আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

হুদ

১২৩ আয়াত

৭১ ) ইবরাহীমের স্ত্রীও দাঁড়িয়ে ছিল, সে একথা শুনে হেসে ফেললো। ৭৮ তারপর আমি তাকে ইসহাকের এবং ইসহাকের পরে ইয়াকুবের সুখবর দিলাম। ৭৯
وَٱمْرَأَتُهُۥ قَآئِمَةٌۭ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَـٰهَا بِإِسْحَـٰقَ وَمِن وَرَآءِ إِسْحَـٰقَ يَعْقُوبَ ٧١
৭২ ) সে বললোঃ হায়, আমার পোড়া কপাল! ৮০ এখন আমার সন্তান হবে নাকি, যখন আমি হয়ে গেছি খুনখুনে বুড়ী আর আমার স্বামীও হয়ে গেছে বুড়ো? এ তো বড় আশ্চর্য ব্যাপার!” ৮১
قَالَتْ يَـٰوَيْلَتَىٰٓ ءَأَلِدُ وَأَنَا۠ عَجُوزٌۭ وَهَـٰذَا بَعْلِى شَيْخًا ۖ إِنَّ هَـٰذَا لَشَىْءٌ عَجِيبٌۭ ٧٢
৭৩ ) ফেরেশতারা বললোঃ “আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে অবাক হচ্ছো? ৮২ হে ইবরাহীমের গৃহবাসীরা! তোমাদের প্রতি তো রয়েছে আল্লাহর রহমত ও বরকত, আর অবশ্যি আল্লাহ অত্যন্ত প্রশংসার এবং বড়ই শান-শওকতের অধিকারী।”
قَالُوٓا۟ أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ ٱللَّهِ ۖ رَحْمَتُ ٱللَّهِ وَبَرَكَـٰتُهُۥ عَلَيْكُمْ أَهْلَ ٱلْبَيْتِ ۚ إِنَّهُۥ حَمِيدٌۭ مَّجِيدٌۭ ٧٣
৭৪ ) তারপর যখন ইবরাহীমের আশঙ্কা দূর হলো এবং (সন্তানের সুসংবাদে) তাঁর মন খুশীতে ভরে গেলো তখন সে লূতের সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আমার সাথে বাদানুবাদ শুরু করলো। ৮৩
فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْ إِبْرَٰهِيمَ ٱلرَّوْعُ وَجَآءَتْهُ ٱلْبُشْرَىٰ يُجَـٰدِلُنَا فِى قَوْمِ لُوطٍ ٧٤
৭৫ ) আসলে ইবরাহীম ছিল বড়ই সহনশীল ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী এবং সে সকল অবস্থায়ই আমার দিকে রুজূ করতো।
إِنَّ إِبْرَٰهِيمَ لَحَلِيمٌ أَوَّٰهٌۭ مُّنِيبٌۭ ٧٥
৭৬ ) (অবশেষে আমার ফেরেশ্তারা তাঁকে বললঃ (“হে ইবরাহীম! এ থেকে বিরত হও। তোমার রবের হুকুম হয়ে গেছে, কাজেই এখন তাদের ওপর এ আযাব অবধারিত। কেউ ফেরাতে চাইলেই তা ফিরতে পারে না।” ৮৪
يَـٰٓإِبْرَٰهِيمُ أَعْرِضْ عَنْ هَـٰذَآ ۖ إِنَّهُۥ قَدْ جَآءَ أَمْرُ رَبِّكَ ۖ وَإِنَّهُمْ ءَاتِيهِمْ عَذَابٌ غَيْرُ مَرْدُودٍۢ ٧٦
৭৭ ) আর যখন আমার ফেরেশতারা লূতের কাছে পৌঁছে গেলো ৮৫ তখন তাদের আগমনে সে খুব ঘাবড়ে গেলো এবং তার মন ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলো। সে বলতে লাগলো, আজ বড় বিপদের দিন। ৮৬
وَلَمَّا جَآءَتْ رُسُلُنَا لُوطًۭا سِىٓءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًۭا وَقَالَ هَـٰذَا يَوْمٌ عَصِيبٌۭ ٧٧
৭৮ ) (এ মেহমানদের আসার সাথে সাথেই) তার সম্প্রদায়ের লোকেরা নির্দ্বিধায় তাঁর ঘরের দিকে ছুটে আসতে লাগলো। আগে থেকেই তারা এমনি ধরনের কুকর্মে অভ্যস্ত ছিল। লূত তাদেরকে বললোঃ “ভাইয়েরা! এই যে, এখানে আমার মেয়েরা আছে, এরা তোমাদের জন্য পবিত্রতর। ৮৭ আল্লাহর ভয়-ডর কিছু করো এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে আমাকে লাঞ্ছিত করো না, তোমাদের মধ্যে কি একজনও ভালো লোক নেই?”
وَجَآءَهُۥ قَوْمُهُۥ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ وَمِن قَبْلُ كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ٱلسَّيِّـَٔاتِ ۚ قَالَ يَـٰقَوْمِ هَـٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِى هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ ۖ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ فِى ضَيْفِىٓ ۖ أَلَيْسَ مِنكُمْ رَجُلٌۭ رَّشِيدٌۭ ٧٨
৭৯ ) তারা জবাব দিলঃ “তুমি তো জানোই, তোমার মেয়েদের দিয়ে আমাদের কোন কাজ নেই ৮৮ এবং আমরা কি চাই তাও তুমি জানো।”
قَالُوا۟ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا لَنَا فِى بَنَاتِكَ مِنْ حَقٍّۢ وَإِنَّكَ لَتَعْلَمُ مَا نُرِيدُ ٧٩
৮০ ) লূত বললোঃ “হায়! যদি আমার এতটা শক্তি থাকতো যা দিয়ে আমি তোমাদের সোজা করে দিতে পারতাম অথবা কোন শক্তিশালী আশ্রয় থাকতো সেখানে আশ্রয় নিতে পারতাম।”
قَالَ لَوْ أَنَّ لِى بِكُمْ قُوَّةً أَوْ ءَاوِىٓ إِلَىٰ رُكْنٍۢ شَدِيدٍۢ ٨٠
৭৮.
এ থেকে বুঝা যায়, ফেরেশতার মানুষের আকৃতিতে আসার খবর শুনেই পরিবারের সবাই পেরেশান হয়ে পড়েছিল। এ খবর শুনে হযরত ইবরাহীমের স্ত্রীও ভীত হয়ে বাইরে বের হয়ে এসেছিলেন। তারপর যখন তিনি শুনলেন, তাদের গৃহের বা পরিবারের ওপর কোন বিপদ আসছে না। তখনই তার ধড়ে প্রাণ এলো এবং তিনি আনন্দিত হলেন।
৭৯.
ফেরেশতাদের হযরত ইবরাহীমের পরিবর্তে তাঁর স্ত্রী হযরত সারাহকে এ খবর শুনাবার কারণ এই ছিল যে, ইতিপূর্বে হযরত ইবরাহীম একটি পুত্র সন্তান লাভ করেছিলেন। তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী হযরত হাজেরার গর্ভে সাইয়্যিদিনা ইসমাইল আলাইহিস সালামের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত হযরত সারাহ ছিলেন সন্তানহীনা। তাই তাঁর মনটিই ছিল বেশী বিষন্ন। তাঁর মনের এ বিষন্নতা দূর করার জন্য তাঁকে শুধু ইসহাকের মতো মহান গৌরবান্বিত পুত্রের জন্মের সুসংবাদ দিয়ে ক্ষান্ত হননি বরং এ সঙ্গে এ সুসংবাদও দেন যে, এ পুত্রের পরে আসছে ইয়াকূবের মতো নাতি, যিনি হবেন বিপুল মর্যাদা সম্পন্ন পয়গম্বর।
৮০.
এর মানে এ নয় যে, হযরত সারাহ এ খবর শুনে যথার্থই খুশী হবার পরিবর্তে উল্টো একে দুর্ভাগ্য মনে করেছিলেন। বরং আসলে এগুলো এমন ধরনের শব্দ ও বাক্য, যা মেয়েরা সাধারণত কোন ব্যাপারে অবাক হয়ে গেলে বলে থাকে। এক্ষেত্রে এর শাব্দিক অর্থ এখানে লক্ষ্য হয় না বরং নিছক বিস্ময় প্রকাশই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।
৮১.
বাইবেল থেকে জানা যায়, হযরত ইবরাহীমের বয়স এ সময় ছিল ১০০ বছর এবং হযরত সারাহর বয়স ছিল ৯০ বছর।
৮২.
এর মানে হচ্ছে, যদিও প্রকৃতিগত নিয়ম অনুযায়ী এ বয়সে মানুষের সন্তান হয় না তবুও আল্লাহর কুদরতে এমনটি হওয়া কোন অসম্ভব ব্যাপারও নয়। আর এ সুসংবাদ যখন তোমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে তখন তোমার মতো একজন মু’মিনা মহিলার পক্ষে এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করার কোন কারণ নেই।
৮৩.
এহেন পরিস্থিতিতে “বাদানুবাদ” শব্দটি আল্লাহর সাথে হযরত ইবরাহীমের গভীর ভালোবাসা ও মান-অভিমানের সম্পর্কের কথা প্রকাশ করে। এ শব্দটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বিতর্ক জারি থাকার একটি দৃশ্যপট অংকন করে। লূতের সম্প্রদায়ের ওপর থেকে কোন প্রকারে আযাব সরিয়ে দেবার জন্য বান্দা বারবার জোর দিচ্ছে। আর জবাবে আল্লাহ বলছেন, এ সস্প্রদায়টির মধ্যে এখন ন্যায়, কল্যাণ ও সততার কোন অংশই নেই। এর অপরাধসমূহ এমনভাবে সীমা অতিক্রম করেছে যে, একে আর কোন প্রকার সুযোগ দেয়া যেতে পারে না। বান্দা তবুও আবার বলে যাচ্ছেঃ “হে পরওয়ারদিগার! যদি সামান্যতম সদগুণও এর মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে একে আরো একটু অবকাশ দিন, হয়তো এ সদগুণ কোন সুফল বয়ে আনবে।” বাইবেলে এ বাদানুবাদের কিছু বিস্তারিত বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে। কিন্তু কুরআনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তার তুলনায় আরো বেশী অর্থবহ ব্যাপকতার অধিকারী। তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য বাইবেল আদি পুস্তকের ১৮ অধ্যায়ের ২৩-৩২ বাক্য দেখুন)
৮৪.
বর্ণনার এ ধারাবাহিকতায় হযরত ইবরাহীমের এ ঘটনাটি বিশেষ করে লূতের সম্প্রদায়ের ঘটনার মুখবন্ধ হিসেবে বাহ্যত কিছুটা বেখাপ্পা মনে হয়। কিন্তু আসলে যে উদ্দেশ্যে অতীত ইতিহাসের এ ঘটনাবলী এখানে বর্ণনা করা হচ্ছে তার প্রেক্ষিতে এটা এখানে যথার্থই প্রযোজ্য হয়েছে। ঘটনাগুলোর এ পারস্পরিক যোগসূত্র অনুধাবন করার জন্য নিম্নোক্ত দু’টি বিষয় সামনে রাখতে হবে।

একঃ এখানে কুরাইশ গোত্রের লোকদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। হযরত ইবরাহীমের আওলাদ হওয়ার কারণে তারা আরব এলাকার সমগ্র জনবসতির কাছে পীরজাদা, আল্লাহর ঘর কা’বার খাদেম এবং ধর্মীয়, নৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের অধিকারী সেজে বসেছে। তারা প্রচণ্ড অহংকারে মত্ত। তারা মনে করে, তাদের ওপর আল্লাহর গজব কেমন করে আসতে পারে! তারা তো আল্লাহর সেই প্রিয় বান্দার আওলাদ। আল্লাহর দরবারে তাদের পক্ষে সুপারিশ করার জন্য তিনি রয়েছেন। তাদের এ মিথ্যা অহংকার চূর্ণ করার জন্য প্রথমে তাদের এ দৃশ্য দেখানো হলো যে, হযরত নূহের মতো মহান মর্যাদাশালী নবী নিজের চোখের সামনে নিজের কলিজার টুকরা ছেলেকে ডুবতে দেখছেন। তাকে বাঁচাবার জন্য আল্লাহর কাছে কাতর কন্ঠে প্রার্থনা করছেন। কিন্তু শুধু যে, তাঁর সুপারিশ তাঁর ছেলের কোন কাজে আসেনি তা নয় বরং উল্টো এ সুপারিশ করার কারণে তাঁকে ধমক খেতে হচ্ছে। তারপর এখন এ দ্বিতীয় দৃশ্য দেখানো হচ্ছে খোদ হযরত ইবরাহীমের। একদিকে তাঁর ওপর অজস্র অনুগ্রহ বর্ষণ করা হয়েছে এবং অত্যন্ত স্নেহার্দ্র ও কোমল ভঙ্গিতে তাঁর কথা আলোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু অন্যদিকে যখন সেই ইবরাহীম খলীলূল্লাহ আবার ইনসাফের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছেন তখন তাঁর তাগিদ ও চাপ প্রদান সত্ত্বেও আল্লাহ অপরাধী জাতির মোকাবিলায় তাঁর সুপারিশ রদ করে দিচ্ছেন।

দুইঃ এ ভাষণের উদ্দেশ্য কুরাইশদের মনের মধ্যে একথাও গেঁথে দেয়া যে, আল্লাহর যে কর্মফল বিধির ব্যাপারে একেবারে নির্ভীক ও নিশ্চিন্ত হয়ে তারা বসে ছিল, তা কিভাবে ইতিহাসের আবর্তনে ধারাবাহিকভাবেও যথারীতি প্রকাশ পেয়ে এসেছে এবং কেমন সব প্রকাশ্য লক্ষণ তাদের নিজেদের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে। একদিকে রয়েছেন হযরত ইবরাহীম। তিনি সত্য ও ন্যায়ের খাতিরে গৃহহারা হয়ে একটি অপরিচিত দেশে অবস্থান করছেন। আপাতদৃষ্টিতে তাঁর কোন শক্তি-সামর্থ্য নেই। কিন্তু তাঁর সৎকর্মের ফল আল্লাহ তাঁকে এমনভাবে দান করেন যে, তাঁর বুড়ী ও বন্ধ্যা স্ত্রীর গর্ভে ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্ম হয়। তারপর হযরত ইসহাকের ঔরসে ইয়াকূব আলাইহিস সালামেরও জন্ম হয়। তাঁর থেকে বনী ইসরাঈলের সুবিশাল বংশধারা এগিয়ে চলে। তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ডংকা শত শত বছর ধরে বাজতে থাকে ফিলিস্তিন ও সিরিয় ভূখণ্ডে, যেখানে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম একদিন গৃহহারা মুহাজির হিসেবে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। অন্যদিকে রয়েছে লূতের সম্প্রদায়। এ ভূখণ্ডের একটি অংশে তারা প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে এবং নিজেদের ব্যভিচারমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকছে। বহুদূর পর্যন্ত কোথাও তারা নিজেদের বদকর্মের জন্য কোন আযাবের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছে না। লূত আলাইহিস সালামের উপদেশকে তারা ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু যে তারিখে ইবরাহীমের বংশ থেকে একটি বিরাট সৌভাগ্যবান জাতির উত্থানের ফায়সালা করা হয় ঠিক সেই একই তারিখেই এ ব্যভিচারী জাতিটিকে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয় যে, আজ তাদের জনবসতির নাম-নিশানাও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।

৮৫.
সূরা আ’রাফের ১০ রুকূ’র টীকাগুলো দেখুন।
৮৬.
এ ঘটনার যে বিস্তারিত বিবরণ কুরআন মজীদে দেয়া হয়েছে তার বক্তব্যের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ফেরেশতারা সুন্দর ছেলেদের ছদ্মবেশে হযরত লূতের গৃহে এসেছিলেন। তারা যে ফেরেশতা একথা হযরত লূত জানতেন না। এ কারণে এ মেহমানদের আগমনে তিনি খুব বেশী মানসিক উৎকন্ঠা অনুভব করছিলেন এবং তাঁর মনও সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি নিজের সম্প্রদায়কে জানতেন। তারা কেমন ব্যভিচারী এবং কী পর্যায়ের নির্লজ্জ হয়ে গেছে তা তাঁর জানা ছিল।
৮৭.
হতে পারে হযরত লূত সমগ্র সম্প্রদায়ের মেয়েদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কারণ নবী তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য বাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে থাকেন। আর সম্প্রদায়ের মেয়েরা তাঁর দৃষ্টিতে নিজের মেয়ের মতো হয়ে থাকে। আবার এও হতে পারে যে, তাঁর ইঙ্গিত ছিল তাঁর নিজের মেয়েদের প্রতি। তবে ব্যাপার যাই হোক না কেন উভয় অবস্থাতেই একথা ধারণা করার কোন কারণই নেই যে, হযরত লূত তাদেরকে যিনা করার জন্য আহবান জানিয়েছিলেন। “এরা তোমাদের জন্য পবিত্রতর”--একথাই যাবতীয় ভুল অর্থের অবকাশ খতম করে দিয়েছে। হযরত লূতের বক্তব্যের পরিষ্কার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আল্লাহ যে জায়েয পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন সেই পদ্ধতিতেই নিজেদের যৌন কামনা পূর্ণ করো এবং এজন্য মেয়েদের অভাব নেই।
৮৮.
এ বাক্যটি তাদের মানসিক অবস্থার পূর্ণচিত্র এঁকে দেয়। বুঝা যায় লাম্পট্যের ক্ষেত্রে তারা কত নিচে নেমে গিয়েছিল। তারা স্বভাব-প্রকৃতি ও পবিত্রতার পথ পরিহার করে একটি পূতিগন্ধময় প্রকৃতি বিরোধী পথে চলতে শুরু করেছিল, ব্যাপার শুধুমাত্র এতটুকুই ছিল না বরং অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিল যে, এখন শুধুমাত্র এ একটি নোংরা পথের প্রতিই ছিল তাদের সমস্ত ঝোঁক-প্রবণতা, আকর্ষণ ও অনুরাগ। তাদের প্রবৃত্তি এখন শুধুমাত্র এ নোংরামিরই অনুসন্ধান করে ফিরছিল। প্রকৃতি ও পবিত্রতার পথ তো আমাদের জন্য তৈরীই হয়নি একথা বলতে তারা কোন লজ্জা অনুভব করতো না। এটা হচ্ছে নৈতিক অধঃপতন ও চারিত্রিক বিকৃতির চূড়ান্ত পর্যায়। এর চেয়ে বেশী নিম্নগামিতার কথা কল্পনাই করা যেতে পারে না। যে ব্যক্তি নিছক নফ্স ও প্রবৃত্তির দুর্বলতার কারণে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে যায়, এ সত্ত্বেও হালালকে কাংখিত এবং হারামকে পরিত্যাজ্য মনে করে, তার বিষয়টি খুবই হালকা। এমন ব্যক্তি কখনো সংশোধিত হয়ে যেতে পারে। আর সংশোধিত হয়ে না গেলেও তার সম্পর্কে বড় জোর এতটুকু বলা যেতে পারে যে, সে একজন বিকৃত চরিত্র সম্পন্ন ব্যক্তি। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তির সমস্ত আগ্রহ হারামের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় এবং সে মনে করতে থাকে হালাল তার জন্য তৈরীই হয়নি তখন তাকে মানুষের মধ্যেই গণ্য করা যেতে পারে না। সে আসলে একটি নোংরা কীট। মল-মূত্র ও দুর্গন্ধের মধ্যেই সে প্রতিপালিত হয় এবং পাক-পবিত্রতার সাথে তার প্রকৃতিগত কোন সম্পর্কই নেই। এ ধরনের কীট যদি কোন পরিচ্ছন্নতা প্রিয় মানুষের ঘরে জন্ম নেয় তাহলে প্রথম সুযোগেই সে ফিনাইল ঢেলে দিয়ে তার অস্তিত্ব থেকে নিজের গৃহকে মুক্ত করে নেয়। তাহলে আল্লাহ তাঁর যমীনে এ ধরনের নোংরা কীটদের সমাবেশকে কতদিন বরদাশত্ করতে পারতেন।
অনুবাদ: