আল মুমিন

৮৫ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
আয়াত
-
৮১ ) আল্লাহ‌ তোমাদেরকে তাঁর এসব নির্দশন দেখাচ্ছেন। তোমরা তাঁর কোন্‌ কোন্‌ নিদর্শন অস্বীকার করবে? ১১০
وَيُرِيكُمْ ءَايَٰتِهِۦ فَأَىَّ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ تُنكِرُونَ ٨١
৮২ ) সুতরাং এরা কি ১১১ এ পৃথিবীতে বিচরণ করেনি, তাহলে এরা এদের পূর্ববর্তী লোকদের পরিণতি দেখতে পেত? তারা সংখ্যায় এদের চেয়ে বেশী ছিল, এদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ছিল এবং পৃথিবীর বুকে এদের চেয়ে অধিক জাঁকালো নিদর্শন রেখে গেছে। তারা যা অর্জন করেছিল, তা শেষ পর্যন্ত তাদের কাজে লাগেনি।
أَفَلَمْ يَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَيَنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ كَانُوٓا۟ أَكْثَرَ مِنْهُمْ وَأَشَدَّ قُوَّةً وَءَاثَارًا فِى ٱلْأَرْضِ فَمَآ أَغْنَىٰ عَنْهُم مَّا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ ٨٢
৮৩ ) তাদের রসূল যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনাদি নিয়ে তাদের কাছে এসেছিলেন তখন তারা নিজের কাছে বিদ্যমান জ্ঞান নিয়েই মগ্ন ছিল ১১২ এবং যে জিনিস নিয়ে তারা বিদ্রূপ করতো সে জিনিসের আবর্তেই তারা পড়ে গিয়েছিলো।
فَلَمَّا جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَٰتِ فَرِحُوا۟ بِمَا عِندَهُم مِّنَ ٱلْعِلْمِ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا۟ بِهِۦ يَسْتَهْزِءُونَ ٨٣
৮৪ ) তারা যখন আমার আযাব দেখতে পেল তখন চিৎকার করে বলে উঠলো, আমরা এক ও লা-শরীক আল্লাহকে মেনে নিলাম। আর যেসব উপাস্যদের আমরা শরীক করতাম তাদের অস্বীকার করলাম। ১১৩
فَلَمَّا رَأَوْا۟ بَأْسَنَا قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَحْدَهُۥ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِهِۦ مُشْرِكِينَ ٨٤
৮৫ ) কিন্তু আমার আযাব দেখার পর তাদের ঈমান গ্রহণ কোন উপকারে আসার নয়। কারণ, এটাই আল্লাহর সুনির্ধারিত বিধান যা সবসময় তাঁর বান্দাদের মধ্যে চালু ছিল। সেসময় কাফেররা ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেল। সে সময় কাফেররা ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেল।
فَلَمْ يَكُ يَنفَعُهُمْ إِيمَٰنُهُمْ لَمَّا رَأَوْا۟ بَأْسَنَا سُنَّتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِى قَدْ خَلَتْ فِى عِبَادِهِۦ وَخَسِرَ هُنَالِكَ ٱلْكَٰفِرُونَ ٨٥
১১০.
অর্থাৎ তোমরা যদি শুধু তামাশা দেখা ও মনের আনন্দের জন্য মু’জিযার দাবী করে থাকো অর্থাৎ এতোটুকু নিশ্চিত হওয়া তোমাদের প্রয়োজন হয়ে থাকে যে, মুহাম্মাদ ﷺ যেসব কথা মানার জন্য তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছেন তা সত্য কিনা তাহলে আল্লাহর যেসব নিদর্শনাবলী তোমরা সর্বদা অবলোকন করছো এবং তোমাদের অভিজ্ঞতায় সঞ্চিত হচ্ছে সেগুলোই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। প্রকৃত সত্য বুঝার জন্য এসব নিদর্শনের বর্তমানে আর কোন নিদর্শনের কি প্রয়োজন থাকতে পারে। এটা মু’জিযা দাবী করার প্রেক্ষিতে তৃতীয় জবাব। কুরআন মজীদের কতিপয় স্থানে এ জবাবটিও ইতিপূর্বে দেয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ভালভাবে এর ব্যাখ্যা করেছি। (দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল আন’আম, টীকা ২৬ ও ২৭ ; ইউনুস, টীকা ১০৫ ; আর রা’দ, টীকা ১৫ থেকে ২০ ; আশ শু’আরা, টীকা ৩, ৪ ও ৫)।

পৃথিবীতে যেসব জন্তু মানুষের নিয়োজিত আছে তার মধ্যে বিশেষ করে আছে গরু, মোষ, ভেড়া, বকরী, উট ও ঘোড়া। এসব জন্তুর সৃষ্টিকর্তা এমন নকশা অনুসারে এদের সৃষ্টি করেছেন যে, এসব অতি সহজেই মানুষের পোষ মানা সেবকে পরিণত হয়ে যায় এবং তাদের সাহায্যে মানুষের অসংখ্য প্রয়োজন পূরণ হয়। মানুষ এসবের ওপর আরোহণ করে এসবকে ভার বহন করার কাজে লাগায়, ক্ষেত, কৃষি ও ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করে, এর দুধ দোহন করে পান করে আবার তা দিয়ে লাচ্ছি, মাখন, ঘি, দধি, পনির এবং নানা রকমের মিষ্টি তৈরী করে। এর গোশত খায় এবং চর্বি ব্যবহার করে। এর পশম, লোম, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, হাড্ডি, রক্ত, গোবর তথা প্রতিটি জিনিস তার কাজে লাগে। এটা কি সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, মানুষের সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে তাকে সৃষ্টি করার পূর্বেই তার এ অসংখ্য প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি বিশেষ পরিকল্পনাধীনে এ জন্তুটিকে সৃষ্টি করেছেন যাতে সে তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে?

তাছাড়া পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ পানি এবং এক-চতুর্থাংশ স্থলভাগ। স্থলভাগেরও বহু সংখ্যক ছোড় বড় অঞ্চলের মধ্যে জলভাগ অবস্থিত। পৃথিবী গ্রহের এসব স্থলভাগে মানব বসতির বিস্তার এবং তাদের মাঝে পর্যটন ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়া আদৌ সম্ভব হতো না যদি পানি, সমুদ্র ও বাতাসকে এমন নিয়ম-বিধির অধীন না করা হতো যার কারণে নৌ-পরিবহন করা সম্ভব হয়েছে এবং এমন সব উপায়-উপকরণ সৃষ্টি করা না হতো যা ব্যবহার করে মানুষ জাহাজ নির্মাণে সক্ষম হয়েছে। এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, এক সর্বশক্তিমান, দয়ালু ও মহাজ্ঞানী প্রভু আছেন যিনি মানুষ, পৃথিবী, পানি, সমুদ্র, বাতাস এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত জিনিসকে তাঁর নিজের বিশেষ পরিকল্পনা অনুসারে সৃষ্টি করেছেন? এমনকি মানুষ যদি শুধু নৌপরিবহনের দৃষ্টিকোণ থেকেই বিচার করে তাহলে নক্ষত্রসমূহের অবস্থান এবং গ্রহসমূহের নিয়মিত আবর্তন থেকে এক্ষেত্রে যে সাহায্য পাওয়া যায় তা প্রমাণ করে যে, শুধু পৃথিবী নয়, মহানুভব সে প্রভু আসমানসমূহেরও স্রষ্টা। তাছাড়া এ বিষয়টিও একটু ভেবে দেখুন, যে মহাজ্ঞানী আল্লাহ‌ তাঁর এ অসংখ্য জিনিস মানুষের কর্তৃত্বাধীনে দিয়ে রেখেছেন এবং তার কল্যাণের জন্য এসব সাজ-সরঞ্জাম সরবরাহ করেছেন, জ্ঞান ও চেতনা সুস্থ থাকলে আপনি কি তাঁর সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করতে পারেন যে, সে আল্লাহ‌ (নাউযুবিল্লাহ) এমন নির্বোধ যে, তিনি মানুষকে এসব দিয়েছেন কিন্তু কখনো তার হিসেব নেবেন না?

১১১.
এটা সমাপ্তিসূচক বাক্য। এ অংশ পাঠ করার সময় ৪, ৫ ও ২১ আয়াত ক’টি আরেকবার দেখে নিন।
১১২.
অর্থাৎ নিজেদের দর্শন ও বিজ্ঞান, নিজেদের পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞান, নেতাদের মনগড়া ধর্মীয় কিসসা কাহিনী (Mythology) এবং ধর্মীয় বিধি-বিধানকেই (Theology) তারা প্রকৃত জ্ঞান মনে করেছে এবং আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের আনীত জ্ঞানকে হীন ও নগণ্য মনে করে সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করেনি।
১১৩.
আল্লাহর আযাব কিংবা মৃত্যুর মুখোমুখি না হওয়া পর্যন্তই কেবল তাওবা ও ঈমান উপকারে আসে। আযাব এসে পড়া বা মৃত্যুর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর ঈমান আনা কিংবা তাওবা করা আল্লাহ‌ তা’আলার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
অনুবাদ: