আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল কাসাস

৮৮ আয়াত

১১ ) সে শিশুর বোনকে বললো, এর পিছনে পিছনে যাও। কাজেই সে তাদের (শত্রুদের) অজ্ঞাতসারে তাকে দেখতে থাকলো। ১৩
وَقَالَتْ لِأُخْتِهِۦ قُصِّيهِ ۖ فَبَصُرَتْ بِهِۦ عَن جُنُبٍۢ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ ١١
১২ ) আর আমি পূর্বেই শিশুর জন্য স্তন্য দানকারিনীদের স্তন পান হারাম করে রেখেছিলাম। ১৪ (এ অবস্থা দেখে) সে মেয়েটি তাদেরকে বললো, “আমি তোমাদের এমন পরিবারের সন্ধান দেবো যারা এর প্রতিপালনের দায়িত্ব নেবে এবং এর কল্যাণকামী হবে?” ১৫
۞ وَحَرَّمْنَا عَلَيْهِ ٱلْمَرَاضِعَ مِن قَبْلُ فَقَالَتْ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰٓ أَهْلِ بَيْتٍۢ يَكْفُلُونَهُۥ لَكُمْ وَهُمْ لَهُۥ نَـٰصِحُونَ ١٢
১৩ ) এভাবে আমি মূসাকে ১৬ তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে আনলাম, যাতে তার চোখ শীতল হয়, সে দুঃখ ভারাক্রান্ত না হয় এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য বলে জেনে নেয়। ১৭ কিন্তু অধিকাংশ লোক একথা জানে না।
فَرَدَدْنَـٰهُ إِلَىٰٓ أُمِّهِۦ كَىْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ وَلِتَعْلَمَ أَنَّ وَعْدَ ٱللَّهِ حَقٌّۭ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ١٣
১৪ ) মূসা যখন পূর্ণ যৌবনে পৌঁছে গেলো এবং তার বিকাশ পূর্ণতা লাভ করলো ১৮ তখন আমি তাকে হুকুম ও জ্ঞান দান করলাম, ১৯ সৎলোকদেরকে আমি এ ধরণেরই প্রতিদান দিয়ে থাকি।
وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُۥ وَٱسْتَوَىٰٓ ءَاتَيْنَـٰهُ حُكْمًۭا وَعِلْمًۭا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُحْسِنِينَ ١٤
১৫ ) (একদিন) সে শহরে এমন সময় প্রবেশ করলো যখন শহরবাসীরা উদাসীন ছিল। ২০ সেখানে সে দেখলো দু'জন লোক লড়াই করছে। একজন তার নিজের সম্প্রদায়ের এবং অন্যজন তার শত্রুসম্প্রদায়ের। তার সম্প্রদায়ের লোকটি শত্রুসম্প্রদায়ের লোকটির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করার জন্য ডাক দিল। মূসা তাকে একটি ঘুষি মারলো ২১ এবং তাকে মেরে ফেললো। (এ কাণ্ড ঘটে যেতেই) মূসা বললো, “এটা শয়তানের কাজ, সে ভয়ংকর শত্রুএবং প্রকাশ্য পথভ্রষ্টকারী।” ২২
وَدَخَلَ ٱلْمَدِينَةَ عَلَىٰ حِينِ غَفْلَةٍۢ مِّنْ أَهْلِهَا فَوَجَدَ فِيهَا رَجُلَيْنِ يَقْتَتِلَانِ هَـٰذَا مِن شِيعَتِهِۦ وَهَـٰذَا مِنْ عَدُوِّهِۦ ۖ فَٱسْتَغَـٰثَهُ ٱلَّذِى مِن شِيعَتِهِۦ عَلَى ٱلَّذِى مِنْ عَدُوِّهِۦ فَوَكَزَهُۥ مُوسَىٰ فَقَضَىٰ عَلَيْهِ ۖ قَالَ هَـٰذَا مِنْ عَمَلِ ٱلشَّيْطَـٰنِ ۖ إِنَّهُۥ عَدُوٌّۭ مُّضِلٌّۭ مُّبِينٌۭ ١٥
১৬ ) তারপর সে বলতে লাগলো, “হে আমার রব! আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও? “ ২৩ তখন আল্লাহ‌ তাঁকে ক্ষমা করে দিলেন তিনি ক্ষমাশীল মেহেরবান। ২৪
قَالَ رَبِّ إِنِّى ظَلَمْتُ نَفْسِى فَٱغْفِرْ لِى فَغَفَرَ لَهُۥٓ ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ١٦
১৭ ) মূসা শপথ করলো, “হে আমার রব! তুমি আমার প্রতি এই যে অনুগ্রহ করেছো ২৫ এরপর আমি আর অপরাধীদের সাহায্যকারী হবো না।” ২৬
قَالَ رَبِّ بِمَآ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ فَلَنْ أَكُونَ ظَهِيرًۭا لِّلْمُجْرِمِينَ ١٧
১৮ ) দ্বিতীয় দিন অতি প্রত্যুষে সে ভয়ে ভয়ে এবং সর্বদিক থেকে বিপদের আশঙ্কা করতে করতে শহরের মধ্যে চলছিল। সহসা দেখলো কি, সেই ব্যক্তি যে গতকাল সাহায্যের জন্য তাকে ডেকেছিল আজ আবার তাকে ডাকছে। মূসা বললো, “তুমি তো দেখছি স্পষ্টতই বিভ্রান্ত।” ২৭
فَأَصْبَحَ فِى ٱلْمَدِينَةِ خَآئِفًۭا يَتَرَقَّبُ فَإِذَا ٱلَّذِى ٱسْتَنصَرَهُۥ بِٱلْأَمْسِ يَسْتَصْرِخُهُۥ ۚ قَالَ لَهُۥ مُوسَىٰٓ إِنَّكَ لَغَوِىٌّۭ مُّبِينٌۭ ١٨
১৯ ) তারপর মূসা যখন শত্রু সম্প্রদায়ের লোকটিকে আক্রমণ করতে চাইলো ২৮ তখন সে চিৎকার করে উঠলো, ২৯ “হে মূসা! তুমি কি আজকে আমাকে ঠিক তেমনিভাবে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছো যেভাবে গতকাল একজনকে হত্যা করেছিলে? তুমি তো দেখছি এদেশে স্বেচ্ছাচারী হয়ে থাকতে চাও, সংস্কারক হতে চাও না?”
فَلَمَّآ أَنْ أَرَادَ أَن يَبْطِشَ بِٱلَّذِى هُوَ عَدُوٌّۭ لَّهُمَا قَالَ يَـٰمُوسَىٰٓ أَتُرِيدُ أَن تَقْتُلَنِى كَمَا قَتَلْتَ نَفْسًۢا بِٱلْأَمْسِ ۖ إِن تُرِيدُ إِلَّآ أَن تَكُونَ جَبَّارًۭا فِى ٱلْأَرْضِ وَمَا تُرِيدُ أَن تَكُونَ مِنَ ٱلْمُصْلِحِينَ ١٩
২০ ) এরপর এক ব্যক্তি নগরীর দূর প্রান্ত থেকে ছুটে এলো ৩০ এবং বললো, “হে মূসা! সরদারদের মধ্যে তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ চলছে। এখান থেকে বের হয়ে যাও। আমি তোমার মঙ্গলাকাংখী।”
وَجَآءَ رَجُلٌۭ مِّنْ أَقْصَا ٱلْمَدِينَةِ يَسْعَىٰ قَالَ يَـٰمُوسَىٰٓ إِنَّ ٱلْمَلَأَ يَأْتَمِرُونَ بِكَ لِيَقْتُلُوكَ فَٱخْرُجْ إِنِّى لَكَ مِنَ ٱلنَّـٰصِحِينَ ٢٠
১৩.
অর্থাৎ, মেয়েটি এমনভাবে ঝুড়ির উপর নজর রাখে যার ফলে ভাসমান ঝুড়ির সাথে সাথে সে চলতেও থাকে এবং তার প্রতি নজর রাখতেও থাকে। আবার শত্রু যাতে না বুঝতে পারে তার কোন সম্পর্ক ঝুড়ির শিশুটির সাথে আছে সেদিকেও খেয়াল রাখে। ইসরাঈলী বর্ণনা অনুযায়ী সে সময় হযরত মূসার বোনের বয়স ছিল দশ বারো বছর। সে বড়ই সতর্কতার সাথে ভাইয়ের অনুসরণ করে এবং সে যে ফেরাউনের মহলে পৌঁছে গেছে তা বুঝতে পারে এবং তার তীব্র বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।
১৪.
অর্থাৎ ফেরাউনের স্ত্রী যে ধাত্রীকে স্তন্যদান করার জন্য ডাকতেন শিশু তার স্তনে মুখ লাগাতো না।
১৫.
এ থেকে জানা যায়, ভাই ফেরাউনের মহলে পৌঁছে যাবার পর বোন ঘরে বসে থাকেনি। বরং সে একই প্রকার সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তা সহকারে মহলের আশে পাশে চক্কর দিতে থাকে। তারপর যখন জানতে পারে শিশু কারো স্তন মুখে নিচ্ছে না এবং বাদশাহ-বেগম শিশুর পছন্দনীয় ধাত্রীর সন্ধান লাভের জন্য পেরেশান হয়ে পড়েছে তখন সেই বুদ্ধিমতী মেয়ে সোজা রাজমহলে পৌঁছে যায় এবং ঘটনাস্থালে গিয়ে বলে, আমি একজন ভালো ধাত্রীর সন্ধান দিতে পারি, যে বড়ই স্নেহ ও মমতা সহকারে এই শিশুর লালন-পালন করতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে এ কথাও বুঝে নিতে হবে, প্রাচীন কালে বড় ও অভিজাত বংশীয় লোকেরা নিজেদের শিশু সন্তান নিজেদের কাছে লালন পালন করার পরিবর্তে সাধারণত ধাত্রীদের হাতে সোপর্দ করে দিতো এবং তারাই নিজেদের কাছে রেখেই তাদের লালন পালন করতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন কাহিনীতেও এ কথার উল্লেখ আছে যে, মক্কার আশেপাশের মহিলারা মাঝে মাঝে মক্কায় আসতো ধাত্রীর সেবা দান করার জন্য এবং সরদারদের সন্তানদেরকে মোটা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দুধ পান করাবার জন্য নিয়ে যেতো। নবী ﷺ নিজেও হালীমা সা’দীয়ার গৃহে মরুভূমির বুকে প্রতিপালিত হয়েছেন। মিসরেও ছিল এই একই রেওয়াজ। এ কারণে হযরত মূসার বোন একথা বলেননি, “আমি একজন ভালো ধাত্রী এনে দিচ্ছি” বরং বলেন, এমন গৃহের সন্ধান দিচ্ছি যার অধিবাসীরা এর প্রতিপালনের দায়িত্ব নেবে এবং তারা কল্যাণকামিতার সাথে একে লালন পালন করবে।”

১৬.
বাইবেল ও তালমূদ থেকে জানা যায়, শিশুর মূসা নাম ফেরাউনের গৃহেই রাখা হয়। এটি হিব্রু নয় বরং কিবতী ভাষার শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে, আমি তাকে পানি থেকে বের করলাম। প্রাচীন মিসরীয় ভাষা থেকেও হযরত মূসার নামের এ অর্থকরণ সঠিক প্রমাণিত হয়। সে ভাষায় ‘মু’ মানে পানি এবং ‘উশা’ এর মানে হয় উদ্ধার প্রাপ্ত।
১৭.
আর আল্লাহর এ কুশলী ব্যবস্থার ফলে এ লাভটিও হয় যে, হযরত মূসা প্রকৃতপক্ষে ফেরাউনের শাহাজাদা হতে পারেননি বরং নিজের মা-বাপ-ভাই-বোনদের মধ্যে প্রতিপালিত হবার কারণে নিজের আসল পরিচয় তিনি ভালোভাবেই অবহিত থাকতে পেরেছেন। নিজের পারিবিরিক ঐতিহ্য ও পিতৃ পুরুষের ধর্ম এবং নিজের জাতি থেকে তারঁ সম্পর্কচ্যূতি ঘটতে পারেনি। তিনি ফেরাউন পরিবারের একজন সদস্য হবার পরিবর্তে নিজের মানসিক আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তাধারার দিক দিয়ে পুরোপুরিভাবে বনী ইসরাঈলেরই একজন সদস্যে পরিনত হন। নবী ﷺ একটি হাদীসে বলেছেনঃ

مثل الذى تعمل ويحتسب فى صنعته الخير كمثل ام موسى ترضع وادها وتاخذها-

“যে ব্যক্তি নিজের রুজি রোজগারের জন্য কাজ করে এবং সে কাজে লক্ষ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তার দৃষ্টান্ত হযরত মূসার মায়ের মতোঃ তিনি নিজেরই সন্তানকে দুধ পান করান আবার তার বিনিময়ও লাভ করেন।” অর্থাৎ এ ধরনের লোক যদিও নিজের এবং নিজের সন্তানদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেয়ার জন্য কাজ করে কিন্তু যেহেতু সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ঈমানদারীর সাথে কাজ করে, যার সাথেই কাজ কারবার করে তার হক যথাযথভাবে আদায় করে এবং হালাল রিজিকের মাধ্যামে নিজের এবং নিজের পরিবার পরিজনের ভরণ-পোষণকে আল্লাহর ইবাদাত মনে করে, তাই নিজের জীবিকা উপার্জনের জন্যও সে আল্লাহর কাছে পুরস্কার লাভের অধিকারী হয়। অর্থাৎ একদিকে জীবিকাও উপার্জন করা হয় এবং অন্যদিকে আল্লাহর কাছ থেকে সওয়াব ও প্রতিদানও লাভ করা হয়।

১৮.
অর্থাৎ যখন তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সর্ম্পূণ হয়ে গেলো। ইহুদী বিবরণসমূহে এ সময় হযরত মূসার বিভিন্ন বয়সের কথা বলা হয়েছে। কোথাও ১৮, কোথাও ২০ আবার কোথাও ৪০ বছরও বলা হয়েছে। বাইবেলের নূতন নিয়মে ৪০ বছর বলা হয়েছে (প্রেরিতদের কার্য বিবরণ ৭:২৩) কিন্তু কুরআন কোন বয়স নির্দেশ করেনি। যে উদ্দেশ্যে কাহিনী বর্ণনা করা হচ্ছে সেজন্য কেবলমাত্র এতটুকু জেনে নেয়াই যথেষ্ঠ যে, সামনের দিকে যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে তা এমন এক সময়ের, যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম পূর্ণ যৌবনে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
১৯.
হুকুম অর্থ হিকমত, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা-ধী-শক্তি ও বিচারবুদ্ধি। আর জ্ঞান বলতে বুঝানো হয়েছে দ্বীনী ও দুনিয়াবী উভয় ধরণের তত্ত্বজ্ঞান। কারণ নিজের পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক-সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে তিনি নিজের বাপ-দাদা তথা ইউসূফ, ইয়াকুব ও ইসহাক আলাইহিমুস সালামের শিক্ষার সাথে পরিচিত হতে পেরেছিলেন। আবার তদানীন্তন বাদশাহর পরিবারে প্রতিপালিত হবার কারণে সমকালীন মিসরবাসীদের মধ্যে প্রচলিত জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ হুকুম ও জ্ঞানদান অর্থ নবুওয়াত দান নয়। কারণ নবুওয়াত তো মূসাকে এর কয়েক বছর পরে দান করা হয়। সামনের দিকে একথা বর্ণনা করা হয়েছে। ইতিপূর্বে সূরা শু’আরায়ও (২১ আয়াত) এ বর্ণনা এসেছে।

এ রাজপুত্র থাকাকালীন সময়ের শিক্ষাদীক্ষা সম্পর্কে বাইবেলের নূতন নিয়মের প্রেরিতদের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছেঃ “ আর মোশি মিস্রীয়দের সমস্ত বিদ্যায় শিক্ষিত হইলেন, এবং তিনি বাক্যে ও কার্যে পরাক্রমী ছিলেন।” (৭:২২) তালমূদের বর্ণনা মতে মূসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের গৃহে একজন সুদর্শন যুবা পুরুষ হিসেবে বড় হয়ে ওঠেন। রাজপুত্রদের মতো পোশাক পরতেন। রাজপুত্রের মতো বসবাস করতেন। লোকেরা তাঁকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা করতো। তিনি প্রায়ই জুশান এলাকায় যেতেন। সেখানে ছিল ইসরাঈলীদের বসতি, তাঁর নিজের সম্প্রদায়ের সাথে কিবতী সরকারের কর্মচারীরা যেসব দুর্ব্যবহার ও বাড়াবাড়ি করতো সেসব নিজের চোখে দেখতেন। তাঁরই প্রচেষ্টাই ফেরাউন ইসরাঈলীদের জন্য সপ্তাহে একদিন ছুটির বিধান করে। তিনি ফেরাউনকে বলেন, চিরকাল দিনের পর দিন অবিশ্রান্ত কাজ করতে থাকলে এরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং এর ফলে সরকারেরই কাজের ক্ষতি হবে। এদের শক্তির পুনর্বহালের জন্য সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম নেবার ব্যবস্থা করা দরকার। এভাবে নিজের বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তিনি এমনই আরও বহু কাজ করেছিলেন যার ফলে সারা মিসর দেশে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। (তালমূদের বিবরণ ১২৯ পৃঃ)

২০.
হতে পারে এটা ছিল একেবারে ভোর বেলা অথবা গরমকালের দুপুরের সময় কিংবা শীতকালে রাতের বেলা। মোটকথা, তখন সময়টা এমন ছিল যখন পথ-ঘাট ছিল জন কোলাহল মুক্ত এবং সারা শহর ছিল নিরব নিঝুম।

“শহরে প্রবেশ করলো” এ শব্দগুলো থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রাজপ্রাসাদ সাধারণ জনবসতি থেকে দূরে অবস্থিত ছিল। হযরত মূসা যেহেতু রাজপ্রাসাদে থাকতেন তাই শহরে বের হলেন, না বলে বলা হয়েছে, শহরে প্রবেশ করলেন।

২১.
মূলে وكز শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ চড় মারাও হতে পারে আবার ঘুষি মারাও হতে পারে। চড়ের তুলনায় ঘুষির আঘাতে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশী। তাই আমি এখানে অনুবাদে ঘুষি শব্দ গ্রহণ করেছি।
২২.
এ থেকে অনুমান করা যায়, ঘুঁষি খেয়ে মিসরীয়টি যখন পড়ে গেল এবং পড়ে গিয়ে মারা গেল তখন কী ভীষণ লজ্জা ও শংকার মধ্যে হযরত মূসার মুখ থেকে কথাগুলো বের হয়ে গিয়ে থাকবে। হত্যা করার ইচ্ছা তাঁর ছিল না। হত্যা করার উদ্দেশ্যে ঘুঁষি মারাও হয়নি। কেউ এটা আশাও করেনি, একটি ঘুঁষি খেয়েই একজন সুস্থ সবল লোক মারা যাবে। তাই হযরত মূসা বললেন, এটা শয়তানের কোন খারাপ পরিকল্পনা বলে মনে হচ্ছে। সে একটি বড় বিপর্যয় ঘটাবার জন্য আমার হাত দিয়ে একাজ করিয়েছে। ফলে আমার বিরুদ্ধে একজন ইসরাঈলীকে সাহায্য করার জন্য একজন কিবতীকে হত্যা করার অভিযোগ আসবে এবং শুধু আমার বিরুদ্ধে নয় বরং সমগ্র ইসরাঈলী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিসরে একটি বিরাট হাংগামা সৃষ্টি হবে। এ ব্যাপারে বাইবেলের বর্ণনা কুরআন থেকে ভিন্ন। বাইবেল হযরত মূসার বিরুদ্ধে সেচ্ছাকৃত হত্যার আভিযোগ এনেছে। তার বর্ণনা মতে মিসরীয় ও ইসরাঈলীকে লড়াই করতে দেখে হযরত মূসা “এদিক ওদিক চাহিয়া কাহাকেও দেখিতে না পাওয়াতে ঐ মিসরীয়কে বধ করিয়া বালির মধ্যে পুতিয়া রাখিলেন।” (যাহা পুস্তক ২: ১২) তালমূদেও একই কথা বলা হয়েছে। এখন বনী ইসরাঈল কিভাবে নিজেদের মনীষীদের চরিত্রে নিজেরাই কলঙ্ক লেপন করেছে এবং কুরআন কিতাবে তাঁদের ভূমিকা পরিচ্ছন্ন ও কলঙ্কমূক্ত করেছে তা যে কোন ব্যক্তি বিচার করতে পারে। সাধারণ বিবেক-বুদ্ধিও এ কথাই বলে, একজন জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ ব্যক্তি, পরবর্তীকালে যাঁকে হতে হবে একজন মহিমান্বিত পয়গম্বর এবং মানুষকে ইনসাফ ও ন্যায়নীতির একটি মর্যাদাশালী আইন ব্যবস্থা দান করা হবে যাঁর দায়িত্ব, তিনি এমন একজন অন্ধ জাতীয়তাবাদী হতে পারেন না যে, নিজের জাতির একজনকে অন্য জাতির কোন ব্যক্তির সাথে মারামারি করতে দেখে ক্রোধে ক্ষিপ্ত হয়ে সেচ্ছায় বিপক্ষীয় ব্যক্তিকে মেরে ফেলবেন। ইসরাঈলীকে মিসরীয়দের কবজায় দেখে তাকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য হত্যা করা যে, বৈধ হতে পারে না, তা বলাই নিষ্প্রয়োজন।
২৩.
মূল শব্দ হচ্ছে “মাগিফরাত” এর অর্থ ক্ষমা করা ও মাফ করে দেয়াও হয় আবার গোপনীয়তা রক্ষা করাও হয়। হযরত মূসার (আ) দোয়ার অর্থ ছিল, আমার এ গোনাহ (যা তুমি জানো, আমি জেনে-বুঝে করিনি) তুমি মাফ করে দাও এবং এর ওপর আবরণ দিয়ে ঢেকে দাও, যাতে শত্রুরা জানতে না পারে।
২৪.
এরও দুই অর্থ এবং দু’টিই এখানে প্রযোজ্য। অর্থাৎ আল্লাহ‌ তাঁর এ ত্রুটি মাফ করে দেন এবং হজরত মূসার গোপনীয়তাও রক্ষা করেন। অর্থাৎ কিবতী জাতির কোন ব্যক্তি এবং কিবতী সরকারের কোন লোকের সে সময় তাদের আশেপাশে বা ধারে কাছে গমনাগমন হয়নি। ফলে তারা কেউ এ হত্যাকাণ্ড দেখেনি। এভাবে হযরত মূসার পক্ষে নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়ার সুযোগ ঘটে।
২৫.
অর্থাৎ আমার কাজটি যে গোপন থাকতে পেরেছে, শত্রু জাতির কোন ব্যক্তি যে আমাকে দেখতে পায়নি এবং আমার সরে যাওয়ার যে সুযোগ ঘটেছে, এই অনুগ্রহ।
২৬.
হযরত মূসার এ অঙ্গীকার অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক শব্দাবলীর মাধ্যমে সাধিত হয়েছে। এর অর্থ কেবল এই নয় যে, আমি কোন অপরাধীর সহায়ক হবো না বরং এর অর্থ এটাও হয় যে, আমার সাহায্য-সহায়তা কখনো এমন লোকদের পক্ষে থাকবে না যারা দুনিয়ায় জুলুম ও নিপীড়ন চালায়। ইবনে জারীর এবং অন্য কয়েকজন তাফসীরকারক এভাবে এর একেবারে সঠিক অর্থ নিয়েছেন যে, সেই দিনই হযরত মূসা ফেরাউন ও তার সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার অঙ্গীকার করেন। কারণ ফেরাউনের সরকার ছিল একটি জালেম সরকার এবং সে আল্লাহর এ সরযমীনে একটি অপরাধমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছিল। তিনি অনুভব করেন, কোন ঈমানদার ব্যক্তি একটি জালেম সরকারের হাতিয়ারে পরিণত হতে এবং তার শক্তি ও পরাক্রান্ত বৃদ্ধির কাজে সহায়তা করতে পারে না।

মুসলিম আলেমগণ সাধারণভাবে হযরত মূসার এ অঙ্গীকার থেকে একথা প্রমাণ করেছেন যে, একজন মু’মিনের কোন জালেমকে সাহায্য করা থেকে পুরোপুরি দূরে থাকা উচিত। সে জালেম কোন ব্যক্তি, দল, সরকার বা রাষ্ট্র যেই হোক না কেন। প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহর কাছে এক ব্যক্তি বলে, আমার ভাই বনী উমাইয়া সরকারের অধীনে কূফার গভর্নরের কাতিব (সচিব), বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালা করা তার কাজ নয়, তবে যেসব ফায়সালা করা হয় সেগুলো তার কলমের সাহায্যেই জারী হয়। এ চাকুরী না করলে সে ভাতে মারা যাবে। আতা জবাবে এ আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেন, তোমার ভাইয়ের নিজের কলম ছুঁড়ে ফেলে দেয়া উচিত, রিযিকদাতা হচ্ছেন আল্লাহ।

আর একজন কাতিব আমের শা’বীকে জিজ্ঞেস করেন, “হে আবু আমর! আমি শুধুমাত্র হুকুমনামা লিখে তা জারী করার দায়িত্ব পালন করি মূল ফায়সালা করার দায়িত্ব আমার নয়। এ জীবিকা কি আমার জন্য বৈধ?” তিনি জবাব দেন, “হতে পারে কোন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হত্যার ফায়সালা করা হয়েছে এবং তোমার কলম দিয়ে তা জারী হবে। হতে পারে, কোন সম্পদ নাহক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে অথবা কারো গৃহ ধ্বসানোর হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তা তোমার কলম দিয়ে জারী হচ্ছে।” তারপর ইমাম এ আয়াতটি পাঠ করেন। আয়াতটি শুনেই কাতিব বলে ওঠেন, “আজকের পর থেকে আমার কলম বনী উমাইয়ার হুকুমনামা জারী হবার কাজে ব্যবহৃত হবে না। ” ইমাম বললেন, “তাহলে আল্লাহও তোমাকে রিযিক থেকে বঞ্চিত করবেন না।”

আবদুর রহমান ইবনে মুসলিম যাহহাককে শুধুমাত্র বুখারায় গিয়ে সেখানকার লোকদের বেতন বণ্টন করে দেবার কাজে পাঠাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি সে দায়িত্ব গ্রহণ করতেও অস্বীকার করেন। তাঁর বন্ধুরা বলেন, এতে ক্ষতি কি? তিনি বলেন, আমি জালেমদের কোন কাজেও সাহায্যকারী হতে চাই না। (রুহুল মা’আনি ৩ খণ্ড, ৪৯ পৃষ্ঠা)

ইমাম আবু হানীফার একটি ঘটনা তাঁর নির্ভরযোগ্য জীবনীকারগণ আল মুওয়াফফাক আল মক্কী, ইবনুল বাযযার আল কারওয়ারী, মুল্লা আলী কারী প্রমূখ সবাই তাঁদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। বলা হয়েছে, তারই পরামর্শক্রমে বাদশাহ মনসূরের প্রধান সেনাপতি হাসান ইবনে কাহতুবাহ একথা বলে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেন যে, আজ পর্যন্ত এতটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু এ যদি জুলুমের পথে হয়ে থাকে তাহলে আমার আমল নামায় আমি আর কোন অপরাধের সংখ্যা বাড়াতে চাই না।

২৭.
অর্থাৎ তুমি ঝগড়াটে স্বভাবের বলে মনে হচ্ছে। প্রতিদিন কারো না কারো সাথে তোমার ঝগড়া হতেই থাকে। গতকাল একজনের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়েছিল, আজ আবার আর একজনের সাথে বাঁধিয়েছো।
২৮.
বাইবেলের বর্ণনা এখানে কুরআন থেকে আলাদা। বাইবেল বলে, দ্বিতীয় দিনের ঝগড়া ছিল দু’জন ইসরাঈলীর মধ্যে। কিন্তু কুরআন বলছে, এ ঝগড়াও ইসরাঈলী ও মিসরীয়ের মধ্যে ছিল। এ দ্বিতীয় বর্ণনাটিই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়। কারণ প্রথম দিনের হত্যার রহস্য প্রকাশ হবার যে কথা সামনের দিকে আসছে মিসরীয় জাতির একজন লোক সে ঘটনা জানতে পারলেই তা প্রকাশ পাওয়া সম্ভব হতো। একজন ইসরাঈলী তা জানতে পারলে সে সঙ্গে সঙ্গেই নিজের জাতির পালক-রাজপুত্রের এতবড় অপরাধের খবর ফেরাউনী সরকারের গোচরীভূত করবে এটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।
২৯.
যে ইসরাঈলীকে সাহায্য করার জন্য হযরত মূসা এগিয়ে গিয়েছিলেন, এ ছিল তারই চিৎকার। তাকে ধমক দেবার পর যখন তিনি মিসরীয়টিকে মারতে উদ্যত হলেন তখন ইসরাঈলীটি মনে করলো হযরত মূসা বুঝি তাকে মারতে আসছেন। তাই সে চিৎকার করতে থাকলো এবং নিজের বোকামির জন্য গতকালের হত্যা রহস্যও প্রকাশ করে দিল।
৩০.
অর্থাৎ এ দ্বিতীয় ঝগড়ার ফলে হত্যা রহস্য প্রকাশ হয়ে যাবার পর সংশ্লিষ্ট মিসরীয়টি যখন গিয়ে সরকারকে জানিয়ে দিল তখন এ পরামর্শের ঘটনা ঘটে।
অনুবাদ: