আশ্-শু’আরা

২২৭ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
১১১ ) তারা জবাব দিল, “আমরা কি তোমাকে মেনে নেবো, অথচ নিকৃষ্টতম লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে?” ৮১
قَالُوٓا۟ أَنُؤْمِنُ لَكَ وَٱتَّبَعَكَ ٱلْأَرْذَلُونَ ١١١
১১২ ) নূহ বললো, “তাদের কাজ কেমন, আমি কেমন করে জানবো।
قَالَ وَمَا عِلْمِى بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ١١٢
১১৩ ) তাদের হিসেব গ্রহণ করা তো আমার প্রতিপালকের কাজ।
إِنْ حِسَابُهُمْ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّى لَوْ تَشْعُرُونَ ١١٣
১১৪ ) হায়! যদি তোমরা একটু সচেতন হতে। ৮২ যে ঈমান আনে তাকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়।
وَمَآ أَنَا۠ بِطَارِدِ ٱلْمُؤْمِنِينَ ١١٤
১১৫ ) আমি তো মূলত একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী। ৮৩
إِنْ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٌ مُّبِينٌ ١١٥
১১৬ ) তারা বললো, “হে নূহ! যদি তুমি বিরত না হও, তাহলে তুমি অবশ্যই বিপর্যস্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” ৮৪
قَالُوا۟ لَئِن لَّمْ تَنتَهِ يَٰنُوحُ لَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلْمَرْجُومِينَ ١١٦
১১৭ ) নূহ দোয়া করলো, “হে আমার রব! আমার জাতি আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে। ৮৫
قَالَ رَبِّ إِنَّ قَوْمِى كَذَّبُونِ ١١٧
১১৮ ) এখন আমার ও তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট ফায়সালা করে দাও এবং আমার সাথে যেসব মু’মিন আছে তাদেরকে রক্ষা করো।” ৮৬
فَٱفْتَحْ بَيْنِى وَبَيْنَهُمْ فَتْحًا وَنَجِّنِى وَمَن مَّعِىَ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ ١١٨
১১৯ ) শেষ পর্যন্ত আমি একটি বোঝাই করা নৌযানে তাঁকে ও তাঁর সাথীদেরকে বাঁচিয়ে নিলাম, ৮৭
فَأَنجَيْنَٰهُ وَمَن مَّعَهُۥ فِى ٱلْفُلْكِ ٱلْمَشْحُونِ ١١٩
১২০ ) তারপর অবশিষ্ট লোকদেরকে ডুবিয়ে দিলাম।
ثُمَّ أَغْرَقْنَا بَعْدُ ٱلْبَاقِينَ ١٢٠
৮১.
হযরত নূহের দাওয়াতের এ জবাব যারা দিয়েছিল তারা ছিল সম্প্রদায়ের সরদার, মাতব্বর ও গণ্য মান্য ব্যক্তি। যেমন অন্যান্য জায়গায় এ কাহিনী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ

فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَوْمِهِ مَا نَرَاكَ إِلَّا بَشَرًا مِثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلَّا الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ وَمَا نَرَى لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ

“সে জাতির কাফের সরদাররা বললো, আমরা তো তোমাকে ছাড়া আর কিছুই দেখছি না যে, তুমি নিছক একজন আমাদেরই মত মানুষ এবং আমরা দেখছি একমাত্র এমন সব লোকেরা না বুঝেই তোমার অনুসারী হয়েছে যারা এখানে নিম্ন শ্রেণীর লোক। আর আমরা এমন কোন জিনিসই দেখি না যার বলে তোমরা আমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ।” (হুদঃ ২৭ আয়াত)

এ থেকে জানা যায়, হযরত নূহের প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদের অধিকাংশ ছিল গরীব ও ক্ষুদ্র পেশাদার অথবা এমন পর্যায়ের যুবক জাতির মধ্যে যাদের কোন মর্যাদা ছিল না। অন্যদিকে ছিল উচ্চ শ্রেণীর বিত্তশালী ও প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী লোকেরা। তারা আদাপানি খেয়ে তাঁর বিরোধিতায় নেমেছিল এবং তারাই জাতির সাধারণ লোকদেরকে নানাভাবে প্রতারিত করে নিজেদের দলভূক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এ প্রসঙ্গে তারা হযরত নূহের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি প্রমাণ পেশ করেছিল তার মধ্যে একটি যুক্তি ছিল নিম্নরূপঃ যদি নূহের দাওয়াতের কোন গুরুত্ব থাকতো, তাহলে জাতির প্রধানগণ, উলামায়ে কেরাম, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সম্ভ্রান্ত ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিবর্গ তা গ্রহণ করতো। কিন্তু তাদের কেউ তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি। জাতির হীনবল ও নিম্ন শ্রেণীর কিছু অবুঝ লোক তাঁর দলে ভিড়েছে। এ অবস্থায় আমাদের মতো উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন লোকেরা কি এসব অজ্ঞ ও নিম্নশ্রেণীর লোকদের দলে শামিল হয়ে যাবে?

এ একই কথা কুরাইশ বংশীয় কাফেররা নবী ﷺ সম্পর্কে বলতো। তারা বলতো, দাস ও দরিদ্র লোকেরা অথবা কয়েকজন অবুঝ ছোকরাই তো এঁর অনুসারী। জাতির প্রধান ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ এঁর সাথে নেই। আবু সুফিয়ান হিরাকলের প্রশ্নের জবাবেও একথাই বলেছিলেনঃ تبعه منا الضُّعَفَاءُ وَالْمَسَاكِينُ (আমাদের গরীব ও দুর্বল লোকেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারী হয়েছে।) তাদের চিন্তাধারা যেন এ ধরণের ছিলঃ জাতির প্রধানরা যাকে সত্য বলে মনে করে তা-ই একমাত্র সত্য। কারণ একমাত্র তারাই বুদ্ধি-জ্ঞানের অধিকারী। আর ছোট লোকদের ব্যাপারে বলা যায়, তাদের ছোট হওয়াই একথা প্রমাণ করে যে, তারা বুদ্ধিহীন ও দুর্বল সিদ্ধান্তের অধিকারী। তাই তাদের কোন কথা মেনে নেয়া এবং বড় লোকদের কথা প্রত্যাখ্যান করার পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে এই যে, সেটি একটি গুরুত্বহীন কথা। বরং মক্কার কাফেররা তো এর চাইতেও অগ্রসর হয়ে এ মর্মে যুক্তি পেশ করতো যে, কোন মামুলী ও সাধারণ লোক নবী হতে পারে না। আল্লাহ‌ যদি সত্যিই কোন নবী পাঠাতে চাইতেন তাহলে কোন বড় সমাজপতিকে নবী করে পাঠাতেনঃ

وَقَالُوا لَوْلَا نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ

“তারা বলে, এ কুরআন আমাদের দু‘টি বড় নগরীর (মক্কা ও তায়েফ) কোন প্রভাবশালী লোকের প্রতি নাযিল করা হলো না কেন? (আয্ যুখরুফঃ ৩১ আয়াত)

৮২.
এটি তাদের আপত্তির প্রথম জবাব। যেমন উপরে বলা হয়েছে, তাদের আপত্তির ভিত্তি ছিল একটি কাল্পনিক সিদ্ধান্তের উপর। সেটি ছিলঃ গরীব, শ্রমজীবী এবং যারা নিম্ন শ্রেণীর কাজ করে অথবা যারা সমাজের নিম্ন শ্রেণীর সাথে যুক্ত। তাদের কোন বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা থাকে না। তারা জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক শূন্য হয়। তাই তাদের ঈমান কোন চিন্তা ও দূরদৃষ্টির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তাদের আকীদা বিশ্বাস নির্ভরযোগ্য নয়। তাদের কর্মকাণ্ডের কোন গুরুত্ব নেই। নূহ এর জবাবে বলেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে এসে ঈমান আনে এবং একটি আকীদা গ্রহণ করে সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকে তার একাজের পেছনে কোন্ ধরনের উদ্যোগ কাজ করছে এবং তা কতটুকু মূল্য ও মর্যাদার অধিকারী তা জানার কোন মাধ্যম আমার কাছে নেই। এ বিষয়গুলো দেখা এবং এগুলোর হিসেব রাখা আল্লাহর কাজ, আমার ও তোমাদের নয়।
৮৩.
এটি তাদের আপত্তির দ্বিতীয় জবাব। তাদের আপত্তির মধ্যে এ কথা প্রচ্ছন্ন ছিল যে, হযরত নূহের চারদিকে মু’মিনদের যে দলটি সমবেত হচ্ছে তারা যেহেতু আমাদের সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লোক, তাই উচ্চ শ্রেণীর কোন ব্যক্তি এ দলে শামিল হতে পারে না। অন্যকথায় তারা যেন একথা বলছিল, হে নূহ! তোমার প্রতি ঈমান এনে আমরা কি নিজেদেরকেও নিম্ন শ্রেণীর নির্বোধদের দলভূক্ত করবো? আমরা কি দাস, চাকর-বাকর, শ্রমিক ও কায়িক পরিশ্রমকারীদের লাইনে এসে বসে যাবো? হযরত নূহ এর জবাব এভাবে দেন, যারা আমার কথা মানে না আমি তাদের পেছনে দৌড়াতে থাকবো এবং যারা আমার কথা মেনে নেয় তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেবো, এ ধরণের অযৌক্তিক কর্মনীতি আমি কেমন করে অবলম্বন করতে পারি! আমার অবস্থা এমন এক ব্যাক্তির মত যে দাঁড়িয়ে সোচ্চার কন্ঠে একথা ঘোষণা করে দিয়েছে যে, তোমরা মিথ্যা ও বাতিলের পথে চলছো। এ পথে চলার পরিণাম ধ্বংস। আমি তোমাদের যে পথ দেখাচ্ছি তার মধ্যেই রয়েছে তোমাদের সবার সাফল্য ও মুক্তি। এখন যে চাও আমার এ সতর্কবাণী গ্রহণ করে সোজা পথে চলে এসো এবং যে চাও চোখ বন্ধ করে ধ্বংসের পথে চলতে থাকো। আমি তো এমন এক কর্মনীতি অবলম্বন করতে পারি না যার ফলে যে সমস্ত আল্লাহর বান্দা আমার এ সতর্কববাণী শুনে সঠিক সোজা পথ অবলম্বন করার জন্য আমার কাছে আসবে আমি তাদের জাতি, গোত্র, বংশ, পেশা জিজ্ঞেস করবো এবং যদি তারা তোমাদের দৃষ্টিতে “নিম্ন শ্রেণীর” হয়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়ে “অভিজাত” লোকেরা কবে ধ্বংসের পথ ছেড়ে দিয়ে নাজাতের পথে এগিয়ে আসবে সে আশায় বসে থাকবো।

ঠিক এ একই ব্যাপার চলছিল এ আয়াতগুলো নাযিল হবার সময় মক্কার কাফের সমাজ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে। এ জিনিসটি সামনে রাখলে হযরত নূহ ও তাঁর জাতির সরদারদের এ কথোপকথন এখানে শুনানো হচ্ছে কেন তা বুঝা যেতে পারে। মক্কার কাফেরদের বড় বড় সরদার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতো, আমরা এই বেলাল, আম্মার, সুহাইবের মতো গোলাম এবং শ্রমজীবী মানুষের সাথে কেমন করে বসতে পারি। তাদের কথার অর্থ যেন এ ছিল যে, মু’মিনদের দল থেকে যদি এ গরীবদের বের করে দেয়া হয় তাহলেই না এ অভিজাতদের ওদিক মুখো হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। অন্যথায় সুলতান মাহমুদ ও তার ভৃত্য আয়াযের এক কাতারে দাঁড়ানো কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিষ্কার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ নির্দেশ দেয়া হয়, যারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এমন সব অহংকারীদের জন্য ঈমান গ্রহণকারী গরীবদেরকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে নাঃ

أَمَّا مَنِ اسْتَغْنَى - فَأَنْتَ لَهُ تَصَدَّى - وَمَا عَلَيْكَ أَلَّا يَزَّكَّى - وَأَمَّا مَنْ جَاءَكَ يَسْعَى - وَهُوَ يَخْشَى - فَأَنْتَ عَنْهُ تَلَهَّى - كَلَّا إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ - فَمَنْ شَاءَ ذَكَرَهُ

“হে মুহাম্মাদ! যে বেপরোয়া ভাব দেখালো তুমি তার প্রতি মনোযোগী হলে? অথচ যদি সে সংশোধিত না হয়, তাহলে তোমার উপর কি দায়িত্ব আছে? আর যে ব্যক্তি মনে আল্লাহর ভয় নিয়ে তোমার কাছে ছুটে আসে তুমি তাকে অবজ্ঞা করছো? কখখনো না, এতো একটি উপদেশ, যার মন চায় একে গ্রহণ করে নেবে।” (সূরা আবাসাঃ ৫-১২ আয়াত)

وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِنْ شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ- وَكَذَلِكَ فَتَنَّا بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لِيَقُولُوا أَهَؤُلَاءِ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنْ بَيْنِنَا أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِينَ

“যারা দিনরাত নিজেদেরকে রব ডাকছে নিছক তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদেরকে দূরে নিক্ষেপ করো না। তোমার ওপর তাদের কোন দায়দায়িত্ব নেই এবং তাদের ওপরও তোমার কোন দায়দায়িত্ব নেই। এরপরও যদি তুমি তাদেরকে দূরে নিক্ষেপ করো তাহলে তুমি জালেমদের মধ্যে গণ্য হবে। আমি তো এভাবে তাদের মধ্য থেকে কতককে কতকের মাধ্যমে পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছি, যাতে তারা বলেঃ ‘আমাদের মধ্যে কি কেবল এ লোকেরাই অবশিষ্ট ছিল, যাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হয়েছে?’ হ্যাঁ, আল্লাহ‌ নিজের কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে কি এরচেয়ে বেশী জানেন না?” (আল আন’আমঃ ৫২ আয়াত)

৮৪.
মূল শব্দগুলো হচ্ছে,لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمَرْجُومِينَ এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে, তোমাকে ‘রজম’ করা হবে। অর্থাৎ পাথর মেরে তোমাকে হত্যা করা হবে। আর দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, চারদিক থেকে তোমাকে গালাগালি করা হবে। যেখানেই যাবে, অভিশাপ দেয়া হবে এবং অপদস্ত করে তাড়িয়ে দেয়া হবে। আরবী বাগধারা অনুযায়ী এ শব্দগুলো থেকে এ দু’টি অর্থ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৮৫.
অর্থাৎ চূড়ান্ত ও শেষ পর্যায়ে মিথ্যা বলে দিয়েছে ও প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপরে আর কোন প্রকার সত্যায়ন করার ও ঈমান আনার আশা থাকে না। আলোচনার বাইরের চেহারা দেখে কেউ যেন এ সন্দেহ পোষণ না করে যে, নবী ও তাঁর সম্প্রদায়ের সরদারদের মধ্যে উপরের কথোপকথন হয় এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রথম প্রত্যাখ্যানের পর নবী আল্লাহর কাছে এ মর্মে রিপোর্ট পেশ করেন যে, তারা আমার নবুওয়াত মানছে না কাজেই এখন আপনি আমার ও তাদের সমস্যার ফায়সালা করে দিন। হযত নূহের (আ) দাওয়াত এবং তাঁর সম্প্রদায়ের কুফরীর ওপর অবিচল থাকার মধ্যে যে শত শত বছর ধরে সুদীর্ঘকালীন সংঘাত চলেছে কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে তা আলোচিত হয়েছে। সূরা আনকাবুতে বলা হয়েছে, সাড়ে নয় শত বছর ধরে এ সংঘাত চলেঃ

فَلَبِثَ فِيهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِينَ عَامًا

“তারপর তিনি তাদের মধ্যে বসবাস করেন সাড়ে নয় শত বছর।” (১৪ আয়াত)

এ দীর্ঘ সময়ে হযরত নূহ বংশ পরম্পরায় তাদের সামাজিক কার্যক্রম দেখে বুঝতে পারেন যে, কেবল তাদের মধ্যেই সত্যকে গ্রহণ করার যোগ্যতা খতম হয়ে যায়নি। বরং তাদের ভবিষ্যত বংশধরদের মধ্যেও সৎ ও ঈমানদার মানুষের জন্ম হবার আশা নেই।

إِنَّكَ إِنْ تَذَرْهُمْ يُضِلُّوا عِبَادَكَ وَلَا يَلِدُوا إِلَّا فَاجِرًا كَفَّارًا

“হে পরওয়ারদিগার! যদি তুমি তাদেরকে ছেড়ে দাও, তাহলে তারা তোমার বান্দাদেরকে গোমরাহ করবে এবং তাদের বংশে যে-ই জন্ম নেবে সে-ই হবে চরিত্রহীন ও কঠোর সত্য অস্বীকারকারী।” (নূহঃ ২৭ আয়াত)

আল্লাহ নিজেও নূহের এ অভিমতকে সঠিক বলে স্বীকার করেন এবং নিজের পূর্ণ ও নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে বলেনঃ

لَنْ يُؤْمِنَ مِنْ قَوْمِكَ إِلَّا مَنْ قَدْ آمَنَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ

“তোমাদের সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া এখন আর ঈমান আনার মত কেউ নেই। কাজেই এখন তাদের কার্যকলাপের জন্য দুঃখ করা থেকে বিরত হও।” (হূদঃ ৩৬ আয়াত)

৮৬.
অর্থাৎ কেবল কে সত্য ও কে মিথ্যা এতটুকু ফায়সালা করে দিলে হবে না বরং এ ফায়সালাকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করো যাতে মিথ্যাপন্থীকে ধ্বংস করে দেয়া যায় এবং সত্যপন্থীকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। “আমার ও আমার মু’মিন সাথীদেরকে রক্ষা করো।” এ শব্দগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ অর্থ প্রকাশ করছে যে, অবশিষ্ট লোকদের প্রতি আযাব নাযিল করো এবং ধরার বুক থেকে তাদেরকে চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন করে দাও।
৮৭.
বোঝাই করা নৌযান অর্থ হচ্ছে, এ নৌকাটি সকল মু’মিন ও সকল প্রাণীতে পরিপূর্ণ ছিল। পূর্বেই এ প্রাণীদের এক একটি জোড়া সঙ্গে নেবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা হূদ ৪০ আয়াত।
অনুবাদ: