আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল কাউসার

৩ আয়াত

নামকরণ

إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ এ বাক্যের মধ্য থেকে ‘আল কাওসার’ শব্দটিকে এর নাম গণ্য করা হয়েছে।

নাযিলের সময়-কাল

ইবনে মারদুইয়া, হযরত আবুদল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) ও হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এটি মক্কী সূরা। কাল্বী ও মুকাতিল একে মক্কী বলেন। অধিকাংশ তাফসীরকারও এ মত পোষণ করেন। কিন্তু হযরত হাসান বসরী, ইকরামা, মুজাহিদ ও কাতাদাহ একে মাদানী বলেন। ইমাম সুয়ূতী তাঁর ইতকান গ্রন্থে এ বক্তব্যকেই সঠিক গণ্য করেছেন। ইমাম মুসলিমও তাঁর শারহে মুসলিম গ্রন্থে এটিকে প্রাধান্য দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে ইমাম আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে আবী শাইবা, ইবনুল মুনযির, ইবন মারদুইয়া ও বাইহাকী ইত্যাদি মুহাদ্দিসগণের হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসটি। এ হাদীসে বলা হয়েছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মধ্যে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। তারপর তিনি মুচকি হাসতে হাসতে তাঁর মাথা উঠালেন। কোন কোন রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, আপনি মুচকি হাসছেন কেন? আবার কোন কোন রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে তিনি নিজেই লোকদের বললেনঃ এখনি আমার ওপর একটি সূরা নাযিল হয়েছে। তারপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে তিনি সূরা আল কাওসারটি পড়লেন। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করেন, জানো কাওসার কি? সাহাবীরা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভালো জানেন। বললেনঃ সেটি একটি নহর। আমার রব আমাকে জান্নাতে সেটি দান করেছেন। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আসছে সামনের দিকের কাওসারের ব্যাখ্যা প্রসংগে।) এ হাদীসটির ভিত্তিতে এ সূরাটিকে মাদানী বলার কারণ হচ্ছে এই যে, হযরত আনাস (রা.) মক্কায় নয় বরং মদীনায় ছিলেন। এ সূরাটির মাদানী হবার প্রমাণ হচ্ছে এই যে, তিনি বলেছেন, তাঁর উপস্থিতিতেই এ সূরাটি নাযিল হয়।

কিন্তু প্রথমত এটা হযরত আনাস (রা.) থেকেই ইমাম আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি ও ইবনে জারীর রেওয়ায়াত করেছেন যে, জান্নাতের এ নহরটি (কাওসার), রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মি’রাজে দেখানো হয়েছিল। আর সবাই জানেন মি’রাজ মক্কায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল হিজরতের আগে। দ্বিতীয়ত মি’রাজে যেখানে মহান আল্লাহ তাঁর রসূলকে কেবলমাত্র এটি দান করারই খবর দেননি বরং এটিকে তাঁকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন সেখানে আবার তাঁকে এর সুসংবাদ দেবার জন্য মদীনা তাইয়েবায় সূরা কাওসার নাযিল করার কোন প্রয়োজন থাকতে পারে না। তৃতীয়ত যদি হযরত আনাসের উপরোল্লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে সাহাবীগণের একটি সমাবেশে সূরা কাওসার নাযিল হবার খবর দিয়ে থাকেন এবং তার অর্থ এ হয়ে থাকে যে, প্রথমবার এ সূরাটি নাযিল হলো, তাহলে হযরত আয়েশা (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনেব যুবায়েরের মতো সতর্ক সাহাবীগণের পক্ষে কিভাবে এ সূরাটিকে মক্কী গণ্য করা সম্ভব। অন্যদিকে মুফাসসিরগণের অধিকাংশই বা কেমন করে একে মক্কী বলেন? এ ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে হযরত আনাসের রেওয়ায়াতের মধ্যে একটি ফাঁক রয়েছে বলে পরিস্কার মনে হয়। যে মজলিসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথা বলেছিলেন সেখানে আগে থেকে কি কথাবার্তা চলছিল তার কোন বিস্তারিত বিবরণ তাতে নেই। সম্ভবত সে সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন ব্যাপারে কিছু বলছিলেন। এমন সময় অহীর মাধ্যমে তাঁকে জানানো হলো, সূরা কাওসারে সংশ্লিষ্ট ব্যাপারটির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। আর তখন তিনি একথাটি এভাবে বলেছেনঃ আমার প্রতি এ সূরাটি নাযিল হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে। তাই মুফাসসিরগণ কোন কোন আয়াত সম্পর্কে বলেছেন, সেগুলো দু’বার নাযিল হয়েছে। এ দ্বিতীয়বার নাযিল হবার অর্থ হচ্ছে, আয়াত তো আগেই নাযিল হয়েছে কিন্তু দ্বিতীয়বার কোন সময় অহীর মাধ্যমে নবীর (সা.) দৃষ্টি এ আয়াতের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়ে থাকবে। এ ধরনের রেওয়ায়াতে কোন আয়াতের নাযিল হবার কথা উল্লেখ থাকাটা তার মক্কী বা মাদানী হবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট নয়।

হযরত আনাসের এ রেওয়ায়াতটি যদি সন্দেহ সৃষ্টি করার কারণ না হয় তাহলে সুরা কাওসারের সমগ্র বক্তব্যই তার মক্কা মু’আয্যমায় নাযিল হবার সাক্ষ্য পেশ করে। এমন এক সময় নাযিল হওয়ার সাক্ষ্য পেশ করে যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত কঠিন হতাশা ব্যঞ্জক অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন।

ঐতিহাসিক পটভূমি

ইতিপূর্বে সূরা দুহা ও সূরা আলাম নাশরাহ-এ দেখা গেছে, নবুওয়াতের প্রাথমিক যুগে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সবচেয়ে কঠিন সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন, সমগ্র জাতি তাঁর সাথে শত্রুতা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল, বাধার বিরাট পাহাড়গুলো তাঁর পথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল, চতুর্দিকে প্রবল বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি ও তাঁর মুষ্টিমেয় কয়েকজন সাথী বহুদূর পর্যন্ত কোথাও সাফল্যের কোন আলামত দেখতে পাচ্ছিলেন না। তখন তাঁকে সান্ত্বনা দেবার ও তাঁর মনে সাহস সঞ্চারের জন্য মহান আল্লাহ বহু আয়াত নাযিল করেন এর মধ্যে সূরা দুহায় তিনি বলেনঃ وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَكَ مِنَ الْأُولَى - وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى

“আর অবশ্যি তোমার জন্য পরবর্তী যুগ (অর্থাৎ প্রত্যেক যুগের পরের যুগ) পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ভালো এবং শীঘ্রই তোমার রব তোমাকে এমনসব কিছু দেবেন যাতে তুমি খুশী হয়ে যাবে।”

অন্যদিকে আলাম নাশরাহে বলেনঃ وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ “আর আমি তোমার আওয়াজ বুলন্দ করে দিয়েছি।” অর্থাৎ শত্রু সারা দেশে তোমার দুর্নাম ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে কিন্তু তাদের ইহার বিরুদ্ধে আমি তোমার নাম উজ্জ্বল করার এবং তোমাকে সুখ্যাতি দান করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এই সাথে আরো বলেনঃ فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا - إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا “কাজেই, প্রকৃতপক্ষে সংকীর্ণতার সাথে প্রশস্ততাও আছে। নিশ্চিতভাবেই সংকীর্ণতার সাথে প্রশস্ততাও আছে।” অর্থাৎ বর্তমানে কঠিন অবস্থা দেখে পেরেশান হয়ো না। শীঘ্রই এ দুঃখের দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। সাফল্যের যুগ এই তো শুরু হয়ে যাচ্ছে।

এমনি এক অবস্থা ও পরিস্থিতিতে সূরা কাওসার নাযিল করে আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা দান করেন এবং তাঁর শত্রুদেরকে ধ্বংস করে দেবার ভবিষ্যদ্বাণীও শুনিয়ে দেন। কুরাইশ বংশীয় কাফেররা বলতো, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমগ্র জাতি থেকে বিছিন্ন হয়ে গেছে। তাঁর অবস্থা হয়ে গেছে একজন সহায় ও বান্ধবহীন ব্যক্তির মতো । ইকরামা (রা.) বর্ণনা করেছেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন নবীর পদে অধিষ্ঠিত করা হয় এবং তিনি কুরাইশদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন তখন কুরাইশরা বলতে থাকে بتر محمد منا অর্থাৎ “মুহাম্মাদ নিজের জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যেমন কোন গাছের শিকড় কেটে দেয়া হলে তার অবস্থা হয়। কিছুদিনের মধ্যে সেটি শুকিয়ে মাটির সাথে মিশে যায়।” (ইবনে জারীর) মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বলেন, মক্কার সরদার আস ইবেন ওয়ায়েল সাহমির সামনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা উঠলেই সে বলতোঃ “সে তো একজন আবতার অর্থাৎ শিকড় কাটা। কোন ছেলে সন্তান নেই। মরে গেলে তার নাম নেবার মতো কেউ থাকবে না।” শিমার ইবনে আতীয়্যার বর্ণনা মতে উকবা ইবনে আবু মু’আইতও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে এমনি ধরনের কথা বলতো। (ইবনে জারীর) ইবনে আব্বাসের (রা.) বর্ণনা মতে, একবার কাব ইবনে আশরাফ (মদীনার ইহুদি সরদার) মক্কায় আসে। কুরাইশ সরদাররা তাকে বলেঃ

أَلاَ تَرَى إِلَى هَذَا الصَّبِيُّ الْمُنْبتِرْ مِنْ قَوْمِهِ يَزْعُمُ أَنَّهُ خَيْرٌ مِنَّا وَنَحْنُ أَهْلُ الْحَجِيجِ وَاَهْلُ السَّدَانَةِ واَهْلُ السَّقَايَةِ-

“এ ছেলেটির ব্যাপার-স্যাপার দেখো। সে তাঁর জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সে মনে করে, সে আমাদের থেকে ভালো। অথচ আমরা হজ্জের ব্যবস্থাপনা করি, হাজীদের সেবা করি ও তাদের পানি পান করাই।” (বায্যার)

এ ঘটনাটি সম্পর্কে ইকরামা বলেন, কুরাইশরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে الصنبور النبتر من قومة বলে অভিহিত করতো। অর্থাৎ “তিনি এক অসহায়, বন্ধু-বান্ধবহীন, দুর্বল ও নিঃসন্তান ব্যক্তি এবং নিজের জাতি থেকেও তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।” (ইবনে জারীর) ইবনে সা’দ ও ইবনে আসাকিরের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে বড় ছেলের নাম কাসেম (রা.), তার ছোট ছিলেন হযরত যয়নব (রা.)। তার ছোট ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ (রা.)। তারপর জন্ম নেয় যথাক্রমে তিন কন্যা; হযরত উম্মে কুলসুম (রা.), হযরত ফাতেমা (রা.) ও হযরত রুকাইয়া (রা.)। এদের মধ্যে সর্ব প্রথম মারা যান হযরত কাসেম। তারপর মারা যান হযরত আবদুল্লাহ। এ অবস্থা দেখে আস ইবনে ওয়ায়েল বলে, তাঁর বংশই খতম হয়ে গেছে। এখন সে আবতার (অর্থাৎ তাঁর শিকড় কেটে গেছে)। কোন কোন রেওয়ায়াতে আরো একটু বাড়িয়ে আসের এই বক্তব্য এসেছেঃ

اِنَّ مُحَمَّدًا اَبْتَرُ لَا اِبْنَ لَهُ يَقُوْمَ مَقَامَهُ بَعْدَهُ فَاِذَا مَاتَ اِنْقَطَعَ ذِكْرُهُ وَاسْتَرَحْتُمْ مِنْهُ –

“মুহাম্মাদ একজন শিকড় কাটা। তাঁর কোন ছেলে নেই, যে তাঁর স্থালাভিষিক্ত হতে পারে। সে মরে গেলে তাঁর নাম মিটে যাবে। আর তখন তোমরা তাঁর হাত থেকে নিস্তার পাবে।”

আবদ ইবনে হুমাইদ ইবনে আব্বাসের যে রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন, তা থেকে জানা যায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুত্র আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর আবু জেহেলও এই ধরনের কথা বলেছিল। ইবন আবী হাতেম শিমার ইবনে আতীয়াহ থেকে রেওয়ায়াত করেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শোকে আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে উকবা ইবেন আবী মু’আইতও এই ধরনের হীন মনোবৃত্তির পরিচয় দেয়। আতা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বিতীয় পুত্রের ইন্তিকালের পর তাঁর চাচা আবু লাহাব (তার ঘর ছিল রসূলের ঘরের সাথে লাগোয়া) দৌড়ে মুশরিকদের কাছে চলে যায় এবং তাদের এই “সুখবর” দেয়ঃ بَتِرَ مُحَمَّدٌ اللَّيْلَةَ অর্থাৎ রাতে মুহাম্মাদ সন্তানহারা হয়ে গেছে অথবা তাঁর শিকড় কেটে গেছে।”

এ ধরনের চরম হতাশাব্যাঞ্জক পরিস্থিতিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর সূরা কাওসার নাযিল করা হয়। তিনি কেবল আল্লাহর বন্দেগী করতেন এবং আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করাকে প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ কারণে কুরাইশরা ছিল তাঁর প্রতি বিরূপ। এজন্যই নবুওয়াত লাভের আগে সমগ্র জাতির মধ্যে তাঁর যে মর্যাদা ছিল নবুওয়াত লাভের পর তা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। তাঁকে এক রকম জ্ঞাতি-গোত্র থেকে বিছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। তাঁর সংগী-সাথী ছিলেন মাত্র মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক। তারাও ছিলেন বন্ধু-বান্ধব ও সহায়-সম্বলহীন। তাঁরাও জুলুম-নিপীড়ন সহ্য করে চলছিলেন। এই সাথে তাঁর একের পর এক সন্তানের মৃত্যুতে তাঁর ওপর যেন দুঃখ ও শোকের পাহাড় ভেঙে পড়েছিল। এ সময় আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী ও প্রতিবেশীদের পক্ষ থেকে যিনি শুধু আপন লোকদের সাথেই নয়, অপরিচিত ও অনাত্মীয়দের সাথেও সবসময় পরম প্রীতিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল ব্যবহার করছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের বিভিন্ন অপ্রীতিকর কথা ও আচরণ তাঁর মন ভেঙে দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ অবস্থায় এ ছোট্ট সূরাটির একটি বাক্যে আল্লাহ তাঁকে এমন একটি সুখবর দিয়েছেন যার চাইতে বড় সুখবর দুনিয়ার কোন মানুষকে কোন দিন দেয়া হয়নি। এই সংগে তাঁকে এ সিদ্ধান্তও শুনিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তাঁর বিরোধিতাকারীদেরই শিকড় কেটে যাবে।

অনুবাদ: