আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল বাকারাহ

২৮৬ আয়াত

১৬১ ) যারা কুফরীর নীতি ১৬১ অবলম্বন করেছে এবং কুফরীর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের ওপর আল্লাহ‌র ফেরেশতাদের ও সমগ্র মানবতার লানত।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَمَاتُوا۟ وَهُمْ كُفَّارٌ أُو۟لَـٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ ٱللَّهِ وَٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ وَٱلنَّاسِ أَجْمَعِينَ ١٦١
১৬২ ) এই লানত বিদ্ধ অবস্থায় তারা চিরকাল অবস্থান করবে, তাদের শাস্তি হ্রাস পাবে না এবং তাদের অন্য কোন অবকাশও দেয়া হবে না।
خَـٰلِدِينَ فِيهَا ۖ لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ ٱلْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ ١٦٢
১৬৩ ) তোমাদের আল্লাহ‌ এক ও একক। সেই দয়াবান ও করুণাময় আল্লাহ‌ ছাড়া আর কোন ইলাহ্‌ নেই।
وَإِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌۭ وَٰحِدٌۭ ۖ لَّآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلرَّحْمَـٰنُ ٱلرَّحِيمُ ١٦٣
১৬৪ ) (এই সত্যটি চিহ্নিত করার জন্য যদি কোন নিদর্শন বা আলামতের প্রয়োজন হয় তাহলে) যারা বুদ্ধি-বিবেক ব্যবহার করে তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর ঘটনাকৃতিতে, রাত্রদিনের অনবরত আবর্তনে, মানুষের প্রয়োজনীয় ও উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগর দরিয়ার চলমান জলযানসমূহে, বৃষ্টিধারার মধ্যে, যা আল্লাহ‌ বর্ষণ করেন ওপর থেকে তারপর তার মাধ্যমে মৃত ভূমিকে জীবন দান করেন এবং নিজের এই ব্যবস্থাপনার বদৌলতে পৃথিবীতে সব রকমের প্রাণী ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেন, আর বায়ু প্রবাহে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। ১৬২
إِنَّ فِى خَلْقِ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَٱخْتِلَـٰفِ ٱلَّيْلِ وَٱلنَّهَارِ وَٱلْفُلْكِ ٱلَّتِى تَجْرِى فِى ٱلْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ ٱلنَّاسَ وَمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مِن مَّآءٍۢ فَأَحْيَا بِهِ ٱلْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَآبَّةٍۢ وَتَصْرِيفِ ٱلرِّيَـٰحِ وَٱلسَّحَابِ ٱلْمُسَخَّرِ بَيْنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ لَـَٔايَـٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يَعْقِلُونَ ١٦٤
১৬৫ ) কিন্তু (আল্লাহ্‌র একত্বের প্রমাণ নির্দেশক এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও) কিছু লোক আল্লাহ‌ ছাড়া অন্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ দাঁড় করায় ১৬৩ এবং তাদেরকে এমন ভালোবাসে যেমন আল্লাহ‌কে ভালোবাসা উচিত – অথচ ঈমানদাররা সবচেয়ে বেশী আল্লাহ‌কে ভালোবাসে। ১৬৪ হায়! আযাব সামনে দেখে এই জালেমরা যা কিছু অনুধাবন করার তা যদি আজই অনুধাবন করতো যে, সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ‌র অধীন এবং শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ‌ অত্যন্ত কঠোর।
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادًۭا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ ٱللَّهِ ۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَشَدُّ حُبًّۭا لِّلَّهِ ۗ وَلَوْ يَرَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓا۟ إِذْ يَرَوْنَ ٱلْعَذَابَ أَنَّ ٱلْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًۭا وَأَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعَذَابِ ١٦٥
১৬৬ ) যখন তিনি শাস্তি দেবেন তখন এই সমস্ত নেতা ও প্রধান ব্যক্তিরা, দুনিয়ায় যাদের অনুসরণ করা হতো, তাদের অনুগামীদের সাথে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করতে থাকবে। কিন্তু শাস্তি তারা পাবেই এবং তাদের সমস্ত উপায়- উপকরণের ধারা ছিন্ন হয়ে যাবে।
إِذْ تَبَرَّأَ ٱلَّذِينَ ٱتُّبِعُوا۟ مِنَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوا۟ وَرَأَوُا۟ ٱلْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ ٱلْأَسْبَابُ ١٦٦
১৬৭ ) আর যেসব লোক দুনিয়ায় তাদের অনুসারী ছিল তারা বলতে থাকবে, হায়! যদি আমাদের আর একবার সুযোগ দেয়া হতো, তাহলে আজ এরা যেমন আমাদের সাথে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছে তেমনি আমরাও এদের সাথে সম্পর্কহীন হয়ে দেখিয়ে দিতাম। ১৬৫ এভাবেই দুনিয়ায় এরা যে সমস্ত কাজ করছে সেগুলো আল্লাহ‌ তাদের সামনে এমনভাবে উপস্থিত করবেন যাতে তারা কেবল দুঃখ ও আক্ষেপই করতে থাকবে কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে বের হবার কোন পথই খুঁজে পাবে না।
وَقَالَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوا۟ لَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةًۭ فَنَتَبَرَّأَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوا۟ مِنَّا ۗ كَذَٰلِكَ يُرِيهِمُ ٱللَّهُ أَعْمَـٰلَهُمْ حَسَرَٰتٍ عَلَيْهِمْ ۖ وَمَا هُم بِخَـٰرِجِينَ مِنَ ٱلنَّارِ ١٦٧
১৬৮ ) হে মানব জাতি! পৃথিবীতে যে সমস্ত হালাল ও পাক জিনিস রয়েছে সেগুলো খাও এবং শয়তানের দেখানো পথে চলো না। ১৬৬ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ كُلُوا۟ مِمَّا فِى ٱلْأَرْضِ حَلَـٰلًۭا طَيِّبًۭا وَلَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَـٰنِ ۚ إِنَّهُۥ لَكُمْ عَدُوٌّۭ مُّبِينٌ ١٦٨
১৬৯ ) সে তোমাদের অসৎকাজ ও অনাচারের নির্দেশ দেয় আর একথাও শেখায় যে, তোমরা আল্লাহ‌র নামে এমন সব কথা বলো যেগুলো আল্লাহ‌ বলেছেন বলে তোমাদের জানা নেই। ১৬৭
إِنَّمَا يَأْمُرُكُم بِٱلسُّوٓءِ وَٱلْفَحْشَآءِ وَأَن تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ ١٦٩
১৭০ ) তাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ‌ যে বিধান নাযিল করেছেন তা মেনে চলো, জবাবে তারা বলে, আমাদের বাপ-দাদাদের যে পথের অনুসারী পেয়েছি আমরা তো সে পথে চলবো। ১৬৮ আচ্ছা, তাদের বাপ-দাদারা যদি একটুও বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ না করে থেকে থাকে এবং সত্য-সঠিক পথের সন্ধান না পেয়ে থাকে তাহলেও কি তারা তাদের অনুসরণ করে যেতে থাকবে?
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ ٱتَّبِعُوا۟ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُوا۟ بَلْ نَتَّبِعُ مَآ أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ ءَابَآءَنَآ ۗ أَوَلَوْ كَانَ ءَابَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْـًۭٔا وَلَا يَهْتَدُونَ ١٧٠
১৬১.
কুফরের আসল মানে হচ্ছে গোপন করা, লুকানো। এ থেকেই অস্বীকারের অর্থ বের হয়েছে। ঈমানের বিপরীত পক্ষে এ শব্দটি বলা হয়। ঈমান অর্থ মেনে নেয়া, কবুল করা, স্বীকার করা। এর বিপরীতে ‘কুফর’-এর অর্থ না মানা, প্রত্যাখ্যান করা, অস্বীকার করা। কুরআনের বর্ণনার প্রেক্ষিতে কুফরীর মনোভাব ও আচরণ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে।

একঃ আল্লাহকে একেবারেই না মানা। অথবা তাঁর সার্বভৌম কতৃত্ব ও ক্ষমতা স্বীকার না করা এবং তাঁকে নিজের ও সমগ্র বিশ্ব-জাহানের মালিক, প্রভু, উপাস্য ও মাবুদ বলে না মানা।

দুইঃ আল্লাহকে মেনে নেয়া কিন্তু তাঁর বিধান ও হিদায়াতসমূহকে জ্ঞান ও আইনের একমাত্র উৎস হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করা।

তিনঃ নীতিগতভাবে একথা মেনে নেয়া যে, তাকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলতে হবে কিন্তু আল্লাহ‌ তাঁর বিধান ও বাণীসমূহ যেসব নবী-রসূলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তাদেরকে অস্বীকার করা।

চারঃ নবীদের মধ্যে পার্থক্য করা এবং নিজের পছন্দ ও মানসিক প্রবণতা বা গোত্রীয় ও দলীয় প্রীতির কারণে তাদের মধ্য থেকে কাউকে মেনে নেয়া এবং কাউকে না মানা।

পাঁচঃ নবী ও রসূলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিক চরিত্র ও জীবন যাপনের বিধান সম্বলিত যেসব শিক্ষা বিবৃত করেছেন সেগুলো অথবা সেগুলোর কোন কোনটি গ্রহণ করা।

ছয়ঃ এসব কিছুকে মতবাদ হিসেবে মেনে নেয়ার পর কার্যত জেনে বুঝে আল্লাহর বিধানের নাফরমানী করা এবং এই নাফরমানীর ওপর জোর দিতে থাকা। আর এই সঙ্গে দুনিয়ার জীবনে আনুগত্যের পরিবর্তে নাফরমানীর ওপর নিজের কর্মনীতির ভিত্তি স্থাপন করা।

আল্লাহর মোকাবিলায় এসব বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ও কাজ মূলত বিদ্রোহাত্মক। এর মধ্য থেকে প্রতিটি চিন্তা ও কর্মকে কুরআন কুফরী হিসেবে চিহ্নত করেছে। এছাড়াও কুরআনের কোন কোন জায়গায় ‘কুফর’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে আল্লাহর দান, অনুগ্রহ ও নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়ার অর্থে। সেখানে শোকর বা কৃতজ্ঞতার বিপরীতে এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘শোকর’ –এর অর্থ হচ্ছে, যিনি অনুগ্রহ করেছেন তাঁর প্রতি অনুগৃহীত থাকা, তাঁর অনুগ্রহকে যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা দান করা, তাঁর প্রদত্ত অনুগ্রহকে তাঁর সন্তুষ্টি ও নির্দেশ অনুসারে ব্যবহার করা এবং অনুগৃহীত ব্যক্তির মন অনুগ্রহকারীর প্রতি বিশ্বস্ততার আবেগে পরিপূর্ণ থাকা। এর বিপরীত পক্ষে কুফর বা অনুগ্রহের প্রতি অকৃজ্ঞতা হচ্ছেঃ অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহ স্বীকার না করা এবং এই অনুগ্রহকে নিজের যোগ্যতা বা অন্য কারোর দান বা সুপারিশের ফল মনে করা অথবা অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহ প্রদান করা সত্ত্বেও তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণ করা। এই ধরনের কুফরীকে আমরা নিজেদের ভাষায় সাধারণত কৃতঘ্নতা, অকৃতজ্ঞতা, নিমকহারামী ও বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকি।

১৬২.
অর্থাৎ বিশ্ব-জাহানের এই যে বিশাল কারখানা মানুষের চোখের সামনে প্রতিনিয়ত সক্রিয়, মানুষ যদি তাকে নিছক নির্বোধ জন্তু-জানোয়ারের দৃষ্টিতে না দেখে বুদ্ধি-বিবেকের সাহায্যে বিচার বিশ্লেষণ করে তার সূক্ষ্ম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সকল প্রকার হঠধর্মিতা পরিহার করে পক্ষপাতহীনভাবে মুক্ত মনে চিন্তা করে তাহলে চতুর্দিকে যেসব নিদর্শন সে প্রত্যক্ষ করছে সেগুলো তাকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে দেয়ার জন্য যথেষ্ট যে, বিশ্ব-জাহানের সমগ্র ব্যবস্থাপনা একজন অসীম ক্ষমতাধর জ্ঞানবান সত্ত্বার বিধানের অনুগত। সমস্ত ক্ষমতা-কর্তৃত্ব সেই একক সত্ত্বার হাতে কেন্দ্রীভূত। এই ব্যবস্থাপনায় অন্য কারোর স্বাধীন হস্তক্ষেপের বা অংশীদারীত্বের সামান্যতম অবকাশও নেই। কাজেই প্রকৃতপক্ষে সমগ্র সৃষ্টি জগতের তিনিই একমাত্র প্রভু, ইলাহ্‌ ও আল্লাহ‌। তাঁর ছাড়া আর কোন সত্ত্বার কোন বিষয়ে সামান্যতম ক্ষমতাও নেই। কাজেই খোদায়ী কর্তৃত্ব ও উপাস্য হবার ব্যাপারে আল্লাহ‌র সাথে আর কারোর কোন অংশ নেই।
১৬৩.
অর্থাৎ সার্বভৌম কর্তৃত্বের যে বিশেষ গুণাবলী একমাত্র আল্লাহ‌র জন্য নির্ধারিত তার মধ্য থেকে কোন কোনটাকে অন্যদের সাথে সম্পর্কিত করে। আর আল্লাহ‌ হিসেবে বান্দার ওপর তাঁর যে অধিকার রয়েছে তার মধ্য থেকে কোন কোনটা তারা তাদের এসব বানোয়াট মা’বুদদের জন্যও আদায় করে। যেমন বিশ্ব-জগতের যাবতীয় কার্যকারণ পরম্পরার ওপর কর্তৃত্ব, অভাব দূর করা ও -প্রয়োজন পূর্ণ করা, সংকট মোচন, অভিযোগ ও প্রার্থনা শ্রবণ, দৃশ্য-অদৃশ্য নির্বিশেষে সকল বিষয় জ্ঞাত হওয়ার---এ গুণগুলো একমাত্র আল্লাহ‌র সাথে সম্পর্কিত। বান্দা একমাত্র আল্লাহ‌কেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সম্পন্ন বলে মানবে, একমাত্র তাঁরই সামনে বন্দেগীর স্বীকৃতি সহকারে মাথা নোয়াবে, নিজের অভাব-অভিযোগ-প্রয়োজন পূরণের জন্য তাঁরই দিকে এগিয়ে যাবে, তাঁরই কাছে সাহায্যের আবেদন জানাবে, তাঁরই ওপর ভরসা ও নির্ভর করবে, তাঁরই কাছে আশা করবে এবং একমাত্র তাঁকেই ভয় করবে বাহ্যিকভাবে ও আন্তরিকভাবেও---এগুলো হচ্ছে বান্দার ওপর আল্লাহ‌র হক। অনুরূপভাবে সমগ্র বিশ্ব-জগতের একচ্ছত্র মালিক হবার কারণে মানুষের জন্য হালাল-হারামের সীমা নির্ধারণ করার, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিরূপণের, তাদের আদেশ নিষেধের বিধান দান করার এবং তিনি মানুষকে যেসব শক্তি ও উপায় উপকরণ দান করেছেন সেগুলো তারা কিভাবে, কোন কাজে এবং কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে তা জানিয়ে দেয়ার ও নির্ধারণ করার অধিকার একমাত্র আল্লাহ‌র আছে। এছাড়া বান্দার ওপর আল্লাহ‌র যে অধিকার সেই অনুযায়ী বান্দা একমাত্র আল্লাহ‌কেই সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী বলে স্বীকার করে নেবে। তাঁর নির্দেশকে আইনের উৎস হিসেবে মেনে নেবে। তাঁকেই যে কোন কাজের আদেশ করার ও তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দান করার একচ্ছত্র অধিকারী মনে করবে। নিজের জীবনের সকল ব্যাপারেই তাঁর নির্দেশকে চূড়ান্ত গণ্য করবে। দুনিয়ায় জীবন যাপন করার জন্য বিধান ও পথ নির্দেশনা লাভের ক্ষেত্রে একমাত্র তাঁরই মুখাপেক্ষী হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ‌র এই গুণাবলীর মধ্য থেকে কোন একটি গুণকেও অন্যের সম্পর্কিত করে এবং তাঁর এই অধিকারগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি অধিকারও অন্যকে দান করে, সে আসলে নিজেকে আল্লাহ‌র সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করায়। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি বা যে সংস্থা এই গুণাবলীর মধ্য থেকে কোন একটি গুণেরও দাবীদার সাজে এবং মানুষের কাছে ঐ অধিকারগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি অধিকার দাবী করে সেও মুখে খোদায়ী কর্তৃত্বের দাবী না করলেও আসলে আল্লাহ‌র সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ সাজে।
১৬৪.
অর্থাৎ এটা ঈমানের দাবী। একজন ঈমানদারের কাছে আল্লাহ‌র সন্তুষ্টি অন্য সবার সন্তুষ্টির ওপর অগ্রাধিকার লাভ করবে এবং কোন জিনিসের প্রতি ভালোবাসা তার মনে এমন প্রভাব বিস্তার করবে না এবং এমন মর্যাদার আসনে সমাসীন হবে না যার ফলে আল্লাহ‌র প্রতি ভালোবাসার মোকাবিলায় তাকে পরিহার করতে সে কখনো কুণ্ঠিত হবে না।
১৬৫.
এখানে পথভ্রষ্টকারী নেতৃবর্গ ও তাদের নির্বোধ অনুসারীদের পরিণতির উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে এই যে, পূর্ববর্তী নবীদের উম্মাতরা যে সমস্ত ভুলের শিকার হয়ে বিভ্রান্ত হয়েছিল এবং সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছিল মুসলমানরা যেন সে সম্পর্কে সতর্ক হয় এবং ভুল ও নির্ভুল নেতৃত্ব এবং সঠিক ও বেঠিক নেতৃত্বের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখে। ভুল ও বেঠিক নেতৃত্বের পেছনে চলা থেকে যেন তারা নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারে।
১৬৬.
অর্থাৎ পানাহারের ক্ষেত্রে কুসংস্কার ও জাহেলী রীতি-নীতির ভিত্তিতে যেসব বিধি-নিষেধের প্রচলন রয়েছে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলো।
১৬৭.
অর্থাৎ এই সমস্ত কুসংস্কার ও তথাকথিত বিধি-নিষেধকে আল্লাহ‌র পক্ষ থেকে প্রেরিত ধর্মীয় বিষয়াবলী মনে করা আসলে শয়তানী প্ররোচনা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ এগুলো যে আল্লাহ‌র পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে, এ ধারণার পেছনে কোন প্রমাণ নেই।
১৬৮.
অর্থাৎ বাপ-দাদাদের থেকে এভাবেই চলে আসছে এ ধরনের খোঁড়া যুক্তি পেশ করা ছাড়া তাদের কাছে এসব বিধি-নিষেধের পক্ষে পেশ করার মতো কোন সবল যুক্তি-প্রমাণ নেই। বোকারা মনে করে কোন পদ্ধতির অনুসরণ করার জন্য এই ধরনের যুক্তি যথেষ্ট।
অনুবাদ: