আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল বাকারাহ

২৮৬ আয়াত

৫১ ) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন আমরা মূসাকে চল্লিশ দিন-রাত্রির জন্য ডেকে নিয়েছিলাম, ৬৭ তখন তার অনুপস্থিতিতে তোমরা বাছুরকে নিজেদের উপাস্যে ৬৮ পরিণত করেছিল। সে সময় তোমরা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করেছিলে।
وَإِذْ وَٰعَدْنَا مُوسَىٰٓ أَرْبَعِينَ لَيْلَةًۭ ثُمَّ ٱتَّخَذْتُمُ ٱلْعِجْلَ مِنۢ بَعْدِهِۦ وَأَنتُمْ ظَـٰلِمُونَ ٥١
৫২ ) কিন্তু এরপরও আমরা তোমাদের মাফ করে দিয়েছিলাম এ জন্য যে, হয়তো এবার তোমরা কৃতজ্ঞ হবে।
ثُمَّ عَفَوْنَا عَنكُم مِّنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ٥٢
৫৩ ) স্মরণ করো (ঠিক যখন তোমরা এই যুলুম করছিলে সে সময়) আমরা মূসাকে কিতাব ও ফুরকান ৬৯ দিয়েছিলাম, যাতে তার মাধ্যমে তোমরা সোজা পথ পেতে পারো।
وَإِذْ ءَاتَيْنَا مُوسَى ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْفُرْقَانَ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ٥٣
৫৪ ) স্মরণ করো যখন মূসা(এই নিয়ামত নিয়ে ফিরে এসে) নিজের জাতিকে বললো, “হে লোকেরা! তোমরা বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে নিজেদের ওপর বড়ই যুলুম করেছো, কাজেই তোমরা নিজেদের স্রষ্টার কাছে তাওবা করো এবং নিজেদেরকে হত্যা করো, ৭০ এরই মধ্যে তোমাদের স্রষ্টার কাছে তোমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সে সময় তোমাদের স্রষ্টা তোমাদের তাওবা কবুল করে নিয়েছিলেন, কারণ তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী।
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِۦ يَـٰقَوْمِ إِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ أَنفُسَكُم بِٱتِّخَاذِكُمُ ٱلْعِجْلَ فَتُوبُوٓا۟ إِلَىٰ بَارِئِكُمْ فَٱقْتُلُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ عِندَ بَارِئِكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ٥٤
৫৫ ) স্মরণ করো, যখন তোমরা মূসাকে বলেছিলে, “আমরা কখনো তোমার কথায় বিশ্বাস করবো না, যতক্ষণ না আমরা স্বচক্ষে আল্লাহকে তোমার সাথে প্রকাশ্যে (কথা বলতে) দেখবো।” সে সময় তোমাদের চোখের সামনে তোমাদের ওপর একটি ভয়াবহ বজ্রপাত হলো, তোমরা নিস্প্রাণ হয়ে পড়ে গেলে।
وَإِذْ قُلْتُمْ يَـٰمُوسَىٰ لَن نُّؤْمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَى ٱللَّهَ جَهْرَةًۭ فَأَخَذَتْكُمُ ٱلصَّـٰعِقَةُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ ٥٥
৫৬ ) কিন্তু আবার আমরা তোমাদের বাঁচিয়ে জীবিত করলাম, হয়তো এ অনুগ্রহের পর তোমরা কৃতজ্ঞ হবে। ৭১
ثُمَّ بَعَثْنَـٰكُم مِّنۢ بَعْدِ مَوْتِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ٥٦
৫৭ ) আমরা তোমাদের ওপর মেঘমালার ছায়া দান করলাম, ৭২ তোমাদের জন্য সরবরাহ করলাম মান্না ও সালওয়ার খাদ্য ৭৩ এবং তোমাদের বললাম, যে পবিত্র দ্রব্য-সামগ্রী আমরা তোমাদের দিয়েছি তা থেকে খাও। কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষরা যা কিছু করেছে তা আমাদের ওপর যুলুম ছিল না বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে।
وَظَلَّلْنَا عَلَيْكُمُ ٱلْغَمَامَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْكُمُ ٱلْمَنَّ وَٱلسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا۟ مِن طَيِّبَـٰتِ مَا رَزَقْنَـٰكُمْ ۖ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـٰكِن كَانُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ٥٧
৫৮ ) আরো স্মরণ করো যখন আমরা বলেছিলাম, “তোমাদের সামনের এই জনপদে ৭৪ প্রবেশ করো এবং সেখানকার উৎপন্ন দ্রব্যাদি যেমন ইচ্ছা খাও মজা করে। কিন্তু জনপদের দুয়ারে সিজদাবনত হয়ে প্রবেশ করবে ‘হিত্তাতুন’ ‘হিত্তাতুন’ বলতে বলতে। ৭৫ আমরা তোমাদের ত্রুটিগুলো মাফ করে দেবো এবং সৎকর্মশীলদের প্রতি অত্যধিক অনুগ্রহ করবো।”
وَإِذْ قُلْنَا ٱدْخُلُوا۟ هَـٰذِهِ ٱلْقَرْيَةَ فَكُلُوا۟ مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَدًۭا وَٱدْخُلُوا۟ ٱلْبَابَ سُجَّدًۭا وَقُولُوا۟ حِطَّةٌۭ نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطَـٰيَـٰكُمْ ۚ وَسَنَزِيدُ ٱلْمُحْسِنِينَ ٥٨
৫৯ ) কিন্তু যে কথা বলা হয়েছিল যালেমরা তাকে বদলে অন্য কিছু করে ফেললো। শেষ পর্যন্ত যুলুমকারীদের ওপর আমরা আকাশ থেকে আযাব নাযিল করলাম। এ ছিল তারা যে নাফরমানি করছিল তার শাস্তি।
فَبَدَّلَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ قَوْلًا غَيْرَ ٱلَّذِى قِيلَ لَهُمْ فَأَنزَلْنَا عَلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ رِجْزًۭا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ بِمَا كَانُوا۟ يَفْسُقُونَ ٥٩
৬০ ) স্মরণ করো, যখন মূসা তার জাতির জন্য পানির দোয়া করলো, তখন আমরা বললাম, অমুক পাথরের ওপর তোমার লাঠিটি মারো। এর ফলে সেখান থেকে বারোটি ঝর্ণাধারা উৎসারিত হলো। ৭৬ প্রত্যেক গোত্র তার পানি গ্রহণের স্থান জেনে নিল। (সে সময় এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, ) আল্লাহ‌ প্রদত্ত রিযিক খাও, পান করো এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।
۞ وَإِذِ ٱسْتَسْقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِۦ فَقُلْنَا ٱضْرِب بِّعَصَاكَ ٱلْحَجَرَ ۖ فَٱنفَجَرَتْ مِنْهُ ٱثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًۭا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍۢ مَّشْرَبَهُمْ ۖ كُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ مِن رِّزْقِ ٱللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا۟ فِى ٱلْأَرْضِ مُفْسِدِينَ ٦٠
৬৭ .
মিসর থেকে মুক্তি লাভ করার পর বনী ইসরাঈল যখন সাইনা (সিনাই) উপদ্বীপে পৌঁছে গেলো তখন মহান আল্লাহ‌ হযরত মূসা আলাইহিস সাল্লামকে চল্লিশ দিন-রাতের জন্য তূর পাহাড়ে ডেকে নিলেন। ফেরাউনের দাসত্ব মুক্ত হয়ে যে জাতিটি এখন মুক্ত পরিবেশে স্বাধীন জীবন যাপন করছে তার জন্য শরীয়াতের আইন এবং জীবন যাপনের বিধান দান করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। (বাইবেল, নির্গমন পুস্তক, ২৪-৩১ পরিচ্ছেদ দেখুন)
৬৮.
বনী ইসরাঈলদের প্রতিবেশী জাতিদের মধ্যে গাভী ও ষাঁড় পূজার রোগ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল। মিসর ও কেনানে এর প্রচলন ছিল অত্যন্ত ব্যাপক। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সাল্লামের পর বনী ইসরাঈল যখন অধঃপতনের শিকার হলো এবং ধীরে ধীরে কিবতীদের দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে পড়লো তখন অন্যান্য আরো বহু রোগের মধ্যে এ রোগটিও তারা নিজেদের শাসকদের থেকে গ্রহণ করেছিলো। (বাছুর পূজার এ ঘটনাটি বাইবেলের নির্গমন পুস্তকের ৩২ অনুচ্ছেদে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।)
৬৯.
ফুরকান হচ্ছে এমন একটি জিনিস যার মাধ্যমে হক ও বাতিলের মধ্যকার পার্থক্য সুস্পষ্ট করে তোলা হয়। আমাদের ভাষায় এই অর্থটিকে সুস্পষ্ট করার জন্য সবচাইতে কাছাকাছি শব্দ হচ্ছে ‘মানদণ্ড। এখানে ফুরকানের মানে হচ্ছে দ্বীনের এমন জ্ঞান, বোধ ও উপলব্ধি যার মাধ্যমে মানুষ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।
৭০.
অর্থাৎ তোমাদের যেসব লোক গো-শাবককে উপাস্য বানিয়ে তার পূজা করেছে তাদেরকে হত্যা করো।
৭১.
এখানে যে ঘটনাটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটি হচ্ছেঃ চল্লিশ-রাতের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হযরত মূসা আলাইহিস সাল্লাম যখন তূর পাহাড়ে চলে গেলেন, আল্লাহ তাঁকে হুকুম দিলেন বনী ইসরাঈলের সত্তর জন প্রতিনিধিকেও তাঁর সাথে নিয়ে আসার। তারপর মহান আল্লাহ মূসা আলাইহিস সাল্লামকে কিতাব ও ফুরকান দান করলেন। তিনি তা ঐ প্রতিনিধিদের সামনে পেশ করলেন। কুরআন বলছে, ঠিক তখনই তাদের মধ্য থেকে কয়েক জন দুষ্ট প্রকৃতির লোক বলতে থাকলো, মহান আল্লাহ আপনার সাথে কথা বলেছেন একথাটি আমরা শুধুমাত্র আপনার কথায় কেমন করে মেনে নিতে পারি? তাদের একথায় আল্লাহর ক্রোধ উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠলো এবং তিনি তাদেরকে শাস্তি দিলেন। কিন্তু এ ব্যাপারে বাইবেল বলছেঃ

“তারা ইসরাঈলের খোদাকে দেখেছে। তাঁর চরণ তলের স্থানটি ছিল নীলকান্তমণি খচিত পাথরের চত্বরের ন্যায়। আকাশের মতো ছিল তার স্বচ্ছতা ও ঔজ্জ্বল্য। তিনি বনী ইসরাঈলের সম্মানিত ব্যক্তিদের ওপর নিজের হাত প্রসারিত করেননি। কাজেই তারা খোদাকে দেখেছে, খেয়েছে এবং পান করেছে।” (নির্গমন পুস্তক, ২৪ অনুচ্ছেদ, ১০-১১ শ্লোক)।

মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, এই বাইবেলের আরো সামনের দিকে গিয়ে বলা হয়েছেঃ “যখন হযরত মূসা (আঃ) খোদার কাছে আরজ করলেন, আমাকে তোমার প্রতাপ ও জ্যোতি দেখাও। জবাবে তিনি বললেন, তুমি আমাকে দেখতে পারো না।” (নির্গমন পুস্তক, ৩৩ অনুচ্ছেদ, ১৮-২৩ শ্লোক)।

৭২.
অর্থাৎ প্রখর রৌদ্র থেকে বাঁচার জন্য যেখানে সিনাই উপদ্বীপে তোমাদের জন্য কোন আশ্রয়স্থল ছিল না সেখানে আমরা মেঘমালার ছায়া দান করে তোমাদের বাঁচার উপায় করে দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, লক্ষ লক্ষ বনী ইসরাঈর মিসর থেকে বের হয়ে এসেছিল। আর সিনাই উপত্যকায় গৃহ তো দূরের কথা সামান্য একটু মাথা গোঁজার মতো তাঁবুও তাদের কাছে ছিল না। সে সময় যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ সময়ের জন্য আকাশকে মেঘাবৃত করে রাখা না হতো, তাহলে খর-রৌদ্র –তাপে বনী ইসরাঈলী জাতি সেখানেই ধ্বংস হয়ে যেতো।
৭৩.
মান্না ও সালওয়া ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত এক প্রকার প্রাকৃতিক খাদ্য। বনী ইসরাঈররা তাদের বাস্তুহারা জীবনের সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নভাবে এই খাদ্য লাভ করতে থেকেছে। মান্না ছিল ধনিয়ার ধানার মতো ক্ষুদ্রাকৃতির এক ধরনের খাদ্য। সেগুলোর বর্ষণ হতো কুয়াসার মতো। জমিতে পড়ার পর জমে যেতো। আর সালওয়া ছিল ক্ষুদ্রাকৃতির কবুতরের মতো এক প্রকার পাখি। আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে এই খাদ্যের বিপুল প্রাচুর্য ছিল। বিপুল জনসংখ্যার অধিকারী একটি জাতি দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই খাদ্যের ওপর জীবন নির্বাহ করেছে। তাদের কাউকে কোনদিন অনাহারে থাকতে হয়নি। অথচ আজকের উন্নত বিশ্বের কোন দেশে যদি হঠাৎ কয়েক লাখ শরণার্থী প্রবেশ করে তাহলে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা একটি প্রাণান্তকর সমস্যায় পরিণত হয়। (মান্না ও সালওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে বাইবেলের নির্গমন পুস্তকঃ ১৬ অনুচ্ছেদ, গণনাঃ ১১ অনুচ্ছেদ, ৭-৯ ও ৩১-৩৬ শ্লোক এবং ঈশুঃ ৫ অনুচ্ছেদ, ১২ শ্লোক)
৭৪.
এখনো পর্যন্ত যথার্থ অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ জনপদটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে যে ঘটনা পরস্পরায় এর উল্লেখ হয়েছে তা এমন এক যুগের সাথে সম্পর্কিত যখন বনী ইসরাঈল সাইনা উপদ্বীপেই অবস্থান করছিল। তাতেই মনে হয়, উল্লেখিত জনপদটির অবস্থান এ উপদ্বীপের কোথাও হবে। কিন্তু এ জনপদটি ‘সিত্তীম’ও হতে পারে। সিত্তীম শহরটি ‘ইয়ারীহো’ –এর ঠিক বিপরীত দিকে জর্দান নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত ছিল। বাইবেলে উল্লেখিত হয়েছে, বনী ইসরাঈলরা মূসার (আ) জীবনের শেষ অধ্যায়ে এ শহরটি জয় করেছিল। সেখানে তারা ব্যাপক ব্যভিচার করে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে ভয়াবহ মহামারীর শিকারে পরিণত করেন এবং এতে চব্বিশ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। (গণনা, ২৫ অনুচ্ছেদ, ১-৮ শ্লোক)
৭৫.
অর্থাৎ তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল। স্বেচ্ছাচারী যালেম বিজয়ীদের মতো অহংকার মদমত্ত হয়ে প্রবেশ করো না। বরং আল্লাহর প্রতি অনুগত ও তাঁর ভয়ে ভীত বান্দাদের মতো বিনম্রভাবে প্রবেশ করো। যেমন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় বিনয়াবনত হয়ে মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন। ‘হিত্তাতুন’ শব্দটির দুই অর্থ হতে পারে। এর একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কাছে নিজের গোনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে প্রবেশ করো। আর দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, ব্যাপক গণহত্যা ও লুটতরাজ করতে করতে প্রবেশ না করে বরং জনপদের অধিবাসীদের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করে তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে করতে শহরে প্রবেশ করো।
৭৬ .
সে পাথরটি এখনো সিনাই উপদ্বীপে রয়েছে। পর্যটকরা এখনো গিয়ে সেটি দেখেন। পাথরের গায়ে এখনো ঝর্ণার উৎস মুখের গর্তগুলো দেখা যায়। ১২টি ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করার কারণ ছিল এই যে, বনী ইসরাঈলদেরও ১২টি গোত্র ছিল। প্রত্যেক গোত্রের জন্য আল্লাহ‌ একটি করে ঝর্ণা প্রবাহিত করেন। তাদের মধ্যে পানি নিয়ে কলহ সৃষ্টি না হয়, এ জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বিত হয়েছিল।
অনুবাদ: