“লোকদের অলংকারের বোঝায় আমরা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম”-এ বাক্যের সোজা অর্থ হচ্ছে এই যে, আমাদের পুরুষ ও মেয়েরা মিসরের রীতি অনুযায়ী যেসব ভারী গহনা পরেছিল তা এ মরুচারী জীবনে আমাদের জন্য বোঝার পরিণত হয়েছিল। এ বোঝা আর কতদিন বয়ে বেড়াবো এ চিন্তায় আমরা পেরেশান হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী এ গহনাগুলো মিসর ত্যাগ করার সময় প্রত্যেক ইসরাঈলী নারী ও পুরুষ তাদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে নিয়েছিল। এভাবে তারা প্রত্যেকে নিজেদের প্রতিবেশীদেরকে লুট করে রাতারাতি হিজরত করার জন্য বেরিয়ে পড়েছিল। প্রত্যেক ইসরাঈলী নিজেই এ কাজে ব্রতী হয়েছিল, এ নৈতিক কর্মকাণ্ডটি শুধুমাত্র এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং এ মহত কর্মটি আল্লাহর নবী হযরত মূসা (আ) তাদেরকে শিখিয়েছিলেন এবং নবীকেও এ নির্দেশ দিয়েছিলেন আল্লাহ নিজেই। দেখুন বাইবেলের যাত্রাপুস্তক এ ব্যাপারে কি বলেঃ
“ঈশ্বর মোশিকে কহিলেন……তুমি যাও ইস্রায়েলের প্রাচীনগণকে একত্র কর, তাহাদিগকে এই কথা বল, ……তোমরা যাত্রাকালে রিক্তহস্তে যাইবে না, কিন্তু প্রত্যেক স্ত্রী আপন আপন প্রতিবাসিনী কিম্বা গৃহে প্রবাসানী স্ত্রীর কাছে রৌপ্যালংকার, স্বর্ণালংকার ও বস্ত্র চাহিবে; এবং তোমরা তাহা আপন আপন পুত্রদের ও কন্যাদের গাত্রে পরাইবে, এই রূপে তোমরা মিস্রীয়দের দ্রব্য হরণ করিবে।” (৩: ১৪-২২)
“আর সদাপ্রভু মোশিকে বলিলেন, ……তুমি লোকদের কর্ণগোচরে বল, আর প্রত্যেক পুরুষ আপন আপন প্রতিবাসী হইতে ও প্রত্যেক স্ত্রী আপন আপন প্রতিবাসিনী হইতে রৌপ্যালংকার ও স্বর্ণালংকার চাহিয়া লউক। আর সদাপ্রভু মিস্রীয়দের দৃষ্টিতে লোকদিগকে অনুগ্রহের পাত্র করিলেন।” (১১: ১-৩)
“আর ইস্রায়েল সন্তানেরা মোশির বাক্যানুসারে কার্য করিল; ফলে তাহারা মিস্রীয়দের কাছে রৌপ্যলংকার, স্বর্ণালংকার ও বস্ত্র চাহিল; আর সদাপ্রভু মিস্রীয়দের দৃষ্টিতে তাহাদিগকে অনুগ্রহ পাত্র করিলেন, তাই তাহারা যাহা চাহিল, মিস্রীয়রা তাহাদিগকে তাহাই দিল। এইরূপে তাহারা মিস্রীয়দের ধন হরণ করিল।” (১২: ৩৫-৩৬)
দুঃখের বিষয় আমাদের মুফাসসিরগণও কুরআনের এ আয়াতের ব্যাখ্যায় এ বর্ণনা চোখ বন্ধ করে উদ্ধৃত করেছেন এবং তাদের এ ভুলের কারণে মুসলমানদের মধ্যে এ চিন্তা ছড়িয়ে পড়েছে যে, অলংকারের এ বোঝা আসলে ছিল লুটের বোঝা।
আয়াতের দ্বিতীয় অংশ “আমরা স্রেফ সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম” এর অর্থ আমি যা বুঝেছি তা হচ্ছে এই যে, যখন নিজেদের গহনাপাতির বোঝা বইতে বইতে লোকেরা ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে গেছে তখন পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত হয়ে থাকবে যে, সবার গহনাপাতি এক জায়গায় জমা করা হোক এবং কার সোনা ও রূপা কি পরিমাণ আছে তা লিখে নেয়া হোক, তারপর এগুলো গলিয়ে ইট ও শলাকায় পরিণত করা হোক। এভাবে জাতির সামগ্রিক মালপত্রের সাথে গাধা ও গরুর পিঠে এগুলো উঠিয়ে দেয়া যাবে। কাজেই এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের যাবতীয় অলংকার এনে অলংকারের স্তূপের ওপর নিক্ষেপ করে গিয়ে থাকবে।