حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَمْرُنَا وَفَارَ ٱلتَّنُّورُ قُلْنَا ٱحْمِلْ فِيهَا مِن كُلٍّۢ زَوْجَيْنِ ٱثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلَّا مَن سَبَقَ عَلَيْهِ ٱلْقَوْلُ وَمَنْ ءَامَنَ ۚ وَمَآ ءَامَنَ مَعَهُۥٓ إِلَّا قَلِيلٌۭ
অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে গেলো এবং চুলা উথলে উঠলো ৪২ তখন আমি বললাম, “সব ধরনের প্রাণীর এক এক জোড়া নৌকায় তুলে নাও। নিজের পরিবারবর্গকেও--- তবে তাদের ছাড়া যাদেরকে আগেই চিহ্নিত করা হয়েছে ৪৩ --- এতে তুলে নাও এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে এতে বসাও।” ৪৪ তবে সামান্য সংখ্যক লোকই নূহের সাথে ঈমান এনেছিল।
৪২
এ সম্পর্কে মুফাস্সিরগণের বিভিন্ন উক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্য থেকে যা বুঝা যায় সেটিকেই আমরা সঠিক মনে করি। কুরআনের বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, প্লাবনের সূচনা হয় একটি বিশেষ চুলা থেকে। তার তলা থেকে পানির স্রোত বের হয়ে আসে। তারপর একদিকে আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে এবং অন্যদিকে বিভিন্ন জায়গায় মাটি ফুঁড়ে পানির ফোয়ারা বেরিয়ে আসতে থাকে। এখানে কেবল চুলা থেকে পানি উথলে ওঠার কথা বলা হয়েছে এবং সামনের দিকে গিয়ে বৃষ্টির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু সূরা ‘কামারে’ এর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ
فَفَتَحْنَا أَبْوَابَ السَّمَاءِ بِمَاءٍ مُنْهَمِرٍ - وَفَجَّرْنَا الْأَرْضَ عُيُونًا فَالْتَقَى الْمَاءُ عَلَى أَمْرٍ قَدْ قُدِرَ
“আমি আকাশের দরজা খুলে দিলাম। এর ফলে অনবরত বৃষ্টি পড়তে লাগলো। মাটিতে ফাটল সৃষ্টি করলাম। ফলে চারদিকে পানির ফোয়ারা বের হতে লাগলো। আর যে কাজটি নির্ধারিত করা হয়েছিল এ দু’ধরনের পানি তা পূর্ণ করার জন্য পাওয়া গেলো।”
তাছাড়া “তান্নূর” (চুলা) শব্দটির ওপর আলিফ-লাম বসানোর মাধ্যমে একথা প্রকাশ করা হয় যে, একটি বিশেষ চুলাকে আল্লাহ এ কাজ শুরু করার জন্য নির্দিষ্ট করেছিলেন। ইশারা পাওয়ার সাথে সাথেই চুলাটির তলা ঠিক সময় মতো ফেটে পানি উথলে ওঠে। পরে এ চুলাটিই প্লাবনের চুলা হিসেবে পরিচিত হয়। সূরা মু’মিনূনের ২৭ আয়াতে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, এ চুলাটির কথা আগেই বলে দেয়া হয়েছিল।
৪৩
অর্থাৎ তোমার পরিবারের যেসব লোকের কথা আগেই বলে দেয়া হয়েছে যে, তারা কাফের এবং আল্লাহর রহমতের অধিকারী নয় তাদেরকে নৌকায় ওঠাবে না। সম্ভবত এরা ছিল দু’জন। একজন ছিল হযরত নূহের (আ) ছেলে। তার ডুবে যাওয়ার কথা সামনেই এসে যাচ্ছে। অন্যজন ছিল হযরত নূহের (আ) স্ত্রী। সূরা তাহরীমে এর আলোচনা এসেছে। সম্ভবত পরিবারের অন্যান্য লোকজনও এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কিন্তু কুরআনে তাদের নাম নেই।
৪৪
যেসব ঐতিহাসিক ও নৃ-বিজ্ঞানী সমগ্র মানবজাতির বংশধারা হযরত নূহ আলাইহিস সালামের তিন ছেলের সাথে সংযুক্ত করেন, এখান থেকে তাদের মতবাদ ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। আসলে ইসরাঈলী পৌরণিক বর্ণনাগুলো এ বিভ্রান্তির উৎস। সেখানে বলা হয়েছে যে, নূহের প্লাবনের হাত থেকে হযরত নূহ (আ) ও তাঁর তিন ছেলে এবং তাদের স্ত্রীরা ছাড়া আর কেউ রক্ষা পায়নি (দেখুন বাইবেল, আদি পুস্তক ৬: ১৮, ৭: ৭, ৯: ১ এবং ৯: ১৯)। কিন্তু কুরআনের বহু জায়গায় একথা স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে যে, হযরত নূহের পরিবার ছাড়া তাঁর কওমের বেশ কিছু সংখ্যক লোককেও, তাঁদের সংখ্যা সামান্য হলেও আল্লাহ প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাছাড়া কুরআন পরবর্তী মানব সম্প্রদায়কে শুধুমাত্র নূহের বংশধর নয় বরং তাঁর সাথে নৌকায় যেসব লোককে আল্লাহ রক্ষা করেছিলেন তাদের সবার বংশধর গণ্য করেছে। বলা হয়েছেঃ
ذُرِّيَّةَ مَنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ
“যাদেরকে আমি নৌকায় নূহের সাথে সওয়ার করিয়েছিলাম তাদের বংশধর।” (বনী ইসরাঈল ৩)
مِنْ ذُرِّيَّةِ آدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ
“আদমের বংশধরদের মধ্য থেকে এবং নূহের সাথে যাদেরকে আমি নৌকায় সওয়ার করিয়েছিলাম তাদের মধ্য থেকে।” (মারয়াম, ৫৮ আয়াত)