আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল আম্বিয়া

১১২ আয়াত

৩১ ) আর আমি পৃথিবীতে পাহাড় বসিয়ে দিয়েছি, যাতে সে তাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে ৩০ এবং তার মধ্যে চওড়া পথ তৈরি করে দিয়েছি, ৩১ হয়তো লোকেরা নিজেদের পথ জেনে নেবে। ৩২
وَجَعَلْنَا فِى ٱلْأَرْضِ رَوَٰسِىَ أَن تَمِيدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجًۭا سُبُلًۭا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ ٣١
৩২ ) আর আমি আকাশকে করেছি একটি সুরক্ষিত ছাদ, ৩৩ কিন্তু তারা এমন যে, এ নিদর্শনাবলীর ৩৪ প্রতি দৃষ্টিই দেয় না।
وَجَعَلْنَا ٱلسَّمَآءَ سَقْفًۭا مَّحْفُوظًۭا ۖ وَهُمْ عَنْ ءَايَـٰتِهَا مُعْرِضُونَ ٣٢
৩৩ ) আর আল্লাহই রাত ও দিন তৈরি করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকেই এক একটি কক্ষপথে সাঁতার কাটছে। ৩৫
وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ ۖ كُلٌّۭ فِى فَلَكٍۢ يَسْبَحُونَ ٣٣
৩৪ ) আর ৩৬ (হে মুহাম্মাদ!) অনন্ত জীবন তো আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে দেইনি; যদি তুমি মরে যাও তাহলে এরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে?
وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍۢ مِّن قَبْلِكَ ٱلْخُلْدَ ۖ أَفَإِي۟ن مِّتَّ فَهُمُ ٱلْخَـٰلِدُونَ ٣٤
৩৫ ) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ৩৭ আর আমি ভালো ও মন্দ অবস্থার মধ্যে ফেলে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছি, ৩৮ শেষ পর্যন্ত তোমাদের আমার দিকে ফিরে আসতে হবে।
كُلُّ نَفْسٍۢ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِ ۗ وَنَبْلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلْخَيْرِ فِتْنَةًۭ ۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ ٣٥
৩৬ ) এ সত্য অস্বীকারকারীরা যখন তোমাকে দেখে, তোমাকে বিদ্রূপের পাত্রে পরিণত করে। বলে, “এ কি সেই ব্যক্তি যে তোমাদের দেব-দেবীদের সমালোচনা করে?” ৩৯ অথচ তাদের নিজেদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা করুণাময়ের যিকরের অস্বীকারকারী। ৪০
وَإِذَا رَءَاكَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ إِن يَتَّخِذُونَكَ إِلَّا هُزُوًا أَهَـٰذَا ٱلَّذِى يَذْكُرُ ءَالِهَتَكُمْ وَهُم بِذِكْرِ ٱلرَّحْمَـٰنِ هُمْ كَـٰفِرُونَ ٣٦
৩৭ ) মানুষ দ্রুততাপ্রবণ সৃষ্টি। ৪১ এখনই আমি তোমাদের দেখিয়ে দিচ্ছি নিজের নিদর্শনাবলী, আমাকে তাড়াহুড়া করতে বলো না। ৪২
خُلِقَ ٱلْإِنسَـٰنُ مِنْ عَجَلٍۢ ۚ سَأُو۟رِيكُمْ ءَايَـٰتِى فَلَا تَسْتَعْجِلُونِ ٣٧
৩৮ ) ---এরা বলে, “এ হুমকি কবে পূর্ণ হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?”
وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَـٰذَا ٱلْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ ٣٨
৩৯ ) হায়! যদি এ কাফেরদের সেই সময়ের কিছু জ্ঞান থাকতো যখন এরা নিজেদের মুখ ও পিঠ আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না এবং এদেরকে কোথাও থেকে সাহায্যও করা হবে না।
لَوْ يَعْلَمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ حِينَ لَا يَكُفُّونَ عَن وُجُوهِهِمُ ٱلنَّارَ وَلَا عَن ظُهُورِهِمْ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ ٣٩
৪০ ) সে আপদ তাদের ওপর আকস্মিকভাবে এসে পড়বে এবং তাদেরকে হঠাৎ এমনভাবে চেপে ধরবে যে, তারা তার প্রতিরোধও করতে পারবে না। এবং মুহূর্তকালের অবকাশও লাভ করতে সক্ষম হবে না।
بَلْ تَأْتِيهِم بَغْتَةًۭ فَتَبْهَتُهُمْ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ رَدَّهَا وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ ٤٠
৩০.
সূরা আন্ নাহাল--- এর ১২ টীকায় এর ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে।
৩১.
অর্থাৎ পাহাড়ের মধ্যে এমন গিরিপথ, ঝরণা ও নদী তৈরী করে দিয়েছি যার মাধ্যমে পার্বত্য এলাকা অতিক্রম করার ও পৃথিবীর এক অংশ থেকে আর এক অংশে চলাফেরা করার জন্য রাস্তা তৈরী হয়ে গেছে। এভাবে পৃথিবীর অন্যান্য অংশকে এমনভাবে গঠন করা হয়েছে যার ফলে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার পথ তৈরী হয়ে যায় বা তৈরী করে নেয়া যেতে পারে।
৩২.
এটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ বাক্য। এর এ অর্থও হয় যে, লোকেরা পৃথিবীতে চলাফেরা করার পথ পাবে, আবার এ অর্থও হয় যে, তারা এই জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, কলাকৌশল, কারিগরি দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা দেখে মূল সত্যে পৌঁছে যাবার পথ পাবে।
৩৩.
ব্যাখ্যার জন্য সূরা আল হিজর, ৮, ১০, ১১ ও ১২ টীকা দেখুন।
৩৪.
অর্থাৎ আকাশে যে নিদর্শনগুলো আছে সেগুলোর দিকে।
৩৫.
كُلٌّ يَسْبَحُونَ শব্দগুলোই একথা জানিয়ে দিচ্ছে যে, এর অর্থ শুধুমাত্র সূর্য ও চন্দ্র নয় বরং মহাশূন্যের অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রও। নয়তো বহুবচনের পরিবর্তে একবচন ব্যবহার করা হতো। فلك শব্দটি আমাদের ভাষায় চক্র শব্দের সমার্থক। আরবী ভাষায় এটি আসমান বা আকাশ শব্দের পরিচিত অর্থই প্রকাশ করে। “সবাই এক একটি ফালাকে (কক্ষপথে) সাঁতরে বেড়াচ্ছে”---এ থেকে দু’টি কথা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। এক, প্রত্যেকের ফালাক বা কক্ষপথ আলাদা। দুই, ফালাক এমন কোন জিনিস নয় যেখানে এ গ্রহ-নক্ষত্রগুলো খুঁটির মতো প্রোথিত আছে এবং তারা নিজেরাই এ খুঁটিগুলো নিয়ে ঘুরছে। বরং তারা কোন প্রবাহমান অথবা আকাশ ও মহাশূন্য ধরনের কোন বস্তু, যার মধ্যে এই গ্রহ-নক্ষত্রের চলা ও গতিশীলতা সাঁতার কাঁটার সাথে সামঞ্জস্য রাখে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইয়াসীন ৩৭ টীকা দেখুন)।

প্রাচীন যুগে লোকদের কাছে আকাশ ও পৃথিবীর একত্র হওয়া (رتق) ও পৃথক হয়ে যাওয়া (فتق) পানি থেকে প্রত্যেক সজীব সত্তাকে সৃষ্টি করা এবং গ্রহ-নক্ষত্রের এক একটি ‘ফালাকে’ সাঁতার কাটার ভিন্ন অর্থ ছিল। বর্তমান যুগে পদার্থবিদ্যা (Physics) জীববিদ্যা (Biology) ও জ্যোতির্বিদ্যার (Astronomy) অত্যাধুনিক তথ্যাবলী আমাদের কাছে তাদের অর্থ ভিন্নতর করে দিয়েছে। আমরা বলতে পারি না, আগামীতে মানুষ যেসব তথ্য সংগ্রহ করবে তার ফলে এ শব্দগুলোর অর্থ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। মোট কথা বর্তমান যুগের মানুষ এ তিনটি আয়াতকে সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক তথ্যাবলী অনুযায়ী পাচ্ছে।

এখানে একথটি অনুধাবন করে নিতে হবে যে, وَلَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ থেকে নিয়ে كَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ পর্যন্ত ভাষণে শিরক খণ্ডন করা হয়েছে এবং أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا ) থেকে নিয়ে فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ পর্যন্ত যা কিছু বলা হয়েছে তার মধ্যে তাওহীদের জন্য ইতিবাচক (Positive) যুক্তি দেয়া হয়েছে। মূল বক্তব্য হচ্ছে, তোমাদের সামনে বিশ্ব-জাহানের এই যে ব্যবস্থা আছে, এর মধ্যে কি কোথাও এক আল্লাহ রব্বুল আলামীন ছাড়া আর কারো কোন সৃষ্টি কৌশল তোমরা দেখতে পাচ্ছো? একাধিক ইলাহদের কর্মকূশলতায় কি এ ধরনের ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে এবং এমন শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতার সাথে বিশ্ব-জাহান চলতে পারে? এ জ্ঞানগর্ভ ব্যবস্থাটি সম্পর্কে কি কোন বুদ্ধিমান ও চিন্তাশীল ব্যক্তি একথা কল্পনা করতে পারেন যে, এটা একজন খেলোয়াড়ের খেলা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং তিনি নিছক নিজের ফূর্তি ও আনন্দ স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য কয়েকটি পুতুল বানিয়ে নিয়েছেন, কিছুক্ষণ খেলা করার পর আবার সেগুলো ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেবেন? এসব কিছু তোমরা নিজেদের চোখে দেখছো এবং এরপরও নবীর কথা মেনে নিতে অস্বীকার করছো? তোমরা কি দেখতে পাচ্ছো না, পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি জিনিস নবী তোমাদের সামনে যে তাওহীদী মতবাদ পেশ করছেন তার সাক্ষ্য দিচ্ছে? এসব নিদর্শনের উপস্থিতিতে তোমরা বলছো فَلْيَأْتِنَا بِآيَةٍ (এ নবী কোন নিদর্শন নিয়ে আসুক)। নবী তাওহীদের দাওয়াতের পক্ষে সাক্ষ্য দেবার জন্য এ নিদর্শনগুলো কি যথেষ্ট নয়?

৩৬.
এখান থেকে আবার ভাষণের মোড় ঘুরে যাচ্ছে নবী ﷺ ও তাঁর বিরোধীদের মধ্যে যে সংঘাত চলছিল সেদিকে।
৩৭.
যে সমস্ত হুমকি-ধমকি, বদদোয়া ও হত্যার ষড়যন্ত্রের সাহায্যে সর্বক্ষণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বাগত জানানো হতো এ হচ্ছে তার সংক্ষিপ্ত জবাব। একদিকে ছিল কুরাইশ নেতারা। তারা প্রতিদিন তাঁর এই প্রচার কার্যের জন্য তাঁকে হুমকি দিতে থাকতো এবং তাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক বিরোধী আবার বসে বসে যে কোনভাবে তাঁকে খতম করে দেবার কথাও ভাবতো। অন্যদিকে যে গৃহের কোন একজন ইসলাম গ্রহণ করতো সে গৃহের সবাই তার শত্রু হয়ে যেতো। মেয়েরা দাঁতে দাঁত পিশে তাঁকে অভিশাপ দিতো এবং বদদোয়া করতো। আর গৃহের পুরুষরা তাঁকে ভয় দেখাতো। বিশেষ করে হাবশায় হিজরাতের পরে মক্কার ঘরে ঘরে বিলাপ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কারণ এমন একটি বাড়ি পাওয়াও কঠিন ছিল যেখান থেকে একজন পুরুষ বা মেয়ে হিজরত করেনি। এরা সবাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে অভিযোগ করে বলতো, এ লোকটি আমাদের পরিবার ধ্বংস করে দিয়েছে। এসব কথার জবাব এ আয়াতে দেয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও উপদেশ দেয়া হয়েছে যে ওদের কোন পরোয়া না করে তুমি নির্ভয়ে নিজের কাজ করে যাও।
৩৮.
অর্থাৎ দুঃখ-আনন্দ, দারিদ্র-ধনাঢ্যতা, জয়-পরাজয়, শক্তিমত্তা-দুর্বলতা, সুস্থতা-রুগ্নতা ইত্যাদি সকল অবস্থায় তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, ভালো অবস্থায় তোমরা অহংকারী, জালেম, আল্লাহ‌ বিস্মৃত ও প্রবৃত্তির দাস হয়ে যাও কিনা। খারাপ অবস্থায় হিম্মত ও সাহস কমে যাওয়ায় নিম্নমানের ও অবমাননাকর পদ্ধতি এবং অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে বসো কি না। কাজেই কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির এ রকমারি অবস্থা বুঝার ব্যাপারে ভুল করা উচিত নয়। সে যে অবস্থারই সম্মুখীন হোক, তাকে অবশ্যই পরীক্ষার এ দিকটি সামনে রাখতে হবে এবং সাফল্যের সাথে একে অতিক্রম করতে হবে। কেবলমাত্র একজন বোকা ও সংকীর্ণমনা লোকই ভাল অবস্থায় ফেরাউনে পরিণত হয় এবং খারাপ অবস্থা দেখা দিলে মাটিতে নাক-খত দিতে থাকে।
৩৯.
অর্থাৎ তাদের সম্পর্কে বিরূপ কথা বলে। এখানে আরো এতটুকু কথা বুঝে নিতে হবে যে, এ বাক্যটি তাদের বিদ্রূপের বিষয়বস্তু বর্ণনা করছে না বরং বিদ্রূপ করার কারণ ও ভিত্তিভূমির ওপর আলোকপাত করছে। একথা সুস্পষ্ট যে, এ বাক্যটি মূলত কোন বিদ্রূপাত্মক বাক্য নয়। বিদ্রূপ তারা অন্যভাবে করে থাকবে এবং এজন্য কোন অন্য ধরনের ধ্বনি দিয়েও বাক্য উচ্চারণ করে থাকবে। তবে তিনি তাদের মনগড়া উপাস্যদের প্রভুত্ব কর্তৃত্ব প্রত্যাখ্যান করতেন বলেই তারা এভাবে মনের ঝাল মিটাতো।
৪০.
অর্থাৎ মূর্তি ও বানোয়াট ইলাহদের বিরোধিতা তাদের কাছে এত বেশী অপ্রীতিকর যে, এর প্রতিশোধ নেবার জন্য তোমার প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও অবমাননা করে, কিন্তু তারা যে আল্লাহ‌ বিমুখ এবং আল্লাহর নামোল্লেখে তারা ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়, নিজেদের এ অবস্থার জন্য তাদের লজ্জাও হয় না।
৪১.
মূলে خُلِقَ الْإِنْسَانُ مِنْ عَجَلٍ বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। এর শাব্দিক অনুবাদ হয়, “মানুষকে দ্রুততা প্রবণতা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।” কিন্তু এই শাব্দিক অর্থ বাক্যের উদ্দেশ্য নয়। আমরা যেমন নিজের ভাষায় বলি, অমুক ব্যক্তি জ্ঞানের সাগর এবং লোকটি পাষাণ হৃদয়, ঠিক তেমনি আরবী ভাষায় বলা হয়, তাকে অমুক জিনিস থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এর অর্থ হয়, অমুক জিনিসটি তার প্রকৃতিগত। এখানে خُلِقَ الْإِنْسَانُ مِنْ عَجَلٍ বলে যে অর্থ নেয়া হয়েছে অন্য জায়গায় وَكَانَ الْإِنْسَانُ عَجُولًا “মানুষ দ্রুততা প্রবণ প্রমাণিত হয়েছে” (বনী ইসরাঈলঃ ১১) বলে সেই একই অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে।
৪২.
পরবর্তী ভাষণ পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, এখানে “নিদর্শনাবলী” বলতে কি বুঝাচ্ছে। তারা যেসব কথা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো তার মধ্যে আল্লাহর আযাব, কিয়ামত ও জাহান্নামের বিবরণও ছিল। তারা বলতো, এ ব্যক্তি প্রতিদিন আমাদের ভয় দেখায়, বলে আমাকে অস্বীকার করলে আল্লাহর আযাব আপতিত হবে, কিয়ামতে তোমাদের শাস্তি দেয়া হবে এবং তোমাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত করা হবে। কিন্তু আমরা প্রতিদিন অস্বীকার করছি এবং হেসে কুঁদে বেড়াচ্ছি, কোন আযাব আসতে দেখা যাচ্ছে না এবং কোন কিয়ামতও হচ্ছে না। এ আয়াতগুলোয় এরই জবাব দেয়া হয়েছে।
অনুবাদ: