঁচে থাকা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়। কিন্তু আল্লাহর এ বিশ্বে বিস্ময়কর ঘটনাবলীর অভাব নেই। যেদিকেই তাকানো যাবে তার অসীম ক্ষমতার নিদর্শনই অস্বাভাবিক ঘটনাবলীর আকারে দৃষ্টিগোচর হবে। কিছু ঘটনা ও অবস্থার প্রথমত একটি বিশেষ আকারে আত্মপ্রকাশ করে যেতে থাকাটা এমন কোন যুক্তি পেশ করে না ফলে একথা মনে করা যেতে পারে যে, অন্য কোন অস্বাভাবিক অবস্থায় ভিন্নধর্মী কোন ঘটনা আত্মপ্রকাশ করতে পারে না। এ পর্যায়ের ধারণাগুলোর ভিত ধসিয়ে দেবার জন্য বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন স্থানে এবং সৃষ্টির প্রত্যেকটি প্রজাতির মধ্যে অস্বাভাবিক অবস্থা ও ঘটনাবলীর একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। বিশেষ করে যে ব্যক্তির মনে আল্লাহর অসীম শক্তিশালী হবার সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে সে কখনো জীবন মৃত্যুও স্রষ্টা আল্লাহর পক্ষে কোন মানুষকে এক হাজার বছর বা তার চেয়ে কম-বেশি বয়স দান করা সম্ভব নয়, এ ধরনের কোন ভুল ধারণা পোষণ করতে পারে না। আসলে মানুষ নিজে চাইলেও এক মুহূর্তের জন্যও জীবিত থাকতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ‌ চাইলে যতদিন যত বছর চান তাকে জীবিত রাখতে পারেন।

২৩ .
অর্থাৎ তারা নিজেদের জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে যেতে থাকা অবস্থায় মহাপ্লাবনের গ্রাসে পরিণত হয়। অন্য কথায়, যদি মহাপ্লাবন আসার আগে তারা নিজেদের জুলুম-নিপীড়ন থেকে বিরত হতো তাহলে আল্লাহ‌ তাদের ওপর এ আযাব পাঠাতেন না।
২৪.
অর্থাৎ যারা হযরত নূহের (আ) প্রতি ঈমান এনেছিলেন এবং যাদেরকে আল্লাহ‌ নৌকায় আরোহণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। সূরা হূদে এর সুস্পষ্ট বর্ণনা এভাবে দেয়া হয়েছেঃ

حَتَّى إِذَا جَاءَ أَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّورُ قُلْنَا احْمِلْ فِيهَا مِنْ كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلَّا مَنْ سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ وَمَنْ آمَنَ وَمَا آمَنَ مَعَهُ إِلَّا قَلِيلٌ

“শেষ পর্যন্ত যখন আমার হুকুম এসে গেল এবং চুলা উথলে উঠলো তখন আমি বললাম, (হে নূহ) এতে উঠিয়ে নাও প্রত্যেক শ্রেণীর (প্রাণীদের) এক এক জোড়া এবং নিজের পরিবার পরিজনদেরকে। তবে যাদেরকে সঙ্গে না নেবার জন্য পূর্বেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের কথা আলাদা। আর তার সাথে ঈমান এনেছিল মুষ্টিমেয় কয়েকজন।” (৪০ আয়াত)

২৫.
এর অর্থ এও হতে পারে যে, এ ভয়াবহ শাস্তি অথবা এ যুগান্তকারী ঘটনাটিকে পরবর্তীকালের লোকদের জন্য শিক্ষণীয় করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে এবং সূরা কামারে একথাটি যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে একথাই সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, নৌকাটিই ছিল শিক্ষণীয় নিদর্শন। শত শত বছর ধরে সেটি পর্বত শৃঙ্গে অবস্থান করছিল। এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছিয়ে যেতে থেকেছে যে, এ ভূখণ্ডে এক সময় এমন ভয়াবহ প্লাবন এসেছিল যার ফলে এ নৌকাটি পাহাড়ের মাথায় উঠে যায়। সূরা আল কামারে এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

وَحَمَلْنَاهُ عَلَى ذَاتِ أَلْوَاحٍ وَدُسُرٍ - تَجْرِي بِأَعْيُنِنَا جَزَاءً لِمَنْ كَانَ كُفِرَ - وَلَقَدْ تَرَكْنَاهَا آيَةً فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ

“আর নূহকে আমি আরোহণ করালাম তখতা ও পেরেকের তৈরি নৌকায়। তা চলছিল আমার তত্ত্বাবধানে সেই ব্যক্তির জন্য পুরস্কার স্বরূপ যাকে অস্বীকার করা হয়েছিল। আর আমি তাকে ছেড়ে দিলাম একটি নিদর্শনে পরিণত করে; কাজেই আছে কি কেউ শিক্ষা গ্রহণকারী? ”

সূরা আল কামারের এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে জারীর কাতাদার এ বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেছেনঃ সাহাবীগণের আমলে মুসলমানরা যখন আল জাযীরায় যায় তখন তারা জুদী পাহাড়ের ওপর (অন্য একটি বর্ণনা মতে বাকেরওয়া নামক জনবসতির কাছে) এ নৌকাটি দেখে। বর্তমানকালে মাঝে মাঝে এ ধরনের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে যে, নূহের নৌকা অনুসন্ধান করার জন্য অভিযাত্রী দল পাঠানো হচ্ছে। এর কারণ বর্ণনা করে বলা হয়, অনেক সময় বিমান আরারাতের পার্বত্য এলাকা অতিক্রম করার সময় আরোহীরা একটি পর্বতশৃঙ্গে একটি নৌকার মতো জিনিস দেখেছে। (আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল আ’রাফঃ৪৭ এবং হূদঃ৪৬ টীকা)

২৬ .
তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন, সূরা আল বাকারাহ-১৫, ১৬ ও ৩৫; আলে ইমরান-৭; আল আন’আম-০৯ ;হূদ-৭ ; ইবরাহীম-৬; আল হিজর-৪; মারয়াম-৩; আল আম্বিয়া-৫; আশ শু’আরা-৫ আস সাফ্‌ফাত-৩; আয্‌ যুখরুফ-৩; এবং আয যারিয়াত-২ রুকু’সমূহ।
২৭ .
অর্থাৎ তার সাথে কাউকে শরীক এবং তার নাফরমানী করতে ভয় করো।
২৮.
অর্থাৎ তোমরা এ মূর্তি তৈরি করছো না বরং মিথ্যা তৈরি করছো। এ মূর্তিগুলোর অস্তিত্ব নিজেই একটি মূর্তিমান মিথ্যা। তার ওপর তোমাদের এ আকীদা-বিশ্বাস যে, এরা দেব-দেবী, আল্লাহর অবতার, তাঁর সন্তান, আল্লাহর সান্নিধ্যে অবস্থানকারী ও তাঁর কাছে শাফা’আতকারী অথবা এদের মধ্য থেকে কেউ রোগ নিরাময়কারী আবার কেউ সন্তান-দাতা এবং কেউ রিযিকদাতা-এসবই মিথ্যা কথা। তোমরা নিজেদের ধারণা ও কল্পনার মাধ্যমে এসব রচনা করেছো। আসল সত্য এছাড়া আর কিছুই নয় যে, এগুলো নিছক হাতে গড়া নিষ্প্রাণ মূর্তি এবং এদের কোন ক্ষমতা ও প্রভাব নেই।
২৯.
এ কয়েকটি বাক্যেও মধ্যে হযরত ইবরাহীম (আ) মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সমস্ত যুক্তি একত্র করেছেন। কাউকে মাবুদ বা আরাধ্য করতে হলে এ জন্য যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে। একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ এ হতে পারে, তার নিজের সত্তার মধ্যে মাবুদ হবার কোন অধিকার থাকে। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, সে মানুষের স্রষ্টা এবং মানুষ নিজের অস্তিত্বের জন্য তার কাছে অনুগৃহীত। তৃতীয় কারণ হতে পারে, সে মানুষের লালন-পালনের ব্যবস্থা করে। তাকে রিযিক তথা জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করে। চতুর্থ কারণ হতে পারে, মানুষের ভবিষ্যত তার অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল এবং মানুষ আশঙ্কা করে তার অসন্তুষ্টি অর্জন করলে তার নিজের পরিণাম অশুভ হবে। হযরত ইবরাহীম বলেন, এ চারটি কারণের কোন একটিও মূর্তি পূজার পক্ষে নয়। বরং এর প্রত্যেকটিই নির্ভেজাল আল্লাহর প্রতি আনুগত্যেও দাবী কর। “এ নিছক মূর্তিপূজা” বলে তিনি প্রথম কারণটিকে বিলুপ্ত করে দেন। কারণ নিছক মূর্তি মাবুদ হবার ব্যক্তিগত কি অধিকার বিলুপ্ত করেন। তারপর “তোমরা তাদের স্রষ্টা” একথা বলে দ্বিতীয় কারণটিকে বিলুপ্ত করেন। এরপর তারা তোমাদের কোনো প্রকারের কোন রিযিক দান করতে পারে না, একথা বলে তৃতীয় কারণটিকে বিলুপ্ত করেন। আর সবশেষে বলেন, তোমাদের তো আল্লাহর দিকে ফিরে যেতেই হবে, এ মূর্তিগুলোর দিকে ফিরে যেতে হবে না। কাজেই তোমাদের পরিণাম ও পরকালকে সমৃদ্ধ বা ধ্বংস করার ক্ষমতাও এদের নেই। এ ক্ষমতা আছে একমাত্র আল্লাহর হাতে। এভাবে শিরককে পুরোপুরি বাতিল করে দিয়ে তিনি তাদের ওপর একথা সুস্পষ্ট করে দেন যে, মানুষ যে সমস্ত কারণে কাউকে মাবুদ বা আরাধ্য গণ্য করতে পারে তার কোনটাই এক ও লা-শারীক আল্লাহ‌ ছাড়া আর কাউকে ইবাদাত করার দাবী করে না।
৩০ .
অর্থাৎ যদি তোমরা আমার তাওহীদের দাওয়াতকে এবং তোমাদের নিজেদের রবের দিকে ফিরে যেতে হবে এবং নিজেদের সমস্ত কাজের হিসেব দিতে হবে-এসব কথাকে মিথ্যা বলো, তাহলে এটা কোন নতুন কথা নয়। ইতিহাসে এর পূর্বেও বহু নবী (যেমন নূহ, হূদ, সালেহ আলাইহিমুস সালাম প্রমুখগণ) এ একই দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন এবং তাদের জাতিরাও তাদেরকে এমনিভাবেই মিথ্যুক বলেছে। এখন তারা এ নবীদেরকে মিথ্যুক বলে তাদের কোন ক্ষতি করতে পেরেছে, না নিজেদের পরিণাম ধ্বংস করেছে, এটা তোমরা নিজেরাই দেখে নাও।
৩১.
এখান থেকে নিয়ে لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ (তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি) পর্যন্ত আয়াতগুলো মূল আলোচনার মাঝখানে স্বতন্ত্র প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসেবে আনা হয়েছে। হযরত ইবরাহীমের কাহিনীর ধারা বর্ণনা ছিন্ন করে আল্লাহ‌ মক্কার কাফেরদেরকে সম্বোধন করে একথাগুলো বলেছেন। এ বিষয়ের সাথে এ প্রাসঙ্গিক ভাষণের সম্পর্ক হচ্ছে এই যে, মক্কার যে কাফেরদেরকে শিক্ষা দেবার জন্য এ ভাষণ দেয়া হচ্ছে তারা দু’টি মৌলিক গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। একটি ছিল শিরক ও মূর্তিপূজা এবং অন্যটি ছিল আখেরাত অস্বীকৃতি। এর মধ্য থেকে প্রথম গোমরাহীকে বাতিল করা হয়েছে হযরত ইবরাহীমের ওপর উদ্ধৃত ভাষণের মাধ্যমে। এখন দ্বিতীয় গোমরাহীটিকে বাতিল করার জন্য আল্লাহ‌ তার নিজের পক্ষ থেকে এ বাক্য কয়টি বলেছেন। এভাবে একই বক্তব্যের ধারাবাহিকতার মধ্যে দু’টি বিষয়কেই বাতিল করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৩২.
অর্থাৎ একদিকে অসংখ্য বস্তু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব লাভ করে এবং অন্যদিকে সকল শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গেও বিলুপ্তির সাথে সাথে আবার নতুন ব্যক্তিবর্গ অস্তিত্ব লাভ করতে থাকে। মুশরিকরা এসব কিছুকে আল্লাহর সৃষ্টি হবার কথা অস্বীকার করে না তেমনি তারাও একথা অস্বীকার করতো না। তাই তাদের স্বীকৃত কথার ওপর এ প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে যে, তোমাদের দৃষ্টিতে যে আল্লাহ‌ বস্তুকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দান করেন এবং তারপর মাত্র একবার সৃষ্টি করে শেষ করেন না বরং তোমাদের চোখের সামনে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জিনিসগুলোর জায়গায় আবার একই জিনিস অনবরত সৃষ্টি করে চলেন, তার সম্পর্কে তোমরা কেমন করে একথা ভাবতে পারলে যে, তোমাদের মরে যাবার পর তিনি আর পুনর্বার তোমাদের জীবিত করে দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন না। (আরো বেশি ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা আন নামল, ৮০ টীকা)
৩৩ .
অর্থাৎ যখন আল্লাহর শিল্পকারিতার বদৌলতে প্রথমবারের সৃষ্টি তোমরা নিজেরাই প্রত্যক্ষ করছো তখন তোমাদের বোঝা উচিত, একই আল্লাহর শিল্পকারিতার মাধ্যমে দ্বিতীয়বার ও সৃষ্টি হবে। এ ধরনের কাজ করা তার ক্ষমতার আওতা বহির্ভূত নয় এবং আওতা বহির্ভূত হতেও পারে না।
অনুবাদ: