وَٱصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِٱلْغَدَوٰةِ وَٱلْعَشِىِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُۥ ۖ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۖ وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُۥ عَن ذِكْرِنَا وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ وَكَانَ أَمْرُهُۥ فُرُطًۭا
আর নিজের অন্তরকে তাদের সঙ্গলাভে নিশ্চিন্ত করো যারা নিজেদের রবের সন্তুষ্টির সন্ধানে সকাল-সাঁঝে তাঁকে ডাকে এবং কখনো তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরাবে না। তুমি কি পার্থিব সৌন্দর্য পছন্দ করো? ২৮ এমন কোন লোকের আনুগত্য করো না ২৯ যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার অনুসরণ করেছে এবং যার কর্মপদ্ধতি কখনো উগ্র, কখনো উদাসীন। ৩০
২৮
ইবনে আব্বাসের (রা.) বর্ণনা অনুযায়ী কুরাইশ সরদাররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতো, বেলাল (রা.), সোহাইব (রা.), আম্মার (রা.), খব্বাব (রা.) ও ইবনে মাসউদের (রা.) মতো গরীব লোকেরা তোমার সাথে বসে, আমরা ওদের সাথে বসতে পারি না। ওদেরকে হটাও তাহলে আমরা তোমার মজলিসে আসতে পারি এবং তুমি কি বলতে চাও তা জানতে পারি। একথায় মহান আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমার চারদিকে জমায়েত হয়েছে এবং দিনরাত নিজেদের রবকে স্মরণ করছে তাদেরকে তোমার কাছে থাকতে দাও এবং এ ব্যাপারে নিজের মনে কোন দ্বিধা-দন্দ্ব আসতে দিও না এবং তাদের দিক থেকে কখনো দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। তুমি কি এ আন্তরিকতা সম্পন্ন লোকদেরকে ত্যাগ করে চাও যে, এদের পরিবর্তে পার্থিব জৌলুসের অধিকারী লোকেরা তোমার কাছে বসুক? এ বাক্যেও বাহ্যত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে কিন্তু আসলে কুরাইশ সরদারদেরকে শুনানোই এখানে মূল উদ্দেশ্য যে, তোমাদের এ লোক দেখানো জৌলুস, যার জন্য তোমরা গর্বিত। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে এগুলোর কোন মূল্য ও মর্যাদা নেই। যেসব গরীব লোকের মধ্যে আন্তরিকতা আছে এবং যারা নিজেদের রবের স্মরণ থেকে কখনো গাফিল হয় না তারা তোমার চাইতে অনেক বেশী মূল্যবান। হযরত নূহ (আ) ও তাঁর সরদারদের মধ্যেও ঠিক এ একই ব্যাপার ঘটেছিল। তারা হযরত নূহকে (আ) বলতোঃ
আরবী-------------------
“আমরা তো দেখছি আমাদের মধ্যে যারা নিম্নস্তরের লোক, তারাই না বুঝে সুজে তোমার পেছনে জড়ো হয়েছে।”
হযরত নূহের (আ) জবাব ছিলঃ (আরবী--------------) “যারা ঈমান এনেছে আমি তাদের তাড়িয়ে দিতে পারি না।” এবং (আরবী--------------------) “যাদেরকে তোমরা তাচ্ছিল্যের নজরে দেখো তাদের সম্বন্ধে আমি এ কথা বলতে পারি না যে, আল্লাহ তাদেরেকে কোন কল্যাণ দান করেননি।” (হুদ ২৭, ২৯, ৩১ আয়াত, আন’আম ৫২ এবং আল হিজ্র ৮৮ আয়াত)
২৯
অর্থাৎ তার কথা মেনো না, তার সামনে মাথা নত করো না, তার ইচ্ছা পূর্ণ করো না এবং তার কথায় চলো না। এখানে আনুগত্য শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩০
(আরবী------------------------) এর একটি অর্থ তাই যা আমি অনুবাদে গ্রহণ করেছি। এর দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, “যে ব্যক্তি সত্যকে পেছনে রেখে এবং নৈতিক সীমারেখা লংঘন করে লাগামহীনভাবে চলে।” উভয় অবস্থায় মূল কথা দাঁড়ায়। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নিজের নফসের বান্দা হয়ে যায় তার প্রত্যেকটি কাজে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়ে যায় এবং আল্লাহর সীমারেখা সম্পর্কে তার কোন জ্ঞানই থাকে না। এ ধরনের লোকের আনুগত্য করার মানে এ দাঁড়ায় যে, যে আনুগত্য করে সেও আল্লাহর সীমারেখা সম্পর্কে অজ্ঞ ও অচেতন থেকে যায়, আর যার আনুগত্য করা হয় সে বিভ্রান্ত হয়ে যেখানে যেখানে ঘুরে বেড়ায় আনুগত্যকারীও সেখানে সেখানে উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে।