এর একটি মজার দৃষ্টান্ত হচ্ছে তোফাইল ইবনে আমর দাওসীর ঘটনা। ইবনে ইসহাক বিস্তারিত আকারে তাঁর নিজের মুখেই এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলছেনঃ আমি দাওস গোত্রের একজন কবি ছিলাম। কোন কাজে মক্কায় গিয়েছিলাম। সেখানে পৌঁছতেই কুরাইশদের কয়েকজন লোক আমাকে ঘিরে ফেললো এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে আমাকে অনেক কথা বললো। ফলে তাঁর সম্পর্কে আমার মনে খারাপ ধারণা জন্মালো। আমি স্থির করলাম, তাঁর কাছ থেকে দূরে থাকবো। পরদিন আমি হারাম শরীফে গেলাম। দেখলাম তিনি কা’বা গৃহের কাছে নামায পড়ছেন। তাঁর মুখ নিঃসৃত কয়েকটি বাক্য আমার কানে পড়লো। আমি অনুভব করলাম, বড় চমৎকার বাণী। মনে মনে বললাম, আমি কবি, যুবক, বুদ্ধিমান। আমি কোন শিশু নই যে, ঠিক ও বেঠিকের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবো না। তাহলে এ ব্যক্তি কি বলেন, এঁর সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করি না কেন। তাই নবী ﷺ যখন নামায শেষ করে চলে যেতে লাগলেন তখন আমি তাঁর পিছু নিলাম। তাঁর গৃহে পৌঁছে তাঁকে বললাম, আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনার সম্পর্কে আমাকে এসব কথা বলেছিল, ফলে আমি আপনার ব্যাপারে এতই খারাপ ধারণা পোষণ করেছিলাম যে, নিজের কানে তুলো ঠেসে দিয়েছিলাম, যাতে আপনার কথা শুনতে না পাই। কিন্তু এখনই যে কয়েকটি বাক্য আমি আপনার মুখ থেকে শুনেছি তা আমার কাছে বড়ই চমৎকার মনে হয়েছে। আপনি কি বলেন, আমাকে একটু বিস্তারিতভাবে জানান। জবাবে নবী ﷺ আমাকে কুরআনের একটি অংশ শুনালেন। তাতে আমি এত বেশী প্রভাবিত হয়ে পড়লাম যে, তখনই ইসলাম গ্রহণ করে ফেললাম। সেখান থেকে ফিরে গিয়ে আমি নিজের পিতা ও স্ত্রীকে মুসলমান করলাম। এরপর নিজের গোত্রের মধ্যে অবিরাম ইসলাম প্রচারের কাজ করতে লাগলাম। এমন কি খন্দকের যুদ্ধের সময় পর্যন্ত আমার গোত্রের সত্তর আশিটি পরিবার ইসলাম গ্রহণ করে ফেললো। (ইবনে হিশাম, ২ খণ্ড, ২২-২৪ পৃঃ)
ইবনে ইসহাক যে আর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন তা থেকে জানা যায় যে, কুরাইশ সরদাররা নিজেদের মাহফিলগুলোতে নিজেরাই একথা স্বীকার করতো যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে তারা যেসব কথা তৈরী করে সেগুলো নিছক মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি লিখেছেনঃ একটি মজলিসে নযর ইবনে হারেস বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলে, “তোমরা যেভাবে মুহাম্মাদের মোকাবিলা করছো তাতে কোন কাজ হবে না। সে যখন যুবক ছিল তখন তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সদাচারী ব্যক্তি ছিল। সবচেয়ে বড় সত্যনিষ্ঠ ও সবচেয়ে বেশী বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত ছিল। আর এখন তার চুল সাদা হতে যাচ্ছে, এখন তোমরা বল কিনা সে যাদুকর, গণক, কবি, পাগল। আল্লাহর কসম সে যাদুকর নয়। আমি যাদুকরদের দেখেছি এবং তাদের ঝাড়ফুঁক সম্পর্কেও জানি। আল্লাহর কসম, সে গণক নয়। আমি গণকদের তন্ত্রমন্ত্র শুনেছি, তারা যেসব রহস্যময় ও বহুমুখী কথা বলে থাকে তা আমি জানি। আল্লাহর কসম, সে কবিও নয়। কবিতার বিভিন্ন প্রকারের সাথে আমি পরিচিত। তাঁর বাণী এর কোন প্রকারের মধ্যেই পড়ে না। আল্লাহর কসম, সে পাগলও নয়। পাগল যে অবস্থায় থাকে এবং সে যে প্রলাপ বকে সে ব্যাপারে কি আমরা কেউ অনভিজ্ঞ? হে কুরাইশ সরদাররা! অন্য কিছু চিন্তা করো। তোমরা যে বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছো এসব ঠুনকো কথায় তাঁকে পরাজিত করবে, ব্যাপারটা অতটা সহজ নয়।” এরপর সে এই প্রস্তাব পেশ করলো, আরবের বাহির থেকে রুস্তম ও ইসফিনদিয়ারের কাহিনী এনে ছড়াতে হবে। লোকেরা সেদিকে আকৃষ্ট হবে এবং তা তাদের কাছে কুরআনের চাইতেও বেশী বিস্ময়কর মনে হবে। সেই অনুসারে কিছুদিন এই পরিকল্পনা কার্যকর করার কাজ চলতে লাগলো এবং নযর নিজেই গল্প বলার কাজ শুরু করে দিল। (ইবনে হিশাম, ১ খণ্ড, ৩২০-৩২১পৃঃ)