আন নামল

৯৩ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
৮১ ) এবং অন্ধদেরকে পথ বাতলে দিয়ে বিপথগামী হওয়া থেকে বাঁচাতে পারো না। ৯৯ তুমি তো নিজের কথা তাদেরকে শুনাতে পারো যারা আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনে এবং তারপর অনুগত হয়ে যায়।
وَمَآ أَنتَ بِهَٰدِى ٱلْعُمْىِ عَن ضَلَٰلَتِهِمْ إِن تُسْمِعُ إِلَّا مَن يُؤْمِنُ بِـَٔايَٰتِنَا فَهُم مُّسْلِمُونَ ٨١
৮২ ) আর যখন আমার কথা সত্য হবার সময় তাদের কাছে এসে যাবে ১০০ তখন আমি তাদের জন্য মৃত্তিকা গর্ভ থেকে একটি জীব বের করবো। সে তাদের সাথে কথা বলবে যে, লোকেরা আমাদের আয়াত বিশ্বাস করতো না। ১০১
وَإِذَا وَقَعَ ٱلْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَآبَّةً مِّنَ ٱلْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ ٱلنَّاسَ كَانُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا لَا يُوقِنُونَ ٨٢
৮৩ ) আর সেদিনের কথা একবার চিন্তা করো, যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে এমন সব লোকদের এক একটি দলকে ঘেরাও করে আনবো যারা আমার আয়াত অস্বীকার করতো। তারপর তাদেরকে (তাদের শ্রেণী অনুসারে স্তরে স্তরে) বিন্যস্ত করা হবে।
وَيَوْمَ نَحْشُرُ مِن كُلِّ أُمَّةٍ فَوْجًا مِّمَّن يُكَذِّبُ بِـَٔايَٰتِنَا فَهُمْ يُوزَعُونَ ٨٣
৮৪ ) অবশেষে যখন সবাই এসে যাবে তখন (তাদের রব তাদেরকে) জিজ্ঞেস করবেন, “তোমরা আমার আয়াত অস্বীকার করেছো অথচ তোমরা জ্ঞানগতভাবে তা আয়ত্ত করো নি? ১০২ যদি এ না হয়ে থাকে তাহলে তোমরা আর কি করেছিলে।” ১০৩
حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُو قَالَ أَكَذَّبْتُم بِـَٔايَٰتِى وَلَمْ تُحِيطُوا۟ بِهَا عِلْمًا أَمَّاذَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ٨٤
৮৫ ) আর তাদের জুলুমের কারণে আযাবের প্রতিশ্রুতি তাদের ওপর পূর্ণ হয়ে যাবে, তখন তারা কিছুই বলতে পারবে না।
وَوَقَعَ ٱلْقَوْلُ عَلَيْهِم بِمَا ظَلَمُوا۟ فَهُمْ لَا يَنطِقُونَ ٨٥
৮৬ ) তারা কি অনুধাবন করতে পারেনি, আমি তাদের প্রশান্তি অর্জন করার জন্য রাত তৈরী করেছিলাম এবং দিনকে উজ্জ্বল করেছিলাম? ১০৪ এরই মধ্যে ছিল অনেকগুলি নিদর্শন যারা ঈমান আনতো তাদের জন্য। ১০৫
أَلَمْ يَرَوْا۟ أَنَّا جَعَلْنَا ٱلَّيْلَ لِيَسْكُنُوا۟ فِيهِ وَٱلنَّهَارَ مُبْصِرًا إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَٰتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ ٨٦
৮৭ ) আর কি হবে সেদিন যেদিন সিংঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং ভীত-বিহবল হয়ে পড়বে আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই ১০৬ ---তারা ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ‌ এ ভীতি-বিহবলতা থেকে রক্ষা করতে চাইবেন--- আর সবাই তাঁর সামনে হাজির হবে কান চেপে ধরে।
وَيَوْمَ يُنفَخُ فِى ٱلصُّورِ فَفَزِعَ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَٰخِرِينَ ٨٧
৮৮ ) আজ তুমি দেখছো পাহাড়গুলোকে এবং মনে করছো ভালই জমাটবদ্ধ হয়ে আছে, কিন্তু সে সময় এগুলো মেঘের মতো উড়তে থাকবে। এ হবে আল্লাহর কুদরতের মূর্ত প্রকাশ, যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে বিজ্ঞতা সহকারে সুসংঙ্গবদ্ধ করেছেন? তিনি ভালোভাবেই জানেন তোমরা কি করছো। ১০৭
وَتَرَى ٱلْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَهِىَ تَمُرُّ مَرَّ ٱلسَّحَابِ صُنْعَ ٱللَّهِ ٱلَّذِىٓ أَتْقَنَ كُلَّ شَىْءٍ إِنَّهُۥ خَبِيرٌۢ بِمَا تَفْعَلُونَ ٨٨
৮৯ ) যে ব্যক্তি সৎকাজ নিয়ে আসবে সে তার চেয়ে বেশী ভালো প্রতিদান পাবে ১০৮ এবং এ ধরণের লোকেরা সেদিনের ভীতি-বিহবলতা থেকে নিরাপদ থাকবে। ১০৯
مَن جَآءَ بِٱلْحَسَنَةِ فَلَهُۥ خَيْرٌ مِّنْهَا وَهُم مِّن فَزَعٍ يَوْمَئِذٍ ءَامِنُونَ ٨٩
৯০ ) আর যারা অসৎকাজ নিয়ে আসবে, তাদের সবাইকে অধোমুখে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা কি যেমন কর্ম তেমন ফল--- ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান পেতে পারো? ১০৯ (ক)
وَمَن جَآءَ بِٱلسَّيِّئَةِ فَكُبَّتْ وُجُوهُهُمْ فِى ٱلنَّارِ هَلْ تُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ٩٠
৯৯.
অর্থাৎ তাদের হাত ধরে জোর করে সোজা পথে টেনে আনা এবং তাদেরকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলা তোমার কাজ নয়। তুমি তো কেবলমাত্র মুখের কথা এবং নিজের চারিত্রিক উদাহরণের মাধ্যমেই জানাতে পারো যে, এটি সোজা পথ এবং এসব লোক যে পথে চলছে সেটি ভুল পথ। কিন্তু যে নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়েছে এবং যে একদম দেখতেই চায় না তাকে তুমি কেমন করে পথ দেখাতে পারো!
১০০.
অর্থাৎ কিয়ামত নিকটবর্তী হবে, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হচ্ছে।
১০১.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরের (রা.) বক্তব্য হচ্ছে, যখন দুনিয়ার বুকে সৎকাজের আদেশ দেয়া ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার মতো কোন লোক থাকবে না তখনই এ ঘটনা ঘটবে। ইবনে মারদুইয়াহ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, তিনি একথাটিই নবী ﷺ থেকে শুনেছিলেন। এ থেকে জানা যায়, যখন মানুষ সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করবে না তখন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে আল্লাহ‌ একটি জীবের মাধ্যমে শেষ মামলা দায়ের করবেন। এটি একটিই জীব হবে অথবা একটি বিশেষ ধরণের প্রজাতির জীব বহু সংখ্যায় সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে, একথা সুস্পষ্ট নয়।

دَابَّةً مِنَ الْأَرْضِ শব্দগুলোর মধ্যে দু’ধরণের অর্থের সম্ভাবনা আছে। মোটকথা, সে যে কথা বলবে তা হবে এইঃ আল্লাহর যেসব আয়াতের মাধ্যমে কিয়ামত আসার ও আখেরাত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার খবর দেয়া হয়েছিল লোকেরা সেগুলো বিশ্বাস করেনি, কাজেই এখন দেখো সেই কিয়ামতের সময় এসে গেছে এবং জেনে রাখো, আল্লাহর আয়াত সত্য ছিল। “আর লোকেরা আমাদের আয়াত বিশ্বাস করতো না।” এ বাক্যাংশটি সেই জীবের নিজের উক্তির উদ্ধৃতি হতে পারে অথবা হতে পারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার উক্তির বর্ণনা। যদি এটা তার কথার উদ্ধৃতি হয়ে থাকে, তাহলে এখানে “আমাদের” শব্দটি সে ঠিক তেমনিভাবে ব্যবহার করবে যেমন প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী “আমরা” অথবা “আমাদের” শব্দ ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ সে সরকারের পক্ষ থেকে কথা বলছে, ব্যক্তিগতভাবে নিজের পক্ষ থেকে কথা বলছে না। দ্বিতীয় অবস্থায় কথা একেবারে সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ‌ তার কথাকে যেহেতু নিজের ভাষায় বর্ণনা করছেন, তাই তিনি “আমাদের আয়াত” শব্দ ব্যবহার করেছেন।

এ জীব কখন বের হবে? এ সম্পর্কে নবী ﷺ বলেনঃ “সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে এবং একদিন দিন দুপুরে এ জানোয়ার বের হয়ে আসবে। এর মধ্যে যে নিদর্শনটিই আগে দেখা যাবে সেটির প্রকাশ ঘটবে অন্যটির কাছাকাছিই” (মুসলিম)। মুসলিম, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থগুলোতে অন্য যে হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে তাতে রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দাজ্জালের আর্বিভাব, ভূগর্ভের প্রাণীর প্রকাশ, ধোঁয়া ও সূর্যের পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া, এগুলো এমন সব নিদর্শন যা একের পর এক প্রকাশ হতে থাকবে।

এ জীবের সারবস্তু (Quiddity) ও আকৃতি-প্রকৃতি কি, কোথায় থেকে এর প্রকাশ ঘটবে এবং এ ধরণের অন্যান্য অনেক বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এগুলো পরস্পর বিভিন্ন ও বিপরীতধর্মী। এগুলোর আলোচনা কেবলমাত্র অস্থিরতা ও চাঞ্চল্য সৃষ্টিতে সাহায্য করবে এবং এগুলো জেনে কোন লাভও নেই। কারণ কুরআনে যে উদ্দেশ্যে এর উল্লেখ করা হয়েছে এ বিস্তারিত বর্ণনার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।

এখন ব্যাখ্যা সাপেক্ষ ব্যাপার হলো, একটি প্রাণী এভাবে মানুষের সাথে মানুষের ভাষায় কথা বলার হেতু কি? আসলে এটি আল্লাহর অসীম শক্তির একটি নিদর্শন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে বাকশক্তি দান করতে পারেন। কিয়ামতের পূর্বে তিনি তো শুধুমাত্র একটি প্রাণীকে বাকশক্তি দান করবেন কিন্তু যখন কিয়ামত কায়েম হয়ে যাবে তখন আল্লাহর আদালতে মানুষের চোখ, কান ও তার গায়ের চামড়া পর্যন্ত কথা বলতে থাকবে। যেমন কুরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছেঃ

حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ..................... وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا قَالُوا أَنْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ-(حم السجده-20-21)

১০২.
অর্থাৎ কোন তাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে তোমরা এ আয়াতগুলোর মিথ্যা হবার কথা জানতে পেরেছিলে, এ আয়াতগুলো অস্বীকার করার পেছনে তোমাদের এ কারণ কখনোই ছিল না। তোমরা কোন প্রকার চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা-অনুসন্ধান ছাড়াই আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিলে।
১০৩.
অর্থাৎ যদি এমন না হয়, তাহলে কি তোমরা একথা প্রমাণ করতে পারবে যে, গবেষণা-অনুসন্ধানের পর তোমরা এ আয়াতগুলোকে মিথ্যা পেয়েছিলে এবং সত্যিই কি তোমরা এ আয়াতগুলোয় যা বর্ণনা করা হয়েছে তা প্রকৃত সত্য নয়, এ ধরনের কোন জ্ঞান লাভ করেছিলে?
১০৪.
অর্থাৎ অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে এ দু’টি নির্দশন এমন যে, তারা হরহামেশা তা দেখে আসছিল। তারা প্রতি মুহূর্তে এগুলোর সাহায্যে লাভবান হচ্ছিল। কোন অন্ধ, বধির ও বোবার কাছেও এ দু’টি গোপন ছিল না। কেন তারা রাতের বেলা আরাম করার মুহূর্তে এবং দিনের সুযোগে লাভবান হবার সময় একথা চিন্তা করেনি যে, এক মহাবিজ্ঞ ও বিজ্ঞানময় সত্তা এ ব্যবস্থা পরিচালনা করছেন এবং তিনি তাদের যথাযথ প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করেছেন? এটি কোন আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না। কারণ এর মধ্যে উদ্দেশ্যমুখীনতা, বিজ্ঞানময়তা ও পরিকল্পনা গঠনের ধারা প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। এগুলো কোন অন্ধ প্রাকৃতিক শক্তির গুণাবলীও হতে পারে না। আবার এগুলো বহু ইলাহর কার্যপ্রণালীও নয়। কারণ নিঃসন্দেহে এ ব্যবস্থায় এমন কোন এক জনই স্রষ্টা, মালিক ও পরিচালক-ব্যবস্থাপক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যিনি পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য ও অন্যান্য সকল গ্রহ-নক্ষত্রের উপর কর্তৃত্ব করছেন। কেবলমাত্র এ একটি জিনিস দেখেই তারা জানতে পারতো যে, সেই একক স্রষ্টা তাঁর রসূল ও কিতাবের মাধ্যমে যে সত্য বর্ণনা করেছেন এ রাত ও দিনের আবর্তন তারই সত্যতা প্রমাণ করছে।
১০৫.
অর্থাৎ এটি কোন দুর্বোধ্য কথাও ছিল না। তাদেরই ভাই-বন্ধু তাদেরই বংশ ও গোত্রের লোক এবং তাদেরই মত মানুষরাই তো এ নিদর্শনগুলো দেখে স্বীকার করেছিল যে, নবী যে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব ও তাওহীদের দিকে আহ্বান জানাচ্ছেন তা প্রকৃত সত্যের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যশীল।
১০৬.
শিংগার ফুৎকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা আন’আম ৪৭, সূরা ইবরাহীম ৫৭, সূরা ত্বা-হা ৭৮, সূরা হাজ্জ ১, সূরা ইয়াসীন ৪৬-৪৭ এবং সূরা যুমার ৭৯ টীকা।
১০৭.
এ ধরণের গুণ সম্পন্ন আল্লাহর কাছে আশা করো না যে, তাঁর দুনিয়ায় তোমাদের বুদ্ধি-জ্ঞান, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করার যোগ্যতা এবং তাঁর প্রদত্ত সম্পদ ব্যবহার করার ক্ষমতা দান করার পর তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে বেখবর থাকবেন। তাঁর যমীনে বসবাস করে তোমরা তাঁর প্রদত্ত ক্ষমতা-এখতিয়ার কিভাবে ব্যবহার করছো তা তিনি দেখবেন না, এমনটি হতে পারে না।
১০৮.
অর্থাৎ এদিক দিয়েও সে ভালো অবস্থায় থাকবে যে, যতটুকু সৎকাজ সে করবে তার তুলনায় বেশী পুরস্কার তাকে দেয়া হবে। আবার এদিক দিয়েও যে, তার সৎকাজ তো ছিল সাময়িক এবং তার প্রভাবও দুনিয়ায় সীমিত কালের জন্য ছিল কিন্তু তার পুরস্কার হবে চিরন্তন ও স্থায়ী।
১০৯.
অর্থাৎ কিয়ামত, হাশর ও বিচারের দিনের ভয়াবহতা সত্য অস্বীকারকারীদেরকে ভীত, সন্ত্রস্ত, হত-বিহ্বল ও কিংকর্তব্যবিমুঢ় করে দিতে থাকবে এবং তাদের মাঝখানে এ সৎকর্মশীল লোকেরা নিশ্চিন্তে অবস্থান করবে। কারণ এসব কিছু ঘটবে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী। ইতিপূর্বেই আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলদের দেয়া খবর অনুযায়ী তারা ভালোভাবেই জানতো, কিয়ামত হবে, আর একটি ভিন্ন জীবনধারা শুরু হয়ে যাবে এবং সেখানে এসব কিছুই হবে। তাই যারা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এ বিষয়গুলো অস্বীকার করে এসেছে এবং এগুলো থেকে গাফিল থেকেছে তারা যে ধরনের আতংকিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত হবে, এ সৎকর্মশীলরা তেমনটি হবে না। তারপর তাদের নিশ্চিন্ততার আরো কারণ হবে এই যে, তারা এ দিনটির প্রত্যাশা করে এর জন্য প্রস্তুতির কথা চিন্তা করেছিল এবং এখানে সফলতা লাভ করার জন্য কিছু সাজ-সরঞ্জামও দুনিয়া থেকে সঙ্গে করে এনেছিল। তাই তারা তেমন কোন আতংকের শিকার হবে না যেমন আতংকের শিকার হবে এমনসব লোক যারা নিজেদের সমস্ত পুঁজি ও উপায়-উপকরণ দুনিয়াবী কামিয়াবী হাসিলের পেছনে লাগিয়ে দিয়েছিল এবং কখনো একথা চিন্তা করেনি যে, পরকাল বলে একটি জীবন আছে এবং সেখানকার জন্য কিছু সাজ সরঞ্জামও তৈরী করতে হবে। অস্বীকারকারীদের বিপরীতে এ মু’মিনরা এখন নিশ্চিন্ত হবে। তারা মনে করবে, যেদিনের জন্য আমরা অবৈধ লাভ ও আনন্দ ত্যাগ করেছিলাম এবং বিপদ ও কষ্ট বরদাশত করেছিলাম সে দিনটি এসে গেছে, কাজেই এখন এখানে আমাদের পরিশ্রমের ফল নষ্ট হবে না।
১০৯ (ক).
কুরআন মজীদের বহু জায়গায় একথা সুস্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে, আখেরাতে অসৎ কাজের প্রতিদান ঠিক ততটাই দেয়া হবে যতটা কেউ অসৎ কাজ করেছে এবং সৎকাজের প্রতিদান আল্লাহ‌ মানুষের প্রকৃত কাজের তুলনায় অনেক বেশী দেবেন। এ সম্পর্কিত আরো বেশী দৃষ্টান্তের জন্য দেখুন সূরা ইউনুস ২৬-২৭, আল কাসাস-৮৪, আনকাবুত-৭, সাবা ৩৭-৩৮ এবং আল মু’মিন ৪০ আয়াত।
অনুবাদ: