وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ ءَايَةَ مُلْكِهِۦٓ أَن يَأْتِيَكُمُ ٱلتَّابُوتُ فِيهِ سَكِينَةٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌۭ مِّمَّا تَرَكَ ءَالُ مُوسَىٰ وَءَالُ هَـٰرُونَ تَحْمِلُهُ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَةًۭ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
এই সঙ্গে তাদের নবী তাদের একথাও জানিয়ে দিলঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বাদশাহ নিযুক্ত করার আলামত হচ্ছে এই যে, তার আমলে সেই সিন্ধুকটি তোমরা ফিরিয়ে পাবে, যার মধ্যে রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মানসিক প্রশান্তির সামগ্রী, যার মধ্যে রয়েছে মূসার পরিবারের ও হারুনের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র এবং যাকে এখন ফেরেশতারা বহন করে ফিরছে। ২৭০ যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো তাহলে এটি তোমাদের জন্য অনেক বড় নিশানী।
২৭০
এ প্রসঙ্গে বাইবেলের বর্ণনা কুরআন থেকে বেশ কিছুটা বিভিন্ন। তবুও এ থেকে আসল ঘটনার যথেষ্ট বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। এ থেকে জানা যায়, এ সিন্দুকটির জন্য বনী ইসরাঈলদের মধ্যে একটি বিশেষ পরিভাষার সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি হচ্ছে ‘অঙ্গীকার সিন্দুক’। এক যুদ্ধে ফিলিস্তিনী মুশরিকরা বনী ইসরাঈলদের থেকে এটি ছিনিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু মুশরিকদের যে শহর ও যে জনপদে এটি রাখা হতো সেখানেই মহামারীর প্রাদুর্ভাব হতে থাকতো ব্যাপকভাবে। অবশেষে তারা সিন্দুকটি একটি গরুর গাড়ির ওপর রেখে হাঁকিয়ে দিয়েছিল। সম্ভবত এ বিষয়টিকে কুরআন এভাবে বর্ণনা করেছে যে, সেটি তখন ফেরেশতাদের রক্ষণাধীনে ছিল। কারণ সেই গাড়িটিতে কোন চালক না বসিয়ে তাকে হাঁকিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর আল্লাহর হুকুমে তাকে হাঁকিয়ে বনী ইসরাঈলদের দিকে নিয়ে আসা ছিল ফেরেশতাদের কাজ। আর এই সিন্দুকের “মধ্যে রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মানসিক প্রশান্তির সামগ্রী”-একথার অর্থ বাইবেলের বর্ণনা থেকে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে এই যে, বনী ইসরাঈল এই সিন্দুকটিকে অত্যন্ত বরকতপূর্ণ এবং নিজেদের বিজয় ও সাফল্যের প্রতীক মনে করতো। এটি তাদের হাতছাড়া হবার পর সমগ্র জাতির মনোবল ভেঙে পড়ে। প্রত্যেক ইসরাঈলী মনে করতে থাকে, আমাদের ওপর থেকে আল্লাহর রহমত উঠে গেছে এবং আমাদের দুর্ভাগ্যের দিন শুরু হয়ে গেছে। কাজেই সিন্দুকটি ফিরে আসায় সমগ্র জাতির মনোবল ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। তাদের ভাঙা মনোবল আবার জোড়া লেগে যায়। এভাবে এটি তাদের মানসিক প্রশান্তির কারণে পরিণত হয়।
“মূসা ও হারুণের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র” এই সিন্দুকে রক্ষিত ছিল। এর অর্থ হচ্ছে, ‘তূর-ই-সিনাই’-এ (সিনাই পাহাড়) মহান আল্লাহ হযরত মূসাকে পাথরের যে তখতিগুলো দিয়েছিলেন। এছাড়াও হযরত মূসা নিজে লিখিয়ে তাওরাতের যে কপিটি বনী লাভীকে দিয়েছিলেন সেই মূল পাণ্ডুলিপিটিও এর মধ্যে ছিল। একটি বোতলে কিছুটা “মান্না’ও এর মধ্যে রক্ষিত ছিল, যাতে পরবর্তী বংশধররা আল্লাহর সেই মহা অনুগ্রহের কথা স্মরণ করতে পারে, যা মহান আল্লাহ ঊষর মরুর বুকে তাদের বাপ-দাদাদের ওপর বর্ষণ করেছিলেন। আর সম্ভবত অসাধারণ মু’জিযা তথা মহা অলৌকিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হযরত মূসার সেই বিখ্যাত ‘আসা’ও এর মধ্যে ছিল।