আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আন্ নূর

৬৪ আয়াত

আয়াত
-
৬১ ) কোন অন্ধ, খঞ্জ বা রুগ্ন (যদি কারোর গৃহে খেয়ে নেয় তাহলে) কোন ক্ষতি নেই, আর তোমাদের কোন ক্ষতি নেই নিজেদের গৃহে খেলে অথবা নিজেদের বাপ-দাদার গৃহে, নিজেদের মা-নানীর গৃহে, নিজেদের ভাইয়ের গৃহে, নিজেদের বোনের গৃহে, নিজেদের চাচার গৃহে, নিজেদের ফুফুর গৃহে, নিজেদের মামার গৃহে, নিজেদের খালার গৃহে অথবা এমন সব গৃহে যার চাবি তোমাদের হাতে সোপর্দ করে দেয়া হয়েছে কিংবা নিজেদের বন্ধুদের গৃহে। ৯৫ তোমরা এক সাথে খাও বা আলাদা আলাদা, তাতে কোন ক্ষতি নেই। ৯৬ তবে গৃহে প্রবেশ করার সময় তোমরা নিজেদের লোকদের সালাম করো, আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়েছে কল্যাণের দোয়া, বড়ই বরকতপূর্ণ ও পবিত্র। এভাবে আল্লাহ‌ তোমাদের সামনে আয়াত বর্ণনা করেন, আশা করা যায় তোমরা বুঝে শুনে কাজ করবে।
لَّيْسَ عَلَى ٱلْأَعْمَىٰ حَرَجٌۭ وَلَا عَلَى ٱلْأَعْرَجِ حَرَجٌۭ وَلَا عَلَى ٱلْمَرِيضِ حَرَجٌۭ وَلَا عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمْ أَن تَأْكُلُوا۟ مِنۢ بُيُوتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ ءَابَآئِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أُمَّهَـٰتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ إِخْوَٰنِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخَوَٰتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَعْمَـٰمِكُمْ أَوْ بُيُوتِ عَمَّـٰتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخْوَٰلِكُمْ أَوْ بُيُوتِ خَـٰلَـٰتِكُمْ أَوْ مَا مَلَكْتُم مَّفَاتِحَهُۥٓ أَوْ صَدِيقِكُمْ ۚ لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَأْكُلُوا۟ جَمِيعًا أَوْ أَشْتَاتًۭا ۚ فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًۭا فَسَلِّمُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةًۭ مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ مُبَـٰرَكَةًۭ طَيِّبَةًۭ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ٦١
৬২ ) মু’মিন ৯৭ তো আসলে তারাই যারা অন্তর থেকে আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলকে মানে এবং যখন কোন সামষ্টিক কাজে রসূলের সাথে থাকে তখন তার অনুমতি ছাড়া চলে যায় না। ৯৮ যারা তোমার কাছে অনুমতি চায় তারাই আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাসী। কাজেই তারা যখন তাদের কোন কাজের জন্য তোমার কাছে অনুমতি চায় ৯৯ তখন যাকে চাও তুমি অনুমতি দিয়ে দাও ১০০ এবং এ ধরনের লোকদের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করো। ১০১ আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَإِذَا كَانُوا۟ مَعَهُۥ عَلَىٰٓ أَمْرٍۢ جَامِعٍۢ لَّمْ يَذْهَبُوا۟ حَتَّىٰ يَسْتَـْٔذِنُوهُ ۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسْتَـْٔذِنُونَكَ أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ۚ فَإِذَا ٱسْتَـْٔذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَن لِّمَن شِئْتَ مِنْهُمْ وَٱسْتَغْفِرْ لَهُمُ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ٦٢
৬৩ ) হে মুসলমানরা! রসূলের আহবানকে তোমাদের মধ্যে পরস্পরের আহবানের মতো মনে করো না। ১০২ আল্লাহ তাদেরকে ভালো করেই জানেন যারা তোমাদের মধ্যে একে অন্যের আড়ালে চুপিসারে সটকে পড়ে। ১০৩ রসূলের হুকুমের বিরুদ্ধাচারণকারীদের ভয় করা উচিত যেন তারা কোন বিপর্যয়ের শিকার না হয় ১০৪ অথবা তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক আযাব না এসে পড়ে।
لَّا تَجْعَلُوا۟ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُم بَعْضًۭا ۚ قَدْ يَعْلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمْ لِوَاذًۭا ۚ فَلْيَحْذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣
৬৪ ) সাবধান হয়ে যাও, আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু সব আল্লাহরই। তোমরা যে নীতিই অবলম্বন করো আল্লাহ‌ তা জানেন। যেদিন লোকেরা তাঁর দিকে ফিরে যাবে সেদিন তিনি তাদের বলে দেবেন তারা কি সব করে এসেছে। তিনি সব জিনিসের জ্ঞান রাখেন।
أَلَآ إِنَّ لِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۖ قَدْ يَعْلَمُ مَآ أَنتُمْ عَلَيْهِ وَيَوْمَ يُرْجَعُونَ إِلَيْهِ فَيُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوا۟ ۗ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌۢ ٦٤
৯৫.
এ আয়াতটি বুঝতে হলে তিনটি কথা বুঝে নেয়া প্রয়োজন। প্রথমত এ আয়াতটির দু’টি অংশ। প্রথম অংশটি রুগ্ন, খঞ্জ, অন্ধ ও অনুরূপ অন্যান্য অক্ষমদের ব্যাপারে এবং দ্বিতীয় অংশটি সাধারণ লোকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত কুরআনের নৈতিক শিক্ষাবলীর মাধ্যমে আরববাসীদের মন-মানসে যে বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়েছিল সে কারণে হালাল-হারাম ও জায়েয-নাজায়েযের পার্থক্যের ব্যাপারে তাদের অনুভূতি হয়ে উঠেছিল চরম সংবেদশীল। ইবনে আব্বাসের উক্তি অনুযায়ী আল্লাহ যখন তাদের হুকুম দিলেনঃ لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ (একে অন্যের সম্পদ নাজায়েয পথে খেয়ো না) তখন লোকেরা একে অন্যের বাড়িতে খাবার ব্যাপারেও খুব বেশী সতর্কতা অবলম্বন করতে লাগলো। এমনকি যতক্ষণ গৃহ মালিকের দাওয়াত ও অনুমতি একেবারে আইনগত শর্ত অনুযায়ী না হতো ততক্ষণ তারা মনে করতো কোন আত্মীয় ও বন্ধুর বাড়ীতে খাওয়াও জায়েয নয়। তৃতীয়ত এখানে নিজেদের গৃহে খাবার যে কথা বলা হয়েছে তা অনুমতি দেবার জন্য নয় বরং একথা মনের মধ্যে বসিয়ে দেবার জন্য যে, নিজের আত্মীয় ও বন্ধুর বাড়িতে খাওয়াও ঠিক তেমনি যেমন নিজের বাড়িতে খাওয়া। অন্যথায় একথা সবাই জানে, নিজের বাড়িতে খাবার জন্য কারোর অনুমিত নেবার প্রয়োজন ছিল না। এ তিনটি কথা বুঝে নেয়ার পর আয়াতের এ অর্থ সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, অক্ষম ব্যক্তি নিজের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য প্রত্যেক গৃহে ও প্রত্যেক জায়গায় খেতে পারে। তার অক্ষমতাই সমগ্র সমাজে তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে দেয়। তাই যেখান থেকেই সে খাবার জিনিস পাবে তা তার জন্য জায়েয হবে। আর সাধারণ লোকের ব্যাপারে বলা হয় যায়, তাদের জন্য তাদের নিজেদের গৃহ এবং যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের গৃহ সমান। তার মধ্যে যেখানেই তারা খাক না কেন সেজন্য গৃহস্বামীর যথারীতি অনুমতি পেলে তবে খাবে, অন্যথায় তা অবিশ্বস্ততা ও আত্মসাত বলে গণ্য হবে, এ ধরনের কোন শর্তের প্রয়োজন নেই। লোকেরা যদি তাদের মধ্য থেকে কারোর গৃহে যায়, সেখানে গৃহস্বামী উপস্থিত না থাকে এবং তার স্ত্রী-ছেলেমেয়েরা কিছু খাবার নিয়ে আসে তাহলে তারা নিঃসংকোচে তা খেতে পারে।

যেসব আত্মীয়-পরিজনের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে সন্তানদের উল্লেখ এজন্য করা হয়নি যে, সন্তানদের গৃহ নিজেরই গৃহ হয়ে থাকে।

বন্ধুদের ব্যাপারে মনে রাখতে হবে, অন্তরঙ্গ বন্ধুদের কথা বলা হয়েছে, যাদের অনুপস্থিতিতে অতিথি বন্ধুরা যদি তাদের সবকিছু খেয়েও চলে যায় তাহলে তারা নারাজ হওয়া তো দূরের কথা উল্টো আরো খুশিই হবে।

৯৬.
প্রাচীন আরবের কোন কোন গোত্রের আচার ও রীতিনীতি এই ছিল যে, তারা প্রত্যেকে নিজের খাবার নিয়ে আলাদা বসে খেতো। তারা সবাই মিলে এক জায়গায় বসে খাওয়াটা খারাপ মনে করতো। যেমন হিন্দুরা আজও এটা খারাপ মনে করে। অন্যদিকে কোন কোন গোত্র আবার একাকী খাওয়া খারাপ মনে করতো। এমন কি সাথে কেউ খেতে না বসলে তারা অভুক্ত থাকতো। এ আয়াতটি এ ধরনের বিধি-নিষেধ খতম করার জন্য নাযিল করা হয়েছে।
৯৭ .
মুসলমানদের জামায়াতের নিয়ম-শৃংখলা আগের তুলনায় আরো বেশী শক্ত করে দেবার জন্য শেষ নির্দেশাবলী দেয়া হচ্ছে।
৯৮.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে তাঁর স্থলাভিষিক্তগণ এবং ইসলামী জামায়াত ব্যবস্থার আমীরগণের জন্যও এ একই বিধান। কোন সামগ্রীক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ বা শান্তি যে কোন সময় মুসলমানদের যখন একত্র করা হয় তখন আমীরের অনুমতি ছাড়া তাদের ফিরে যাওয়া বা ছড়িয়ে পড়া কোনক্রমেই জায়েয নয়।
৯৯ .
এর মধ্যে এ সতর্কবাণী রয়েছে যে, কোন যথার্থ প্রয়োজন ছাড়া অনুমতি চাওয়া তো আদতেই অবৈধ। বৈধতা কেবল তখনই সৃষ্টি হয় যখন যাবার জন্য কোন প্রকৃত প্রয়োজন দেখা দেয়।
১০০.
অর্থাৎ প্রয়োজন বর্ণনা করার পরও অনুমতি দেয়া বা না দেয়া রসূলের এবং রসূলের পর জামায়াতের আমীরের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। যদি তিনি মনে করেন সামগ্রিক প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রয়োজনের তুলনায় বেশী গুরুত্বপূর্ণ তাহলে অনুমতি না দেবার পূর্ণ অধিকার তিনি রাখেন। এ অবস্থায় একজন মু’মিনের এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকা উচিত নয়।
১০১.
এখানে আবার সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, অনুমতি চাওয়ার মধ্যে যদি সামান্যতম বাহানাবাজীরও দখল থাকে অথবা সামগ্রিক প্রয়োজনের ওপর ব্যক্তিগত প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেবার প্রবণতা সক্রিয় থাকে, তাহলে এ হবে একটি গোনাহ। কাজেই রসূল ও তাঁর স্থলাভিষিক্তের শুধুমাত্র অনুমতি দিয়েই ক্ষান্ত হলে চলবে না বরং যাকেই অনুমতি দেবেন সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলে দেবেন যে, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন।
১০২.
মূলে دُعَاء শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ ডাকা ও আহবান করা হয় আবার দোয়া করাও হয়। তাছাড়া دُعَاءِ الرَّسُول এর মানে রসূলের ডাক বা দোয়াও হতে পারে আবার রসূলের আহবানও হতে পারে। এসব বিভিন্ন অর্থের প্রেক্ষিতে আয়াতের তিনটি অর্থ হতে পারে এবং তিনটি অর্থই সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত।

একঃ “রসূলের আহবানকে কোন সাধারণ মানুষের আহবানের মতো মনে করো না।” অর্থাৎ রসূলের আহবান অস্বাভাবিক গুরুত্বের অধিকারী। অন্য কারোর আহবানে সাড়া দেয়া না দেয়ার স্বাধীনতা আছে কিন্তু রসূলের আহবানে না গেলে বা মনে ক্ষীণতম সংকীর্ণতা অনুভব করলে ঈমান বিপন্ন হয়ে পড়বে।

দুইঃ “রসূলের দোয়াকে সাধারণ মানুষের দোয়ার মতো মনে করো না” তিনি খুশী হয়ে দোয়া করলে তোমাদের জন্য এর চেয়ে বড় আর কোন নিয়ামত নেই আর নারাজ হয়ে বদদোয়া করলে তার চেয়ে বড় আর কোন দুর্ভাগ্য তোমাদের জন্য থাকবে না।

তিনঃ “রসুলকে ডাকা সাধারণ মানুষের একজনের অন্য একজনকে ডাকার মতো হওয়া উচিত নয়।” অর্থাৎ তোমরা সাধারণ লোকদেরকে যেভাবে তাদের নাম নিয়ে উচ্চস্বরে ডাকো সেভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডেকো না। এ ব্যাপারে তাঁর প্রতি চরম শিষ্টাচার ও মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে। কারণ তাঁর প্রতি সামান্যতম বেআদবীর জন্যও আল্লাহর কাছে জবাবদিহির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে না।

১০৩.
মুনাফিকদের আর একটি আলামত হিসেবে একথাটি বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইসলামী সামগ্রিক কাজের জন্য যখন ডাকা হয় তখন তারা এসে যায় ঠিকই কিন্তু এ উপস্থিতি তাদের কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর ও অপছন্দনীয় হয়, ফলে কোন রকম গা ঢাকা দিয়ে তারা সরে পড়ে।
১০৪.
ইমাম জাফর সাদেক (রা.) বিপর্যয় অর্থ করেছেন “জালেমদের কর্তৃত্ব ও প্রতিপত্তি।” অর্থাৎ যদি মুসলমানরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে তাহলে তাদের ওপর জালেম ও স্বৈরাচারী শাসক চাপিয়ে দেয়া হবে। মোটকথা এটাও এক ধরনের বিপর্যয় হতে পারে। আর এছাড়াও আরো অসংখ্য ধরনের বিপর্যয় হওয়া সম্ভবপর। যেমন পরস্পরের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা, গৃহযুদ্ধ, নৈতিক অবক্ষয়, জামা’আতী ব্যবস্থায় বিশৃংখলা, আভ্যন্তরীণ নৈরাজ্য, রাজনৈতিক ও বস্তুগত শক্তি ভেঙ্গে পড়া, বিজাতির অধীন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
অনুবাদ: