আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আর্ রাদ

৪৩ আয়াত

২১ ) তাদের নীতি হয়, আল্লাহ যেসব সম্পর্ক ও বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখার হুকুম দিয়েছেন ৩৮ সেগুলো তারা অক্ষুণ্ন রাখে, নিজেদের রবকে ভয় করে এবং তাদের থেকে কড়া হিসেব না নেয়া হয় এই ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকে।
وَٱلَّذِينَ يَصِلُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوٓءَ ٱلْحِسَابِ ٢١
২২ ) তাদের অবস্থা হয় এই যে, নিজেদের রবের সন্তুষ্টির জন্য তারা সবর করে, ৩৯ নামায কায়েম করে, আমার দেয়া রিযিক থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে খরচ করে এবং ভালো দিয়ে মন্দ দূরীভূত করে। ৪০ আখেরাতের গৃহ হচ্ছে তাদের জন্যই। অর্থাৎ এমন সব বাগান যা হবে তাদের চিরস্থায়ী আবাস।
وَٱلَّذِينَ صَبَرُوا۟ ٱبْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُوا۟ مِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ سِرًّۭا وَعَلَانِيَةًۭ وَيَدْرَءُونَ بِٱلْحَسَنَةِ ٱلسَّيِّئَةَ أُو۟لَـٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى ٱلدَّارِ ٢٢
২৩ ) তারা নিজেরা তার মধ্যে প্রবেশ করবে এবং তাদের বাপ-দাদারা ও স্ত্রী-সন্তানদের মধ্য থেকে যারা সৎকর্মশীল হবে তারাও তাদের সাথে সেখানে যাবে। ফেরেশতারা সব দিক থেকে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য আসবে
جَنَّـٰتُ عَدْنٍۢ يَدْخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنْ ءَابَآئِهِمْ وَأَزْوَٰجِهِمْ وَذُرِّيَّـٰتِهِمْ ۖ وَٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِم مِّن كُلِّ بَابٍۢ ٢٣
২৪ ) এবং তাদেরকে বলবেঃ “তোমাদের প্রতি শান্তি। ৪১ তোমরা দুনিয়ায় যেভাবে সবর করে এসেছো তার বিনিময়ে আজ তোমরা এর অধিকারী হয়েছো।”- কাজেই কতই চমৎকার এ আখেরাতের গৃহ!
سَلَـٰمٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ ۚ فَنِعْمَ عُقْبَى ٱلدَّارِ ٢٤
২৫ ) আর যারা আল্লাহর অঙ্গীকারে মজবুতভাবে আবদ্ধ হবার পর তা ভেঙে ফেলে, আল্লাহ যেসব সম্পর্ক জোড়া দেবার হুকুম দিয়েছেন সেগুলো ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তারা লানতের অধিকারী এবং তাদের জন্য রয়েছে আখেরাতে বড়ই খারাপ আবাস।
وَٱلَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ ٱللَّهِ مِنۢ بَعْدِ مِيثَـٰقِهِۦ وَيَقْطَعُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِى ٱلْأَرْضِ ۙ أُو۟لَـٰٓئِكَ لَهُمُ ٱللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوٓءُ ٱلدَّارِ ٢٥
২৬ ) আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রিযিক সম্প্রসারিত করেন এবং যাকে চান মাপাজোকা রিযিক দান করেন। ৪২ এরা দুনিয়ার জীবনে উল্লসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখেরাতের তুলনায় সামান্য সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।
ٱللَّهُ يَبْسُطُ ٱلرِّزْقَ لِمَن يَشَآءُ وَيَقْدِرُ ۚ وَفَرِحُوا۟ بِٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ إِلَّا مَتَـٰعٌۭ ٢٦
২৭ ) যারা (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে তারা বলে, “এ ব্যক্তির কাছে এর রবের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি কেন?” ৪৩ বলো, আল্লাহ যাকে চান গোমরাহ করে দেন এবং তিনি তাকেই তাঁর দিকে আসার পথ দেখান যে তাঁর দিকে রুজু করে। ৪৪
وَيَقُولُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَوْلَآ أُنزِلَ عَلَيْهِ ءَايَةٌۭ مِّن رَّبِّهِۦ ۗ قُلْ إِنَّ ٱللَّهَ يُضِلُّ مَن يَشَآءُ وَيَهْدِىٓ إِلَيْهِ مَنْ أَنَابَ ٢٧
২৮ ) তারাই এ ধরনের লোক যারা (এ নবীর দাওয়াত) গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়।
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ ٱللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ ٱللَّهِ تَطْمَئِنُّ ٱلْقُلُوبُ ٢٨
২৯ ) সাবধান হয়ে যাও। আল্লাহর স্মরণই হচ্ছে এমন জিনিস যার সাহায্যে চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে। তারপর যারা সত্যের দাওয়াত মেনে নিয়েছে এবং সৎকাজ করেছে তারা সৌভাগ্যবান এবং তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম।
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ طُوبَىٰ لَهُمْ وَحُسْنُ مَـَٔابٍۢ ٢٩
৩০ ) হে মুহাম্মাদ! এহেন মাহাত্ম সহকারে আমি তোমাকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছি ৪৫ এমন এক জাতির মধ্যে যার আগে বহু জাতি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, যাতে তোমার কাছে আমি যে পয়গাম অবতীর্ণ করেছি তা তুমি এদেরকে শুনিয়ে দাও, এমন অবস্থায় যখন এরা নিজেদের পরম দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করছে। ৪৬ এদেরকে বলে দাও, তিনিই আমার রব, তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তাঁরই ওপর আমি ভরসা করেছি এবং তাঁরই কাছে আমাকে ফিরে যেতে হবে।
كَذَٰلِكَ أَرْسَلْنَـٰكَ فِىٓ أُمَّةٍۢ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهَآ أُمَمٌۭ لِّتَتْلُوَا۟ عَلَيْهِمُ ٱلَّذِىٓ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِٱلرَّحْمَـٰنِ ۚ قُلْ هُوَ رَبِّى لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ ٣٠
৩৮.
অর্থাৎ এমন সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, যেগুলো সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেই মানুষের সামগ্রিক জীবনের কল্যাণ ও সাফল্য নিশ্চিত হয়।
৩৯.
অর্থাৎ নিজেদের প্রবৃত্তি ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে, নিজেদের আবেগ, অনুভূতি ও ঝোঁক প্রবণতাকে নিয়ম ও সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখে, আল্লাহর নাফরমানিতে বিভিন্ন স্বার্থলাভ ও ভোগ-লালসার চরিতার্থ হওয়ার সুযোগ দেখে পা পিছলে যায় না এবং আল্লাহর হুকুম মেনে চলার পথে যেসব ক্ষতি ও কষ্টেরআশঙ্কা দেখা দেয় সেসব বরদাশত করে যেতে থাকে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে মু’মিন আসলে পুরোপুরি একটি সবরের জীবন যাপন করে। কারণ সে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় এবং আখেরাতের স্থায়ী পরিণাম ফলের প্রতি দৃষ্টি রেখে এ দুনিয়ায় আত্মসংযম করতে থাকে এবং সবরের সাথে মনের প্রতিটি পাপ প্রবণতার মোকাবিলা করে।
৪০.
অর্থাৎ তারা মন্দের মোকাবিলায় মন্দ করে না বরং ভালো করে। তারা অন্যায়ের মোকবিলা অন্যায়কে সাহায্য না করে ন্যায়কে সাহায্য করে। কেউ তাদের প্রতি যতই জুলুম করুক না কেন তার জবাবে তারা পাল্টা জুলুম করে না বরং ইনসাফ করে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে যতই মিথ্যাচার করুক না কেন জবাবে তারা সত্যই বলে। কেউ তাদের সাথে যতই বিশ্বাস ভঙ্গ করুক না কেন জবাবে তারা বিশ্বস্ত আচরণই করে থাকে। রসূলুল্লাহ ﷺ এর নিম্নোক্ত হাদীসটি এ অর্থই প্রকাশ করেঃ

لاَ تَكُونُوا إِمَّعَةً تَقُولُونَ إِنْ أَحْسَنَ النَّاسُ أَحْسَنَّا وَإِنْ ظَلَمُوا

“তোমরা নিজেদের কার্যধারাকে অন্যের কর্মধারার অনুসারী করো না। একথা বলা ঠিক নয় যে লোকেরা ভালো করলে আমরা ভালো করবো এবং লোকেরা জুলুম করলে আমরাও জুলুম করবো। তোমরা নিজেদেরকে একটি নিয়মের অধীন করো। যদি লোকেরা সদাচার করে তাহলে তোমরাও সদাচার করো। আর যদি লোকেরা তোমাদের সাথে অসৎ আচরণ করে তাহলে তোমরা জুলুম করো না।”

রসূলুল্লাহর ﷺ এ হাসীসটিও এ একই অর্থ প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়েছেঃ রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আল্লাহ‌ আমাকে নয়টি বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি এ চারটি কথা বলেছেনঃ কারোর প্রতি সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট যাই থাকি না কেন সর্বাবস্থায় আমি যেন ইনসাফের কথা বলি। যে আমার অধিকার হরণ করে আমি যেন তার অধিকার আদায় করি। যে আমাকে বঞ্চিত করবে আমি যেন তাকে দান করি। আর যে আমার প্রতি জলুম করবে আমি যেন তাকে মাফ করে দেই। আর এ হাদীসটিও এ একই অর্থ প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়েছেঃ

ظلَمْنَا وَلَكِنْ وَطِّنُوا أَنْفُسَكُمْ إِنْ أَحْسَنَ النَّاسُ أَنْ تُحْسِنُوا وَإِنْ أَسَاءُوا فَلاَ تَظْلِمُوا لاتخن من خانك

অর্থাৎ যে তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তুমি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।” হযরত উমরের (রা.) নিম্নোক্ত উক্তিটিও এ অর্থ প্রকাশ করেঃ “যে ব্যক্তি তোমার প্রতি আচরণ করার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে না তুমি আল্লাহকে ভয় করে তার প্রতি আচরণ করো।”

৪১.
এর মানে কেবল এ নয় যে, ফেরেশতারা চারদিকে থেকে এসে তাদেরকে সালাম করতে থাকবে বরং তারা তাদেরকে এ সুখবরও দেবে যে, এখন তোমরা এমন জায়গায় এসেছো যেখানে পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজমান। এখন তোমরা এখানে সবরকমের আপদ-বিপদ, কষ্ট, কাঠিন্য, কঠোর প্ররিশ্রম, শংকা ও আতংকমুক্ত। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন সূরা হিজর ২৯ টীকা)
৪২.
এ আয়াতের পটভূমি হচ্ছে, সাধারণ মূর্খ ও অজ্ঞদের মতো মক্কার কাফেররাও বিশ্বাস ও কর্মের সৌন্দর্য বা কদর্যতা দেখার পরিবর্তে ধনাঢ্যতা বা দারিদ্রের দৃষ্টিতে মানুষের মূল্য ও মর্যাদা নিরূপণ করতো। তাদের ধারণা ছিল, যারা দুনিয়ায় প্রচুর পরিমাণ আরাম আয়েশের সামগ্রী লাভ করছে তারা যতই পথভ্রষ্ট ও অসৎকর্মশীল হোক না কেন তারা আল্লাহর প্রিয়। আর অভাবী ও দারিদ্র পীড়িতরা যতই সৎ হোক না কেন তারা আল্লাহর অভিশপ্ত। এ নীতির ভিত্তিতে তারা কুরাইশ সরদারদেরকে নবী (সা.) এর গরীব সাথীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করতো এবং বলতো, আল্লাহর কার সাথে আছেন তোমরা দেখে নাও। এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করে বলা হচ্ছে, রিযিক কমবেশী হবার ব্যাপারটা আল্লাহর অন্য আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট। সেখানে অন্যান্য অসংখ্য প্রয়োজন ও কল্যাণ-অকল্যাণের প্রেক্ষিতে কাউকে বেশী ও কাউকে কম দেয়া হয়। এটা এমন কোন মানদণ্ড নয় যার ভিত্তিতে মানুষের নৈতিক ও মানসিক সৌন্দর্য ও কদর্যতার ফায়সালা করা যেতে পারে। মানুষের মধ্যে কে চিন্তা ও কর্মের সঠিক পথ অবলম্বন করেছে এবং কে ভুল পথ, কে উন্নত ও সৎগুণাবলী অর্জন করেছে এবং কে অসৎগুণাবলী-এরি ভিত্তিতে মানুষে মানুষে মর্যাদার মূল পার্থক্য নির্ণীত হয় এবং তাদের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের আসল মানদণ্ডও এটিই। কিন্তু মূর্খরা এর পরিবর্তে দেখে, কাকে ধন-দৌলত বেশী এবং কাকে কম দেয়া হয়েছে।
৪৩.
এর আগে এ সূরার প্রথম রুকূ’র শেষ আয়াতে এ প্রশ্নের যে জবাব দেয়া হয়েছে তা এখানে সামনে রাখা দরকার। এখানে দ্বিতীয়বার তাদের একই আপত্তির কথা উল্লেখ করে অন্যভাবে তার জবাব দেয়া হচ্ছে।
৪৪.
অর্থাৎ যে নিজেই আল্লাহর দিকে রুজু হয় না বরং তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাকে জোর করে সত্য-সঠিক পথ দেখানো আল্লাহর রীতি নয়। এ ধরনের লোকেরা সত্য-সঠিক পথ পরিত্যাগ করে উদভ্রান্তের মতো যেসব ভুল পথে ঘুরে বেড়াতে চায় আল্লাহ‌ তাদেরকে সেই সব পথে ঘুরে বেড়াবার সুযোগ দান করেন। একজন সত্য-সন্ধানীর জন্য যেসব কার্যকারণ সত্য পথলাভের সহায়ক হয়, একজন অসত্য ও ভ্রান্ত পথ প্রত্যাশী ব্যক্তির জন্য সেগুলো বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর কারণে পরিণত করে দেয়া হয়। উজ্জ্বল প্রদীপ তার সামনে এলেও তা তাকে পথ দেখাবার পরিবর্তে তার চোখকে অন্ধ করে দেবার কাজ করে। আল্লাহ‌ কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে গোমরাহ করার অর্থ এটাই।

নিদর্শন দেখতে চাওয়ার জবাবে একথা বলা নজিরবিহীন বাকশৈলীর পরিচায়ক। তারা বলছিল, কোন নিদর্শন দেখাও, তাহলে আমরা তোমার কথা বিশ্বাস করতে পারি। জবাবে বলা হয়েছে, মূর্খের দল! তোমাদের সত্য পথ না পাওয়ার আসল কারণ এ নয় যে, তোমাদের সামনে কোন নিদর্শন নেই বরং এর কারণ হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে সত্য পথ লাভের কোন আকাংখাই নেই। নিদর্শন তো চতুর্দিক ে অসংখ্য ছড়িয়ে আছে। কিন্তু সেগুলোর কোনটিই তোমাদের পথপ্রদর্শকে পরিণত হয় না। কারণ আল্লাহর পথে চলার ইচ্ছাই তোমাদের নেই। এখন যদি কোন নিদর্শক আসে তাহলে তা তোমাদের জন্য কেমন করে উপকারী হতে পারে? কোন নিদর্শন দেখানো হয়নি বলে তোমরা অভিযোগ করছো। কিন্তু যারা আল্লাহর পথের সন্ধান করে ফিরছে তারা নিদর্শন দেখতে পাচ্ছে এবং নিদর্শনসমূহ দেখেই তারা সত্য পথের সন্ধান লাভ করছে।

৪৫.
অর্থাৎ তারা যে নিদর্শন চাচ্ছে তেমনি কোন নিদর্শন ছাড়াই।
৪৬.
অর্থাৎ তাঁর বন্দেগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আছে। তাঁর গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারে অন্যদেরকে তাঁর শরীক করছে। তাঁর দানের জন্য অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
অনুবাদ: